পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে রাবির সুইমিং পুল

প্রতিনিধি, রাবি: অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সুইমিং পুল। করোনার কারণে দীর্ঘ ছুটির পর থেকে আর চালু না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা প্রবেশ করতে পারছে না। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, দ্রুত খুলে দেয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে একটি সুইমিং পুল রয়েছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেশিয়ামের পাশে অবস্থিত। এটি শিক্ষার্থীদের সাঁতার কাটার জন্য সব সময় উম্মুক্ত থাকলেও করোনা আসার পর থেকে বন্ধ আছে। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তঃহল শিক্ষার্থীর সাঁতার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হতো। প্রায় তিন বছর ধরে সুইমিং পুলটি ব্যবহার না হওয়ায় তা জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। এটির সঠিক পরিচর্যা করতেও দেখা যায়নি প্রশাসনকে। করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ার পরেও সুইমিং পুলটি কেন ব্যবহার করা হচ্ছে না, এ নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনে প্রশ্ন। তবে কর্মকর্তারা বলছেন, করোনার জন্য এতদিন সুইমিংপুলে সাঁতার কাটা বন্ধ ছিল। এখন থেকে আবার চালু হবে।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিংপুলে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সুইমিং পুলটি পানিশূন্য করে রাখা হয়েছে। অনেকটা জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে সুইমিং পুলটি। টাইলস খসে পড়তে শুরু করছে বিভিন্ন স্থানে। নষ্ট হতে শুরু করেছে রং।

এদিকে দর্শকদের বসার স্থানের অবস্থাও বেহাল। গ্যালারির ছাউনি ও চেয়ারে ধরেছে মরিচা ও উইপোকা। কিছু কিছু ছাউনি একেবারেই মাথায় খসে পড়ার উপক্রম। জিমনেশিয়াম ও সুইমিংপুলের আশপাশে দায়িত্বরত রাবির কয়েকজন কর্মচারী বলছেন, সুইমিংপুলের আশপাশের ঝোপঝাড়ে রয়েছে বিষাক্ত সাপের আবাস। মূলত দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকা ও সুইমিং পুলটি রক্ষণাবেক্ষণ না করার কারণেই ঝোপঝাড়ের সৃষ্টি হয়েছে। আর তাতে সাপেরা তাদের আস্তানা গেড়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাকিস্তান আমলে নির্মিত সুইমিং পুলটি এখনও পায়নি আধুনিকতার ছোঁয়া। ফিল্টার মেশিনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় সাবমারসিবল পাম্প ব্যবহার করে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এভাবে পানি সরবরাহ করাতে ২০ দিন পরপর পরিবর্তন করতে হয়। আর পানিতে আয়রন বেশি থাকায় কিছুদিনের মধ্যেই পানি সুইমিংপুলের অনুপোযোগী হয়ে পড়ে। ফলে পানি সরবরাহ করতে চিরচেনা জটিলতার চক্র থেকে বেরোতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।

সেখানকার কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রতিযোগিতার পাশাপাশি বয়সভিত্তিক সাঁতার প্রতিযোগিতা আয়োজন করেন তারা। থাকে আন্তঃহল ও আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় সাঁতার প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা। বয়সভিত্তিক সাঁতার প্রশিক্ষণ কোর্স করানো হয়। ১ মাসের কোর্সের জন্য ১০০ টাকা ফরম মূল্যে আবেদন করতে হয়। ৭ থেকে ১০ বয়সী শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী বাচ্চাদের কোর্স ফি ১ হাজার টাকা। আর বহিরাগত বাচ্চাদের কোর্স ফি ১ হাজার ৫০০ টাকা। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য কোর্স ফি ৩০০ টাকা। ইতোমধ্যে অনেকেই কোর্স করার জন্য আবেদন করেছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক  মো. আছাদুজ্জামান শেয়ার বিজকে বলেন, করোনার কারণে এতদিন সুইমিং পুল বন্ধ ছিল, এখন তা আবার চালু করা হবে। পাকিস্তান আমলে কোটি টাকা ব্যয় করে নির্মাণ করা হয়েছিল এটি। সুইমিং পুলটি অনেক পুরোনো হওয়ায় অনেক সমস্যায় জর্জরিত সেখানে। এখানে ফিল্টার মেশিন ও পানি নিষ্কাশনেরও ভালো ব্যবস্থা নেই। সুইমিংপুলের আশপাশের টাইলসও খসে পড়ছে। আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি। সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া অঙ্গনগুলোতে বড় অংকের অনুদান রাখলে দেশের শিক্ষার্থীরা অনেক উপকৃত হবে বলে তিনি জানান।

আধুনিকায়নের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের উপাচার্য স্যার খেলাধুলার বিষয় নিয়ে খুবই আন্তরিক। সুইমিংপুলের আধুনিকায়ন করার জন্য ইউজিসির কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী আজ জাতীয় টিমে খেলছে তার অন্যতম উদাহরণ বাংলাদেশের দ্রæততম মানবী শিরিন শারমিন ও ফুটবলার নার্গিস আক্তার। সরকার যদি ক্রীড়া অঙ্গনে সব সুযোগ-সুবিধা দিয়ে সহযোগিতা করে তাহলে আমাদের ছেলেমেয়েরা দেশের জন্য সমৃদ্ধি বয়ে আনবে বলে তিনি আশাবাদী।