শেয়ার বিজ ডেস্ক: মার্সিডিজ বেঞ্জের অসংখ্য গাড়িতে ব্রেকের সমস্যা দেখা দেয়ায় বিশ্বব্যাপী ৯ লাখ ৯৩ হাজার গাড়ি ক্রেতাদের কাছ থেকে ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে। মার্সিডিজ বেঞ্জ যে ১০ লাখ গাড়ি ফিরিয়ে নিচ্ছে, তার মধ্যে প্রায় ৭০ হাজার গাড়ি জার্মানির। খবর: ডয়েচে ভেলে।
জার্মানির ফেডারেল ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (কেবিএ) জানায়, ব্রেকিং সিস্টেমের ত্রুটির কারণে নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। এসব বিষয় বিবেচনা করে যেসব গাড়িতে এ ধরনের ত্রুটি রয়েছে, সেগুলো সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
জার্মানির গাড়ি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানটি একটি বিবৃতিতে জানায়, ২০০৪ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ গাড়ির ব্রেকে সমস্যা রয়েছে বলে অভিযোগ এসেছে। মার্সিডিজ বেঞ্জের এসইউভি সিরিজের এমএল, জিএল ও আর-ক্লাস লাক্সারি মিনিভ্যানে এ ধরনের সমস্যার কথা জানানো হয়। ব্রেক বুস্টারের ক্ষয়ের ফলে অনেক সময় ব্রেক প্যাডেল ও ব্রেকিং সিস্টেমের মধ্যে সংযোগ বিঘিœত হওয়ার অভিযোগের পরিপ্র্রেক্ষিতে লাখো গাড়ি মার্সিডিজ প্রতিষ্ঠান ফিরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানায়, খ্যাতনামা গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানটি। তারা আরও জানায়, ক্রেতাদের সুরক্ষার কথা ভেবে এই গাড়িগুলো ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে। কী কারণে এই সমস্যা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে মার্সিডিজ। সংশ্লিষ্ট মডেলের গাড়িগুলো যেসব ক্রেতা কিনেছেন, তারা কোনো সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রত্যাহার প্রক্রিয়ায় সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত গাড়িগুলো পরীক্ষায় কী ফল আসে, সেদিকে তাকিয়ে রয়েছি আমরা। তারপর প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ যোগ করা হবে। এই পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত মার্সিডিজের সংশ্লিষ্ট মডেলগুলো যেন না চালান ক্রেতারা।
গত বছরও অসংখ্য গাড়ি বাজার থেকে ফিরিয়ে নেয় প্রতিষ্ঠানটি। তখন যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে ১৩ লাখ গাড়ি সরিয়ে নেয়া হয়। গাড়িতে সমস্যা দেখা দেয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেয় প্রতিষ্ঠানটি। গাড়ির ত্রুটি সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হাইওয়ে ট্রাফিক সেফটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনএইচটিএসএ) জানায়, জরুরি যোগাযোগ-বিষয়ক মডিউল সফটওয়্যারে সমস্যা দেখা দিয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে এই সমস্যার সমাধান সহজ। তবে কিছু ক্ষেত্রে সরাসরি গাড়ির ত্রুটি সারাতে হবে। ২০১৬ সাল থেকে মার্সিডিজের অনেক গাড়িতে এমন সমস্যা দেখা দেয়। ১০ লাখের বেশি গাড়িতে এসব সমস্যা দেখা দেয়। ই-কল ইমার্জেন্সি কল সিস্টেমে কমিউনিকেশন মডিউলে সমস্যা সমাধানের জন্য এসব গাড়ি তুলে নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। যেসব গাড়িতে ত্রæটি ধরা পড়েছে, তা সারানো না হলে এগুলো ইমার্জেন্সি সার্ভিসের সময় ভুল নির্দেশনা দেবে। এতে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এক তদন্ত অনুযায়ী, এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটেছে ইউরোপে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে এখনও এ ধরনের কোনো দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
এর আগের বছর ২০২০ সালে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে সাত লাখ ৪৪ হাজার মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষণা দেয় জার্মানির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ডেইমলার। ২০০১ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে ওই গাড়িগুলো বাজারে ছাড়া হয়। গাড়িগুলোর সানরুফ গøাস প্যানেল ফ্রেম থেকে সরে যাওয়া এবং তা থেকে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় এ সিদ্ধান্ত নেয় প্রতিষ্ঠানটি। একই বছর ২০২০ সালে চীন থেকে সাড়ে ছয় লাখের মতো গাড়ি সরিয়ে নেয় মার্সিডিজ বেঞ্জ। তেল লিক হওয়ার কারণে ওই গাড়িগুলো সরিয়ে নেয়া হয়। মার্সিডিজের
সি-ক্লাস, ই-ক্লাস, ভি-ক্লাস, জিএলকে-ক্লাস, সিএলএস-ক্লাস, সিএলসি-ক্লাস, জিএলসি এসইউভি ও ভিএস২০ ভিটো মডেলে সে সময় সমস্যা ধরা পড়ে।