সাইফুজ্জামান সুমন: টানা দুই দিন পতনের পর বাজেটের আগের দিন ঘুরে দাঁড়াল পুঁজিবাজার। টানা সাত কর্মদিবসে সূচক ৩০৮ পয়েন্ট বাড়ার পর গত দুই দিনে কমেছে ২৮ পয়েন্ট। সপ্তাহের চতুর্থ কর্মদিবস গতকাল বুধবার উত্থানের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। সূচকে যোগ করেছে সাড়ে ১৫ পয়েন্ট।
আজ জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ করা হবে। এজন্য বিনিয়োগকারীদের চোখ এখন বাজেটের দিকে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে করহার কমানোসহ আটটি সুপারিশ করে অর্থমন্ত্রীকে চিঠি দেয়া হয়েছে। ১৩ এপ্রিল বিএসইসি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ‘২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য পুঁজিবাজারের উন্নয়নে’ আটটি সুপারিশ করে এই চিঠি দেন। সুপারিশগুলোর সঙ্গে সহমত প্রকাশ করে তা বিবেচনার জন্য অর্থমন্ত্রী ২৮ এপ্রিল এনবিআর চেয়ারম্যানকে অনুরোধ জানান। সুপারিশে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালোটাকা বিনিয়োগের শর্ত আরও শিথিল করার সুপারিশ করা হয়। বলা হয়, অপ্রদর্শিত আয় ৫ শতাংশ কর দিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য আরও ৫ বছর সুযোগ দেয়া হলে তা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখবে। করমুক্ত সীমা এক লাখ টাকা করার সুপারিশ করে বলা হয়, আয়কর আইনে তালিকাভুক্ত কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও ইউনিট ফান্ড থেকে অর্জিত আয় ৫০ হাজার এবং ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত করমুক্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই করমুক্ত সীমা বাড়িয়ে এক লাখ টাকা করার অনুরোধ করা হয়। সুপারিশে মার্চেন্ট ব্যাংকের করপোরেট করহার সাড়ে ৩৭ শতাংশ কমিয়ে ২৭ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি উৎসাহিত করতে এসএমআই কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে প্রথম ৩ বছর শূন্য, পরবর্তী বছর ১৫ শতাংশ রেয়াতি হারে কর নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়। এছাড়া বিদেশি ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারীদের করহার ২০ ও ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ ও ২০ শতাংশ করার সুপারিশ করা হয়।
গত দুই দিনে বিক্রয় প্রবণতা থাকলেও গতকাল ক্রয় প্রবণতায় ফিরেছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে নেতিবাচক প্রবণতা কাটিয়ে ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে দেশের উভয় পুঁজিবাজার।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, আগের দুই দিন পুঁজিবাজার বিমার দখলে থাকলেও গতকাল বস্ত্র ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটধারীদের হাসিমুখ দেখা গেছে। অন্যদিকে সাধারণ বিমা খাতে দেখা গেছে উল্টো দৌড়। গতকাল প্রায় প্রতিটি কোম্পানির দর কমেছে। এর মধ্যে সিংহভাগের কমেছে দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত।
টানা কয়েকদিন পতন প্রবণতায় থাকার পর উঠে দাঁড়িয়েছে বস্ত্র খাত। খাতটি দর বৃদ্ধির শীর্ষে থাকার সঙ্গে লেনদেনেও ভালো করেছে। ৯০ কোটি ২৫ লাখ টাকা লেনদেনের দিনে এই খাতের ৪৫টি কোম্পানির দর বেড়ে লেনদেন হয়েছে। বিপরীতে ৯টি কোম্পানির দর পতন হয়েছে।
অন্যদিকে হঠাৎ মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেনে উত্থান দেখা যায়। এ খাতের ২৯টি মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট দর বেড়েছে, অপরিবর্তিত থেকে লেনদেন হয়েছে ৩টির। আর ৩টির দর কমতে দেখা গেছে। প্রধান খাতগুলোর মধ্যে বিবিধ, ওষুধ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে কিছুটা দর বৃদ্ধি দেখা গেছে। বাকি খাতগুলোয় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কোম্পানির দর বাড়লেও পতনের সংখ্যাই বেশি ছিল।
প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৫ দশমিক ৬৪ পয়েন্ট বা ০২ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৪৮৪২ দশমিক ২৪ পয়েন্টে। ডিএসইর অন্য সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ২ দশমিক ০৬ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ১৪ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ২ দশমিক ৮৭ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ১২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৪১২ দশমিক ৯৫ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ৩৫৩ দশমিক ৬৪ পয়েন্টে।
ডিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৯১৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকার, যা আগের কার্যদিবস থেকে ১৭৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা বেশি। আগের কার্যদিবস লেনদেন হয়েছিল ৭৩৯ কোটি ৩১ লাখ টাকার। ডিএসইতে ৩৭৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৯০টির বা ৫০ দশমিক ১৩ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। দর কমেছে ১৪৯টির বা ৩৯ দশমিক ৩১ শতাংশের এবং ৪০টির বা ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এদিন ৬৫ দশমিক ১৫ পয়েন্ট বা ০ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ২৩ দশমিক ৯১ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে হাতবদল হওয়া ৩০০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ারদর বেড়েছে ১৫৯টির, কমেছে ১১০টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩১টির দর। সিএসইতে ২৩ কোটি ১৩ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে এদিন।