নিজস্ব প্রতিবেদক: বন্যাদুর্গত মানুষের দিকে না তাকিয়ে সরকার পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী উৎসব নিয়ে ব্যস্ত বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর ভাটারায় ঢাকা উত্তরের তিন ওয়ার্ডের সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি এই দুঃসময়ে, এই দুর্যোগের সময়ে, জনগণের এই কষ্টের সময়ে তারা পদ্মা ব্রিজের উদ্বোধন নিয়ে এত ব্যস্ত যে, মানুষের কল্যাণের দিকে তাকানোর কোনো সময় নেই, মানুষের কষ্টের দিকে তাকানোর সময় নেই।’
বন্যা পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সারাদেশে আজকে বন্যার ধারালো ছোবল। সিলেট ও সুনামগঞ্জ থেকে শুরু করে উত্তরে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রামসহ সব অঞ্চল বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। গতকালের যে নিউজ সেই নিউজ হচ্ছে ফারাক্কার সব বাঁধ খুলে দেয়া হয়েছে এবং ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে পদ্মা-মেঘনা-যমুনা সব নদীর পানি এখন বাড়তে থাকবে। এদেশের মানুষকে ভাসিয়ে দেবে, তাদের বহুদিনের যে কষ্ট করা যে ফসল সেই ফলসকে নষ্ট করবে, তাদের বাড়ি-ঘর নষ্ট করবে, তাদের গবাদি পশু নষ্ট করবে, তাদের সব সম্পদ ভাসিয়ে নিয়ে চলে যাবে।’
বন্যা মোকাবিলায় ‘সরকারের ব্যর্থতার’ কথাও তুলে ধরেন সাবেক কৃষি প্রতিমন্ত্রী মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘কেন এই বন্যা? ক্লাইমেট চেঞ্জ হচ্ছে সেজন্য বন্যা আসতে পারে। কিন্তু সেই বন্যাকে মোকাবিলার জন্য বা সেই বন্যায় যাতে কম ক্ষতি হয়, সেটা দেখার দায়িত্ব সরকারের। তারা গত এক যুগেও ভারতের সঙ্গে যেসব অভিন্ন নদী রয়েছে, সেই অভিন্ন নদীগুলোর পানিবণ্টনের যে চুক্তি, সেই চুক্তি করতে সক্ষম হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের বহুদিন ধরে তিস্তা নদীর পানি চুক্তির মুলা দেখানো হচ্ছে। কিন্তু তা আজ পর্যন্ত করা হয়নি। ফারাক্কার পানি হঠাৎ করেই যে তারা (ভারত) গেট খুলে দেয়, তখন যে পানির ঢল আসে, সেই ঢল সামলানো সম্ভব হয় না। আজকে সিলেট-সুনামগঞ্জ অঞ্চলে একই ঘটনাগুলো ঘটছে। আজকে এটার জন্য সম্পূর্ণভাবে এই সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি এবং তার জনগণের প্রতি যে অবহেলা সেটাই প্রমাণ।’
কিশোরগঞ্জে হাওরেও ওপর ইটনা থেকে মিঠামইন হয়ে অষ্টগ্রাম পর্যন্ত ২৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার সড়ক চালু হয় ২০২০ সালে। কিন্তু এ সড়কের কারণে বর্ষায় পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হওয়ায় পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য হুমকিতে পড়ছে বলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বন্যা হবে না কেন? হাওর ও নদীতে বাঁধ ও ব্রিজ দেয়া হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে। সেখানে এত দুর্নীতি হয়েছে যে, সব বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে এবং নতুন করে যেসব রাস্তা তৈরি করা হয়েছে, তা ভেঙে যাচ্ছে। সবকিছু সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। সেজন্য আজকে এমন একটা অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে আমাদের দেশে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এখন তারা (সরকার) নতুন একটা গান শুরু করেছে। সেই গানটা কী? যে বাংলাদেশ এই যে পদ্মা ব্রিজের উদ্বোধন হবে, সেখানে নাকি একটা বড় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। জাতির সামনে বলেন, সেই দুর্ঘটনাটি, কারা করছেÑপরিষ্কার করে বলেন।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বেসরকারিকরণের চক্রান্ত চলছে বলে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে কিছু প্রস্তাব করা হছে, সেটা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ। আমি বিস্মিত হয়ে গেছি যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটা প্রতিষ্ঠান, শতবর্ষ ধরে যে বিশ্ববিদ্যালয় এই দেশে সবচাইতে মেধাবী মানুষদের শিক্ষা দিয়ে সমাজে পাঠিয়েছে, বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে, সাহিত্যের ক্ষেত্রে, সমাজের বিভিন্ন জায়গায় নেতৃত্বের ক্ষেত্রে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ প্রস্তাব করছেনÑবিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ হাজার শিক্ষার্থী আছে, এর মধ্যে যারা ধনী তাদের জন্য বিশেষ ফি অর্থাৎ বেশি টিউশন ফি দিতে হবে। কারণ তারা ধনীর সন্তান।’
রাজধানীর ভাটারা বাজারের কাছে ভাটারা থানা বিএনপির এ ওয়ার্ড সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ঢাকা উত্তর মহানগর বিএনপির ১৭, ৩৯ ও ৪০নং ওয়ার্ডের নতুন নেতৃত্বের নির্বাচন হবে।
৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের আহ্বায়ক এসএম কামরুল ইসলামের সভাপতিত্বে সম্মেলনে মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান ও সদস্য সচিব আমিনুল হক বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মহানগর উত্তর বিএনপির আবদুল আলি নকি, আতিকুল ইসলাম মতিন, আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, এজিএম শামসুল হক, ফেরদৌসী আহমেদ মিষ্টি, মোয়াজ্জেম হোসেন মতি, আতাউর রহমান, আখতার হোসেন, মোস্তফা জামাল প্রমুখ।