বন্যায় সাড়ে ১২ হাজার হেক্টর আউশ ক্ষেত প্লাবিত

 

নাজমুল হুসাইন: বন্যায় গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত সারা দেশের সাড়ে ১২ হাজার হেক্টর আউশ ধানের ক্ষেত সম্পূর্ণ প্লাবিত হয়েছে। কয়েক দিন ধরেই নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্লাবিত জমির পরিমাণ প্রতিদিনই বাড়ছে। এছাড়া বন্যায় ক্ষতি হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায় আমনের আগাম বীজতলা। যা দীর্ঘমেয়াদি হলে বড় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

এদিকে ক্ষতির আশঙ্কা করলেও আউশের ফলন বিগত বন্যায় প্লাবিত হয়ে ইরি-বোরোর মতো হবে না বলে মনে করছে কৃষি অধিদফতর (ডিএই)।

অধিদফতরের সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক চৈতন্য কুমার দাস শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এখনও আউশের উল্লেখযোগ্য কোনো ক্ষতি হয়নি। কারণ আউশ ধানের চাষই হয় উঁচু জমিতে। এতে বন্যায় এ পর্যন্ত প্লাবিত এলাকায় কিছু জমি নিমজ্জিত হয়েছে। আর যেসব অঞ্চলে বন্যা চলছে, সেসব এলাকায় আউশের তেমন চাষ হয় না।’

এদিকে আমন মৌসুমের আগে এমন বন্যা ও অতিবৃষ্টি আশীর্বাদ বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কয়েক দিন পর আমন চাষ শুরু হবে। এ সময় বন্যা ও প্রচুর বৃষ্টিতে কৃষকের জন্য উপকারই হচ্ছে। কৃষির জন্য এ বন্যা প্রয়োজন ছিল। এতে অনেকে সাময়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও দীর্ঘ মেয়াদে তা কৃষির জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে।’

ডিএই’র মহাপরিচালক কৃষিবিদ মো. গোলাম মারুফ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমনের কিছু বীজতলাও তলিয়ে গেছে। তবে তলিয়ে গেলেও পানি কমলে নাবি জাতের ধানের আবাদে উপকরণ ও বীজসহায়তা বিনামূল্যে দেওয়া হবে। এতে আমনের কোনো ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। আর অনেক এলাকায় বীজতলা আরও কয়েক দিন পর তৈরি করা হবে।’

ডিএই’র তথ্যমতে, গতকাল পর্যন্ত সারা দেশের ১২ হাজার ৫৪০ হেক্টর আউশ ধানের জমি বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। তবে ক্রমেই বাড়ছে বন্যার পরিধি। দেশের জেলাগুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামে আউশের ক্ষেত সব থেকে বেশি প্লাবিত রয়েছে। কারণ সেসব এলাকার চরাঞ্চলে আউশ ধান রয়েছে। অপরদিকে বগুড়া, সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় বন্যায় আউশ ক্ষেত ও আমনের বীজতলা পানিতে নিমজ্জিত অবস্থায় রয়েছে গত এক সপ্তাহ ধরে। ফলে সেসব এলাকায় ধানের ক্ষতি বেশি হয়েছে। অপরদিকে দেশের অধিকাংশ এলাকায় আমন বীজতলা তৈরি শুরু হয়নি।

জানা গেছে, চলতি মৌসুমে প্রায় ১০ লাখ ৯২ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ আবাদ হয়েছে। যদিও এ বছর সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১ লাখ ২৫ হাজার হেক্টর। ফলে লক্ষ্যমাত্রা থেকে আবাদের পরিমাণ কিছুটা কম।

দেশের কয়েকটি জেলা বন্যাপ্লাবিত থাকার পর সোমবার উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে পানি বেড়ে আবারও উত্তরাঞ্চলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আর সপ্তাহখানেক আগে প্লাবিত জেলাগুলোয় শেষ কয়েক দিনে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও গতকাল কয়েক দফা বৃষ্টিতে আবারও বন্যাপরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। যার মধ্যে সিলেটের মৌলভীবাজার অন্যতম। এছাড়া গতকাল থেকে জামালপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুরের কয়েকটি এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে।

দীর্ঘমেয়াদি প্লাবিত থাকা সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও চট্টগ্রাম এলাকার আউশ ধান সম্পূর্ণ নষ্ট হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ওই চার জেলায়ই প্রায় আট হাজার হেক্টর ধান প্লাবিত ছিল।

গতকাল পরিস্থিতি জানতে চাইলে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর গ্রামের কৃষক এরশাদ বলেন, এক সপ্তাহ টানা পানিবন্দি থাকায় ধান সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে।

গত সোমবার মনু, ফানাই, গোগালী, কাপুফা ও শুকনাছড়া নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় উপজেলার শতাধিক গ্রাম। ফলে সব মিলে ছয় শতাধিক হেক্টর আউশ ধানের জমি পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।

সম্প্রতি অকাল বন্যায় তলিয়ে যায় বোরোক্ষেত। সে সময় হাওর অঞ্চলসহ সিলেট বিভাগের কয়েকটি জেলায় আকস্মিক বন্যায় বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। সেই রেশ কাটতে না কাটতে আবার বন্যায় আউশ ধানের ক্ষেত ও আমন চারা বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে আউশ নিয়েও একই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে কৃষকের মনে।