ফ্লাইওভারে ঝুঁকিপূর্ণ স্টপেজ ও সিঁড়ি

 

রাজধানীর মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের যাত্রাবাড়ী-সায়েদাবাদ অংশের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে সিঁড়ি অপসারণে দেওয়া হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। বস্তুত বিশ্বের কোনো দেশেই ফ্লাইওভারে ওঠানামার জন্য সিঁড়ির ব্যবস্থা থাকে না। ফ্লাইওভারের উপরেও থাকে না বাসস্টপেজ। উড়ালসড়ক নির্মাণের উদ্দেশ্যই থাকে ক্রসিং ও স্টপেজবিহীন অব্যাহত চলাচল। সেখানে পথচারীদের চলাচলের ব্যবস্থাও রাখা হয় না। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী জানিয়েছেন, হানিফ ফ্লাইওভারের মূল নকশায় এ রকম কোনো সিঁড়ি ছিল না। অথচ ফ্লাইওভারটি পরিচালনাকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড এসব সিঁড়ি বসিয়ে ফ্লাইওভারের ওপরের বাস ও লেগুনার স্টপেজ থেকে যাত্রী ওঠানামার ব্যবস্থা করে দিয়েছে, যা ঝুঁকিপূর্ণ। নকশাবহির্ভূত এ ধরনের স্থাপনা প্রতিষ্ঠানটি কীভাবে নির্মাণ করলো, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনও পারে না দায় এড়াতে। ফ্লাইওভারে স্টপেজ ও যাত্রী ওঠানামায় সিঁড়ি রাখায় দুর্ঘটনার শঙ্কা যেমন থাকে, তেমনি বাড়ে যানজট। সড়ক প্রকৌশলীরাও এ ধরনের স্থাপনা সমর্থন করেন না।

ক্রসিংবিহীন চলাচলের জন্য ফ্লাইওভার একটি অভিনব ব্যবস্থা। ক্রসিং এড়ানোই এর মূল লক্ষ্য। স্টপেজ থাকারও প্রশ্ন আসে না। দীর্ঘ ফ্লাইওভারের ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোয় মাঝপথে নেমে যাওয়ার জন্য ঘুরিয়ে বিকল্প রাস্তা করে দেওয়া হয়। হেঁটে নামার ব্যবস্থা সেখানে অনুপস্থিত। যেসব যাত্রী মাঝপথে নামতে চান, তারা হয় নিজেদের গাড়ি সেই বিকল্প গোলাকৃতি রাস্তায় নিয়ে ফ্লাইওভার থেকে বের হয়ে পড়েন অথবা যে গণপরিবহনগুলো মাঝপথে নেমে পড়বে, সেগুলো ব্যবহার করেন। তবে আমাদের দেশে অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘ ফ্লাইওভারের ক্ষেত্রে মাঝপথে গাড়ি নিয়ে নামার ব্যবস্থা থাকে না। চট্টগ্রামের ফ্লাইওভার এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। বিকল্প হিসেবে উড়ালসড়কের ওপরে বা মুখে স্টপেজ বসানো কোনো কার্যকর সমাধান নয়, বরং তা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে স্পষ্ট যে, আমরা এখনও উড়ালসড়ক বা এ রকম বিকল্প সড়কপথ ব্যবহারে অভ্যস্ত হতে পারিনি। মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারে ইন্টারসেকশন বা ট্রাফিক সিগন্যাল যেন আরেক বিস্ময়। এটি সম্ভবত বিশ্বের একমাত্র ফ্লাইওভার, যেখানে ইন্টারসেকশন রয়েছে। ফ্লাইওভারে ইন্টারসেকশন এড়ানোর জন্য একে দ্বিতল বা ত্রিতল করা হয়। সেটি না করে এ ধরনের ক্রসিং রাখার সিদ্ধান্ত যৌক্তিক হয়নি। ট্রাফিক সিগন্যাল মানার ব্যাপারে আমরা এখনও আইনের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল নই। ফ্লাইওভারের ওপরে রাস্তার মধ্যে পুলিশের পক্ষে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়, কেননা সেখানে অবস্থান ঝুঁকিপূর্ণ।

রাজধানীর বেশ কিছু ফ্লাইওভার যানজট নিয়ন্ত্রণে সন্তোষজনক ভূমিকা রেখেছে। কোনোটির নির্মাণকাজ অতিরিক্ত সময় নিয়ে নগরবাসীকে ফেলেছে দুর্ভোগে। অনেক ক্ষেত্রে অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হয়েছে এগুলো বা এগুলোর অংশবিশেষ, বিশেষজ্ঞদের মতে যা মেট্রোরেলের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে। এসব ফ্লাইওভার দিয়ে অযান্ত্রিক যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা সব ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না ঘটছে দুর্ঘটনা। আমরা আশা করবো, ফ্লাইওভারসহ রাজধানীর সড়কপথে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট বুদ্ধিমত্তা ও সক্ষমতার পরিচয় দেবে; নগরবাসীও হয়ে উঠবে আরও সচেতন।