দেশে বেসরকারি ক্লিনিক, হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার প্রভৃতি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান অসংখ্য। এগুলোর সামান্য অংশই মানসম্পন্ন। চিকিৎসাসেবার নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি অবসানের কথা বলা হলেও বাস্তবে সে ধরনের উদ্যোগের বড়ই অভাব রয়েছে। গত কয়েক বছরে দেশে অসংখ্য হাসাপাতাল-ক্লিনিক গড়ে উঠেছে। রাজধানীর অলিগলিতে হাঁটলেই চোখে পড়ে নানারকম বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র। চটকদার ভাষায় সাইনবোর্ড-ব্যানারে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের নিশ্চয়তা দেয়া হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ ছাড়াও বিদেশের ডিগ্রিধারী চিকিৎসকদের সাইনবোর্ড শোভা পাচ্ছে অনেকে ক্লিনিক বা হাসপাতালে। সমাজে আর্থিকভাবে যারা সচ্ছল তারা উন্নত সেবার জন্য বিদেশে পাড়ি জমাতে পারেন সহজে। কিন্তু নি¤œবিত্ত এবং সীমিত আয়ের ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষকে দেশের নৈরাজ্যকর চিকিৎসা পরিস্থিতির শিকার হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অভিযানের মধ্যে মঙ্গলবার একটি গবেষণা জরিপের ফল প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ বা আইসিডিডিআর,বি। বাংলাদেশে অবস্থিত একটি আন্তর্জাতিক চিকিৎসা-সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির জরিপে উঠে এসেছে দেশে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের কেবল ছয় শতাংশ বৈধ। স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৫৯ শতাংশ নতুন লাইসেন্স পেতে কিংবা নবায়নের আবেদন করেছে, তবে এখনও পায়নি। ৩৫ শতাংশ লাইসেন্স পাওয়া কিংবা নবায়নের আবেদন না করেই চলছে। ২০১৯-২০ সালে ইউএসএআইডির সহায়তায় ১২ সিটি করপোরেশন ও ১০ জেলার ২৯টি উপজেলায় জরিপ চালিয়ে এ চিত্র পাওয়া যায়। আইসিডিডিআর,বি বলছে, এ গবেষণা করতে গিয়ে এক হাজার ১৮৯টি বেসরকারি হাসপাতালকে মূল্যায়নের জন্য সহযোগিতা চাওয়া হয়। তবে ৪০টি হাসপাতাল সহযোগিতা করেনি। এক হাজার ১১৭টি প্রতিষ্ঠানকে মূল্যায়ন করা হয়।
আইসিডিডিআর,বির জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের ৯৪ শতাংশই অবৈধ! হতে পারে জরিপ করা এক হাজার ১১৭ বেসরকারি হাসপাতালে ৯৫৬টি হাসপাতাল কোনো না কোনো সময় লাইসেন্স নিয়েছিল, কিন্তু ১৬১টি বেসরকারি হাসপাতাল কখনোই লাইসেন্স নেয়নি। এটি কী করে সম্ভব? দীর্ঘ সময় ধরে এ প্রতিষ্ঠানগুলোয় তদারকি হয়নি, কিংবা কারও সঙ্গে বোঝাপড়ার ভিত্তিতেই তারা ব্যবসা চালিয়ে আসছে।
আমাদের স্বীকার করতে হবে, দেশের বেশিরভাগ মানুষ চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে বেসরকারি খাত থেকে। এখন দেখা যাচ্ছে, ব্যক্তিমালিকানাধীন হাসপাতালের সংখ্যা ও শয্যাসংখ্যা, রোগনির্ণয়ের সুযোগ এবং চিকিৎসাব্যয় বেশি হলেও তারা নিয়ম মেনে ব্যবসা করছেন না।
সরকারি হাসপাতালে অনিয়ম-দুর্নীতি হয় বলে সরকারি হাসপাতালের ওপর মানুষের বিশেষ করে সেবাগ্রহীতাদের আস্থা অনেক কম। সে ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতই ভরসা। এই খাতের কিছু সীমাবদ্ধতা-অসংগতির জন্য শুধু নির্দেশ ও নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিবন্ধিত হাসপাতালগুলোর সেবার মানোন্নয়নের জন্য তিন ক্যাটেগরিতে বিভাজন করা হবে। এ, বি, সিÑএই তিন ক্যাটেগরির তালিকা তৈরি করে হাসপাতালগুলোয় টানিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
বেসরকারি হাসপাতালে সেবা ও বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষার মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হবে। যে চার্জ নির্ধারণ করে দেয়া হবে, সেগুলো সংশ্লিষ্ট ক্লিনিক, হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রদর্শন করতে হবে। সেখানে প্রতিটি সেবার মূল্য সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে। এগুলো দর্শনীয় স্থানে বোর্ডে টানানো থাকবে, যা সরকারি হাসপাতালে রয়েছে। কোনো প্রতিষ্ঠান যাতে সরকারি তদারকির বাইরে না থাকে, সেজন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।