আতাউর রহমান: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেট ফেরত পেপার ও প্রিন্টিং খাতের কোম্পানি পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের অস্বাভাবিক শেয়ারদর বৃদ্ধি এবং লেনদেন হওয়ার বিষয়ে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সম্প্রতি এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়ে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছে কমিশন।
পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের শেয়ারের দাম ও লেনদেনে অস্বাভাবিক গতিবিধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএসইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের শেয়ারের দাম ও লেনদেনে অস্বাভাবিক গতিবিধি লক্ষ করা যাচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে উল্লেখযোগ্যভাবে যা বৃদ্ধি পেয়েছে। কোম্পানিটির শেয়ারের দাম গত ১০ আগস্ট থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত ১৭৫ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ২৭২ টাকা পর্যন্ত ৫৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
উল্লেখ্য, এ সময়ের মধ্যে কোম্পানিটির শেয়ারের এ সাম্প্রতিক অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও শেয়ারের লেনদেনের পরিমাণ বৃদ্ধি-সংক্রান্ত কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করেনি। এ পরিপ্রেক্ষিতে ডিএসইকে পেপার প্রসেসিংয়ের শেয়ার লেনদেনের বিষয়ে তদন্ত করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে এবং কমিশনে প্রতিবেদন জমা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়টি নিশ্চিত করে ডিএসইর প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) মো. সাইফুর রহমান মজুমদার শেয়ার বিজকে বলেন, পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের শেয়ারের দাম ও লেনদেনে অস্বাভাবিক গতিবিধি নিয়ে বিএসইসি একটি চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠিটি এখন ডিএসইর প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (সিআরও) ও আরইডি বিভাগে আছে।
এদিকে কোম্পানিটির শেয়ারদর পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত ৮ আগস্ট কোম্পানিটির শেয়ারের দর ছিল ১৮২ টাকা ৪৫ পয়সা। এরপর গত ২২ আগস্ট শেয়ারটির দর দাঁড়িয়েছে ২৫০ টাকা ৩৮ পয়সায়। ৫ সেপ্টেম্বর লেনদেন শেষে শেয়ারটির দর ছিল ২৩২ টাকা ১৭ পয়সা।
এর আগে পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড শেয়ারদর অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির কারণ জানে না বলে গত ২৩ আগস্ট ডিএসইকে জানিয়েছে কোম্পানিটি। কোম্পানির শেয়ারের অস্বাভাবিক দর বাড়ার কারণ জানতে চেয়ে সম্প্রতি ডিএসই কোম্পানিটিকে নোটিশ পাঠায়। এর জবাবে কোম্পানিটির পক্ষ থেকে সম্প্রতি জানানো হয়, কোনো রকম অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই কোম্পানিটির শেয়ারদর এভাবে বাড়ছে।
চলতি হিসাববছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ’২২) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৬১ পয়সা, গত বছর একই সময় ইপিএস ছিল ৪০ পয়সা। এছাড়া প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই ২০২১-মার্চ ২০২২) আয় হয়েছে দুই টাকা ৯৭ পয়সা। আগের বছরের একই সময় ইপিএস ছিল ৪৪ পয়সা। ২০২২ সালের ৩১ মার্চ শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য হয়েছে ২৯ টাকা ৭০ পয়সা।
অনিয়মের কারণে ২০০৯ সালে বিভিন্ন খাতের ৬৬টি কোম্পানিকে মার্কেট থেকে সরিয়ে ওটিসি মার্কেটে নেয়া হয়। এর মধ্যে পেপার প্রসেসিং ছিল। পরে বিএসইসি ওটিসি মার্কেট ভেঙে দেয়ার উদ্যোগ নিলে গত বছরের ১৩ জুন ডিএসইর মূল মার্কেটে আবার লেনদেন শুরু হয় কোম্পানিটির।
১৯৯০ সালে কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। বর্তমানে কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ২৫ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ১০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। কোম্পানিটি গত ২০২১ হিসাব বছরে ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ৩৫ শতাংশ উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে, দশমিক ৫৪ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক এবং ৬৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে।