চাপের মুখে শিল্পোদ্যোক্তারা

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: কভিড মহামারিতে জাহাজভাড়া দ্বিগুণের বেশি বাড়ায় বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল আমদানি ব্যয় বেড়েছিল। এরপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধে বেড়েছে সব ধরনের আমদানি পণ্যের দাম। আর জুলাই মাস থেকে ডলারের বিনিময়হার প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে। আর সর্বশেষ বাড়ানো হলো জ্বালানির দাম। এসব কারণে সাম্প্রতিক সময়ে ইস্পাত, সিমেন্ট, গাড়ি উৎপাদনসহ ভারী শিল্পে উৎপাদন কমেছে। পাশাপাশি বিক্রি কমেছে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ৬০ শতাংশেরও বেশি, যা নিয়ে রীতিমতো উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় আছেন ভারী শিল্প খাতের শিল্পোদ্যোক্তারা।

শিল্প খাতের শিল্পোদ্যোক্তারা জানান, ২০২০ সালের পর থেকে করোনা মহামারিতে জাহাজভাড়া দ্বিগুণের বেশি বাড়ায় বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামালের আমদানি ব্যয় বেড়েছিল। এরপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধে বেড়েছে সব ধরনের আমদানি পণ্যের দাম। গত তিন মাসের ব্যবধানে আন্তঃব্যাংকে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে সাড়ে আট শতাংশের বেশি, আর এক বছরের ব্যবধানে কমেছে সাড়ে ১২ শতাংশ। অন্যদিকে খোলাবাজারে ডলারের দাম বেড়েছে ২৫ শতাংশেরও বেশি। খোলাবাজারে প্রতি ডলার বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকায়। গত ১৬ মে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের বিনিময় নির্ধারণ করে ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা। এ পর্যায় থেকে ধারাবারিকভাবে বাড়াতে বাড়তে সর্বশেষ বাংলাদেশে ব্যাংক ডলারের বিনিময় হার ৯৫ টাকা নির্ধারণ করে। এতে চলতি বছরের শুরু থেকে বড় ধরনের আমদানি ব্যয় পরিশোধ করতে গিয়ে ডলার সংকট শুরু হয়। সবশেষে জ্বালানি সংকটের সঙ্গে বাড়ানো হলো দামও।

ব্যবসায়ীরা জানান, এরই মধ্যে শিল্প খাতে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ কমে গেছে, অথচ গ্যাসের সবচেয়ে বেশি চাহিদা ইস্পাতশিল্প খাতে। ইস্পাত কারখানাগুলোয় গ্যাসের প্রবাহ কমিয়ে দেয়ায় পণ্য উৎপাদনে দ্বিগুণেরও বেশি সময় লাগছে। পণ্য উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বড় ধরনের লোকসানের সম্মুখীন উদ্যোক্তারা। সবমিলে ইস্পাত, সিমেন্ট, গাড়ি উৎপাদনসহ ভারী শিল্পে উৎপাদন কমেছে। পাশাপাশি বিক্রি কমেছে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ৬০ শতাংশেরও বেশি, যা নিয়ে রীতিমতো উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় আছেন ভারী শিল্পের শিল্পোদ্যোক্তারা।

কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) সূত্রে জানা যায়, বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে শিল্পাঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন দিনে সাপ্তাহিক ছুটি নির্ধারণ করেছে সরকার। এ কারণে গত ১১ আগস্ট থেকে সপ্তাহের সাত দিনই চট্টগ্রামের কোনো না কোনো শিল্পাঞ্চলে শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকছে। এতে শিল্প খাতের এক হাজারের বেশি গ্রাহককে দেয়া হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এছাড়া শিল্প খাতের গ্রাহকদের দেয়া হচ্ছে ৫০-৬০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। ফলে এ খাত থেকে দিনে গ্যাস সাশ্রয় হচ্ছে অন্তত ৩০ মিলিয়ন ঘনফুট।

কেজিডিসিএল কর্মকর্তারা বলছেন, গ্যাসের চাহিদা বেশি হলেও জাতীয় গ্রিড থেকে চট্টগ্রামে এখন দিনে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানের শিল্পাঞ্চলে আমরা গ্যাস বন্ধ করিনি। কিন্তু বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে একেক শিল্পাঞ্চল একেক দিন বন্ধ থাকায় ওই শিল্পাঞ্চলে গ্যাস স্বাভাবিকভাবেই ব্যবহার করা হচ্ছে না। এভাবে শিল্প খাতে দিনে ৩০-৪০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস কম লাগছে। এখন শিল্প খাতের এসব গ্যাস বিদ্যুৎ খাতে সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

সেভেন রিং সিমেন্টের সাউথ জোনের এরিয়া ম্যানেজার মীর ইফতেখার হোসেন বলেন, আগস্ট মাসে ডলার রেটের কারণে স্বাভাবিক সময়ের চেয়েও বিক্রি কমেছে ৪০ শতাংশের বেশি। আর দাম বাড়ার পর বিক্রি আরও কমছে। এ ধরনের পরিস্থিতি কারও জন্য ভালো নয়।

অন্যদিকে নিটল মোটরসের সিনিয়র অফিসার নসরুল আমিন শাকিল বলেন, চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ডলারের দাম বাড়ার কারণে গাড়ি বিক্রি কমেছে। এর মধ্যে আমাদের ৩৫ শতাংশের মতো গাড়ি বিক্রি কমেছে। এ পরিস্থিতিতে গাড়ি কে কিনবে?