স্মরণীয়-বরণীয়

অধ্যাপক ড. এ এফ সালাহ্উদ্দীন আহমদের শততম জন্মবার্ষিকী আজ। তিনি মুক্তচিন্তা ও ধর্মনিরপেক্ষতার ক্ষেত্রে একজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব। সালাহ্উদ্দীন আহমদ ১৯২২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কলকাতার তালতলা হাইস্কুল থেকে ১৯৩৮ সালে ম্যাট্রিকুলেশন, রিপন কলেজ থেকে ১৯৪০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক, প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯৪৩ সালে ইতিহাসে সম্মানসহ স্নাতক এবং ১৯৪৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাপানে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ ও গবেষণা করেন। পিএইচডি করেন লন্ডনে। সালাহ্উদ্দীন আহমদ ১৯৪০ সালে মানবেন্দ্রনাথ রায়ের ‘র‌্যাডিকাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি’তে যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯৪৬ সালে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার সময় তিনি রাজনীতি ছেড়ে দাঙ্গারোধ ও দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যে যোগ দেন ভারতীয় রেড ক্রসে। সালাহ্উদ্দীন আহমদ ১৯৪৮ সালে জগন্নাথ কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেন। এখানে তিনি রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠালগ্নে ১৯৫৪ সালে ইতিহাস বিভাগে যোগ দেন এবং এখানে তিনি অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। দেশ স্বাধীন হলে ১৯৭২ সালে যোগ দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৭৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন এবং ১৯৮৪ সালে নিয়মিত চাকরি থেকে অবসর নেন। তবে পরে তিনি সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক হিসেবে যুক্ত ছিলেন।  সালাহ্উদ্দীন আহমদ বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতির সভাপতি ও বাংলাদেশ জাতিসংঘ সমিতির চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রের সদস্য-পরিচালক ছিলেন। তার গবেষণার বিষয় উনিশ শতকের বাংলা। তার লেখা প্রবন্ধের অধিকাংশই মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা প্রভৃতি। তিনি মোট ২৫টি গ্রন্থ রচনা করেন। কয়েকটি গ্রন্থ সম্পাদনাও করেন। সালাহ্?উদ্দীন আহমদ রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থÑসোশ্যাল আইডিয়াস অ্যান্ড সোশাল চেঞ্জ ইন বেঙ্গল: ১৮১৮-১৮৩৫, বেঙ্গলি ন্যাশনালিজম অ্যান্ড দ্য এমারজেন্স অব বাংলাদেশ: অ্যান ইনট্রোডাকটরি আউটলাইন, হিস্ট্রি অ্যান্ড হেরিটেজ: রিফ্লেকশনস অন সোসাইটি পলিটিক্স অ্যান্ড কালচার অব সাউথ এশিয়া, বাঙালির সাধনা ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, বরণীয় ব্যক্তিত্ব ও স্বাধীন সুহƒদ, উনিশ শতকে বাংলার সমাজ-চিন্তা ও সমাজ বিবর্তন, ইতিহাসের আলোকে, ইতিহাস ঐতিহ্য জাতীয়তাবাদ গণতন্ত্র প্রভৃতি। ২০১১ সালে  জাতীয় অধ্যাপক হন সালাহ্উদ্দীন আহমদ। শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার, ১৯৯১ সালে একুশে পদকসহ বিভিন্ন পদক ও পুরস্কারে ভূষিত হন। তিনি ২০১৪ সালের ১৯ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা