পরিবেশ দূষণকারী ট্যানারি বন্ধ করা হোক

ঢাকার সাভারের চামড়াশিল্প নগরীর যেসব ট্যানারি কখনো পরিবেশগত ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেনি এবং কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার সম্ভাবনা নেই সেসব ট্যানারি বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

জানা যায়, সাভারের চামড়াশিল্প নগরীতে দৈনিক ৪০ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য উৎপাদিত হয়। অথচ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা রয়েছে ২৫ হাজার ঘনমিটার। রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সাভারে স্থানান্তরের উদ্দেশ্য ছিল দূষণ রোধ করা। কিন্তু এখনও চামড়াশিল্প নগরীতে কঠিন বর্জ্য পরিশোধনে তেমন ব্যবস্থা নেই। এ ব্যাপারে নিজেদের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেছে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

ট্যানারি কারখানাগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা হবে। এক. যেসব প্রতিষ্ঠান নিজেরা বর্জ্য শোধনাগার তৈরি করেছে; দুই. যেসব প্রতিষ্ঠান কখনোই পরিবেশগত ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেনি, জোড়াতালি দিয়ে চলছে এবং যাদের কর্মপরিবেশ নিশ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই; তিন. এ পর্যায়ে রয়েছে বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো। যেসব প্রতিষ্ঠান পরিবেশগত ছাড়পত্রের জন্য আবেদনই করেনি, সেগুলো দ্রুত বন্ধ করা হবে। তৃতীয় ভাগে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কমপ্লায়েন্ট হওয়ার জন্য ছয় মাস সময় দেয়া হবে।

চামড়া আমাদের সম্ভাবনাময় শিল্প। প্রথমবারের মতো গত অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি আয় এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। তখন এ খাতে রপ্তানি হয়েছে ১১১ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুসারে, ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে ৮৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার আয় হয়। সে হিসাবে চামড়া খাতে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ৩১ দশমিক ৮৫ শতাংশ। রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণ এবং নতুন বাজার খোঁজা যখন জরুরি, তখন ট্যানারি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। কিন্তু যারা পরিবেশ দূষণ বন্ধে ইটিপি স্থাপন করেছে আর যারা চেষ্টাও করেনিÑ উভয় প্রতিষ্ঠান সমমর্যাদা পেলে আইনের দুর্বলতাই প্রকাশ পায়। এটি ন্যায্যতা ও নৈতিকতারও পরিপন্থি। আমাদের মনে আছে, তাজরীন ফ্যাশনস অগ্নিকাণ্ড এবং রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় দেশের পোশাক খাত বিরূপ পরিস্থিতির শিকার হয়েছিল। বাজার ফিরে পেতে অনেক পরিবর্তন আনতে হয়েছে পোশাকশিল্পে।   

ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে আমাদের চামড়াজাত পণ্যের বিক্রি ভালো। চামড়ার তৈরি বেল্ট, মানিব্যাগ, নানা ধরনের লেডিস ব্যাগ, বিভিন্ন ধরনের বাক্স, জ্যাকেট, হ্যান্ডগ্লাভস, গাড়িতে ব্যবহার্য জিনিস অনেক দেশে রপ্তানি হয়ে থাকে। আমাদের কোনো অনিয়মে এ শিল্পে কোনো বিপর্যয় হলে তা হবে দুঃখজনক।

চামড়াজাত শিল্পে বাংলাদেশের ব্যাপক সম্ভাবনা মাথায় রেখে কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থা শতভাগ পরিবেশসম্মত করতে হবে। প্রয়োজনীয় নীতি-সহায়তা ও চামড়ার পরিবেশবান্ধব প্রক্রিয়াকরণ নিশ্চিত করা গেলে ২০২৪ সাল নাগাদ এ খাতের রপ্তানি ৩০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। তাই এ খাতে কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি পূর্ণাঙ্গ পরিবেশবান্ধব করতে হবে। পরিবেশ দূষণকারী ট্যানারিগুলো বন্ধ করা হলে বিদেশে আমাদের চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা ও ক্রয়াদেশ বাড়বে বলে মনে করি।