মেইড ইন আমেরিকা ফিরে আসছে

শেয়ার বিজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের কারখানাগুলোয় কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। উৎপাদকরা অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি কর্মী খুঁজছেন। গত কয়েক দশকের মধ্যে কর্মী খোঁজার এই প্রক্রিয়া দেখেনি দেশটি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাই বলা হচ্ছে মেইড ইন আমেরিকা ফিরে আসছে। খবর: সিএনএন।

চলতি মাসের প্রথম শুক্রবার (৭ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম বিভাগের প্রতিবেদনে দেখা গিয়েছে, উৎপাদন খাতে সেপ্টেম্বরে আরও ২২ হাজার নতুন কর্মীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। গত ১২ মাসে এই খাতে কর্মী নিয়োগের সংখ্যা ৫ লাখ ছাড়িয়ে গিয়েছে। প্রসঙ্গত, প্রতি মাসের প্রথম শুক্রবার আগের মাসের মাসে শ্রমবাজার নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম বিভাগ।

মহামন্দার পর যুক্তরাষ্ট্রের কারখানাগুলোয় প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ কর্মী যুক্ত হয়েছেন, যা এই সময়ের মধ্যে খাতটিতে সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান করেছে। গত এপ্রিল থেকে বার্ষিক হিসাবে অর্থাৎ গত বছরের সাপেক্ষে এ বছর ৪ শতাংশ বেশি কর্মী নিয়োগ দিয়েছে, যা ১৯৮৪ সালের পর সর্বোচ্চ। তখন দেশটির শ্রমবাজারে এই খাতটির অবদান ছিল বর্তমান সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ। বর্তমান নিয়োগদাতারা জানিয়েছেন, তারা আরও কর্মী চান। গত বছর এই খাতে ৮ লাখের বেশি পদ খালি হয়।

দীর্ঘদিন ধরে সরবরাহ শৃঙ্খলের কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে সমস্যা চলছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক প্রতিষ্ঠান, কেননা যন্ত্রাংশ ও পণ্য আমদানিজনিত সমস্যার কারণে তাদের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের জেনিসন করপোরেশনের প্রধান হেইডেন জেনিসন বলেন, যন্ত্রাংশের জন্য কয়েক মাস ধরে শুধু অপেক্ষা-ই নয়, বরং উৎপাদন শুরু করাও বিলম্বিত হচ্ছে। এমনকি কর্মীদের জন্য অতিরিক্ত অর্থও খরচ করছি। জেনিসনের করপোরেশন নির্মাণ খাতের জন্য অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র তৈরি করে। তিনি জানিয়েছেন, তাদের উৎপাদিত পণ্যের বিশাল চাহিদা রয়েছে। তাই অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা চালু করা হয়েছে। তাছাড়া ঘণ্টাপ্রতি ২০ থেকে ৩০ ডলার অতিরিক্ত খরচ করেও উপযুক্ত কর্মী পাচ্ছে না তার করপোরেশন।

জেনিসন তাই বলেন, ২০২০ সাল থেকে কর্মী সংকটে ভুগছে এই খাত। তবে এই খাতে অভিজ্ঞ প্রার্থী প্রাপ্তি, যারা এই খাত সম্পর্কে অবগত এবং কাজ সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখেন তাদের খুঁজে বের করাও কঠিন।

সাধারণত অর্থনৈতিক মন্দার কারণে কারখানার চাকরি ও উৎপাদন কমে এসেছে, যা মহামন্দাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে। তবে নতুন মন্দার আশঙ্কা থাকলেও শিল্পসংশ্লিষ্টরা হঠাৎ কর্মসংস্থান বেড়ে যাওয়ার ব্যাপারে যেমন আশাবাদী নন, তেমনি হঠাৎ ধস নামার আশঙ্কাও করছেন না।

ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ম্যানফ্যাকচারার্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জে টিমন্স বলেন, আমার মনে হচ্ছে আমরা অজানা অঞ্চলে রয়ে গিয়েছি। ১০০ পদের জন্য আমাদের মাত্র ৬০ জন কর্মী রয়েছেন। আমার ধারণা, এই পাইপলাইন পূরণ করতে আমাদের দীর্ঘ সময় পাড়ি দিতে হবে। গত বছর এই খাতে ৫ শতাংশ বেতন বেড়েছে বলে জানান টিমন্স। তার আশা, এই আরও দক্ষ কর্মীকে নিয়োগ দেয়া হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এ খাতে কর্মীদের আকৃষ্ট করার অন্যতম বাধা এর কাজের প্রকৃতি। উৎপাদন খাতের কাজের ধরনের কারণে অনেক কর্মী এই খাতে ক্যারিয়ার গড়তে চান না বলে মনে করেন তারা।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সেবাদানকারী অলাভজনক প্রতিষ্ঠান নর্থওয়েস্ট পেনসিলভানিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এরিক ইসোদা বলেন, আমরা উৎপাদন খাত নিয়ে কমই উচ্চাশা দেখাই। তবে এই খাতটির ভবিষ্যৎ বেশ উজ্জ্বল। এর ওয়েল্ডিং বিভাগ কিছুটা অন্ধকারাচ্ছন্ন মনে হতে পারে, কিন্তু আমাদের এই খাতটিতে বর্তমানে প্রযুক্তির ব্যবহার তুলনামূলক বেশি।

উৎপাদন খাতের অন্যতম বড় সমস্যা নারী কর্মীর অভাব। খাতটি পুরুষকেন্দ্রিক। এ খাতে মাত্র ৩০ শতাংশ নারী কর্মী যুক্ত রয়েছে বলে জানিয়েছে

ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ম্যানুফ্যাকচারার্স। দুই বছর আগে এই সংখ্যা ছিল ২৭ শতাংশ। অ্যাসোসিয়েশনের অঙ্গসংগঠন ম্যানুফ্যাকচারিং ইনস্টিটিউটের মতে, এই খাতে নানা ধরনের প্রোগ্রাম যুক্ত করা হচ্ছে, যাতে ২০৩০ সালের মধ্যে নারী কর্মীর সংখ্যা ৩৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়।