শেয়ার বিজ ডেস্ক: ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসনের কারণে রাশিয়া থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থা। বিশেষ করে পাততাড়ি গুটিয়েছে একের পর এক নামি গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। এবার সেই তালিকায় নাম লেখাতে চলেছে বিশ্বখ্যাত জার্মান ব্র্যান্ড মার্সিডিজ-বেঞ্জ। এদিন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ব্র্যান্ড ফোর্ডও রাশিয়ার বাজার ছেড়ে যাওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। খবর: বিবিসি।
গতকাল বুধবার মার্সিডিস-বেঞ্জ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রাশিয়ায় তাদের সব সম্পত্তির মালিকানা স্থানীয় এক প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করা হবে। মস্কোর কারখানাসহ সব সম্পত্তির হিসাব ধরা হলে জার্মান অটো জায়ান্টটি ২০০ কোটি ইউরো ক্ষতির সম্মুখীন হবে। অবশ্য গত মার্চে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর সে দেশে গাড়ি উৎপাদন বন্ধ রাখে প্রতিষ্ঠানটি।
মার্সিডিজের চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার হারাল্ড উইলহেম বলেন, লোকসানের কারণে আমরা রাশিয়া ছেড়ে যাচ্ছি না। পশ্চিমা অনেক প্রতিষ্ঠান যেমন স্টারবাকস, ম্যাকডোনাল্ডস ও কোকো-কোলার মতো প্রতিষ্ঠান রাশিয়া থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ায় আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
নিসান, রেনো ও টয়োটার পর মার্সিডিজ চতুর্থ গাড়িনির্মাতা প্রতিষ্ঠান, যারা রাশিয়া ছাড়ছে। মস্কোর কাছে মার্সিডিজের একমাত্র কারখানায়
ই-ক্লাস সেডান ও এসইউভি উৎপাদিত হয়। এখানে কাজ করেন প্রায় এক হাজার কর্মী। জানা গেছে, জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেখানে ৯ হাজার ৫৫৮ ইউনিট মার্সিডিজ গাড়ি বিক্রি হয়েছে। গত বছরের একই সময়ের সঙ্গে তুলনা করলে বিক্রিতে ৭২ দশমিক ৮ শতাংশ পতন হয়েছে, যা সংস্থাটির দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে। দ্য অ্যাসোসিয়েশন অব ইউরোপিয়ান বিজনেসেস (এইবি) এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
মার্সিডিজের রাশিয়ান শাখা বলেছে, সেখানে তাদের শাখা সংস্থার যাবতীয় শেয়ার স্থানীয় এক গাড়ির ডিলার চেইনকে বিক্রি করা হবে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি রাশিয়া থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেয় জাপানের অটো জায়ান্ট নিসান। মাত্র এক ইউরোর বিনিময়ে রাশিয়ার এক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে কারখানা, গবেষণা কেন্দ্রসহ সব ফেসিলিটি বিক্রি করে তারা। রাশিয়ায় নিসানের ক্ষতির পরিমাণ ৬৮ দশমিক সাত কোটি ডলার।
ফ্রান্সের অটো জায়ান্ট রেনোও রাশিয়ায় তাদের ব্যবসা মাত্র এক রুবলের বিনিময়ে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে।
গত মার্চে ফোর্ড রাশিয়ায় তাদের সব কার্যক্রম বাতিল করার ঘোষণা দেয়। প্রতিষ্ঠানটি সোলারস-ফোর্ড জয়েন্ট ভেঞ্চারের কাছে তাদের ৪৯ শতাংশ শেয়ার হস্তান্তর করে। তবে চুক্তি অনুসারে, বিশ্ব পরিস্থিতির পরিবর্তন হলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে শেয়ার ফিরিয়ে নিতে পারবে ফোর্ড। এদিকে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ফেব্রুয়ারি থেকেই জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার, জেনারেল মোটরস, অ্যাস্টন মার্টিন ও রোলস-রয়েস রাশিয়ায় গাড়ি সরবরাহ স্থগিত রেখেছে।
কার ডিলার ম্যাগাজিনের সম্পাদক জেমস ব্যাগট বলেন, অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো রাশিয়ায় গাড়ি রপ্তানি ও কার্যক্রম বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিলেও মার্সিডিজি সে পথে হাঁটেনি। কারণ যুদ্ধের আগে মার্সিডিজের মতো বিলাসবহুল গাড়িনির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর লাভজনক বাজার ছিল রাশিয়া। দেশটির অভিজাত ও আলিগার্কদের বিশেষ পছন্দের তালিকায় রয়েছে এ ধরনের গাড়িগুলো।
রাশিয়ায় মার্সিডিজ-বেঞ্জের প্রধান নির্বাহী নাতালিয়া কোরোলেভা দেরিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া প্রসঙ্গে বলেন, গ্রাহকদের চাহিদা পূরণকে আমরা প্রাধান্য দিয়েছি এবং কর্মীদের কর্মসংস্থান আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, একের পর এক বিদেশি প্রতিষ্ঠানের প্রস্থানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের কপালে চিন্তার ভাঁজ যে বাড়ছে, তা নিশ্চিত।