রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে ভারতের কাছে হার বাংলাদেশের

ক্রীড়া প্রতিবেদক: ঝড়ের পর বৃষ্টি আসে। লিটন ঝড়ের পরও সেটাই এলো অ্যাডিলেড ওভালে। আর সেই বৃষ্টিতেই যেন খেই হারাল বাংলাদেশ। প্রায় ৫২ মিনিট খেলা বন্ধ থাকার পর যখন আবার তা শুরু হলো, নাজমুলের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে দ্বিতীয় বলেই রান আউট লিটন। সেখান থেকে বাংলাদেশ শুধু হারের দিকেই এগুলো। শেষ দিকে কিছুটা রোমাঞ্চ ছড়িয়ে জয়ের দারুণ সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলা ম্যাচটির পরিণতি হলো রুদ্ধশ্বাস সমাপ্তি এবং বাংলাদেশের ৫ রানে হার (ডিএল মেথডে)।

শুরুতেই নাজমুল হোসেন শান্তর অমার্জনীয় ভুল সেই সম্ভাবনাকে মৃত্যুর পথে টেনে নিয়ে আসে। দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে লিটনকে রানআউট করালেন তিনি। নিজেও তেড়েফুঁড়ে খেলতে গিয়ে হলেন আউট।

লিটন টি-টোয়েন্টি উপযোগী মারমুখী ব্যাটিংয়ের যে পথ দেখিয়ে গেলেন, সেটাকে অনুসরণ করতে পারেননি কেউই। সাকিব, আফিফরা মনে করেছিলেন, আকাশে বল তুলে দিলেই সম্ভবত ছক্কা হয়ে যাবে। কিন্তু ৩০ গজের বৃত্তও পার হলো না তাদের শট। তালুবন্দি হয়ে ধরতে হলো সাজঘরের রাস্তা।

শেষ মুহূর্তে শেষ সলতেটা জ্বালিয়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন নুরুল হাসান সোহান। কিন্তু ভারতীয়দের হিসেবি বোলিং তার সেই চেষ্টাকে সফল হতে দিল না। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ২০ রান। এক ছক্কা এবং এক বাউন্ডারিসহ সোহান নিতে পারলেন ১৪ রান। যার ফলে বাংলাদেশ হেরে গেল মাত্র ৫ রানের ব্যবধানে। আফসোস থেকে গেল আর ১টি কিংবা ২টি বলের। এ সুযোগটা পেলে হয়তো বাংলাদেশ জিতেও যেতে পারত। ঠিক ২০১৬ সালে ব্যাঙ্গালুরুর সেই ম্যাচটির মতো নয় হয়তো। তবে প্রায় একই রকম। শেষ মুহূর্তে এসে আবারও হারতে হলো বাংলাদেশকে। ব্যাঙ্গালুরুতে শেষ ওভারে মাহমুদউল্লাহ আর মুশফিকদের ভুলে মাত্র ১ রানে জয় পেয়েছিল ভারত। তারও এক বছর আগে, ২০১৫ সালে এ অ্যাডিলেড ওভালেই ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা নিশ্চিত করেছিল বাংলাদেশ।

এবার সেই অ্যাডিলেড ওভালে ইতিহাস রচনার দ্বারপ্রান্তে এসে আবারও হারতে হলো টাইগারদের। একেবারে নিশ্চিত জয়ের ম্যাচটিকেও পরাজয়ে রূপান্তরিত করে দিলেন টাইগার ব্যাটাররা।

ভারতের করা ১৮৪ রানের জবাব দিতে নেমে লিটন দাস যে ঝড়ো সূচনা করেছিলেন, তাতে পিলে চমকে গেছে ভারতেরই। পরাজয়ের শঙ্কা পেয়ে বসে তাদের। বৃষ্টির সময় তো ১৭ রানে পিছিয়ে ছিল তারা। ৭ ওভারে এ সময় বাংলাদেশের রান ছিল ৬৬। কিন্তু বৃষ্টির পর চিত্রটা পুরোপুরি উল্টে যায়।

ডিএল মেথডে পরিবর্তিত লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৬ ওভারে ১৫১। ৭ ওভারে ৬৬ রান তুলে ফেলার পর পরের ৯ ওভার তথা ৫৪ বলে বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৮৫ রানের। এই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভার, তথা ম্যাচের ৮ম ওভারেই দুর্ভাগ্যজনক রানআউট হয়ে যান লিটন দাস।

২৬ বলে ৫৯ রান নিয়ে বৃষ্টির পর খেলতে নামেন লিটন। ৮ম ওভারের প্রথম বলে অশ্বিনের কাছ থেকে ১ রান নেন তিনি। দ্বিতীয় বলে নাজমুল হোসেন শান্ত দ্বিতীয় রান নিতে গিয়েই বিপদে ফেলে দেন লিটনকে। তবে দুর্ভাগ্য লিটনের, লোকেশ রাহুলের সরাসরি থ্রো গিয়ে আঘাত হানে স্টাম্পে। ৬০ রানে রানআউট হয়ে গেলেন লিটন।

মোহাম্মদ শামির বলে সূর্যকুমার যাদবের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান শান্ত। আউট হওয়ার আগে ২৫ বলে করেন ২১ রান। নুরুল হাসান সোহান ১৪ বলে ২৫ রান করে চেষ্টা করেন জয়ের। সঙ্গে তাসকিনের ৭ বলে ১২ রানের চেষ্টাও ছিল; কিন্তু ৬ উইকেটে ১৪৫ রানে থেমে যায় বাংলাদেশ এবং হেরে যায় ৫ রানে।

এর আগে টস জিতে ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশ। তাসকিন আহমেদের আগুনে বোলিংয়ে ম্যাচটা শুরুও হয়।