কৃষি ও এসএমই খাতে ঋণ বিতরণ নিশ্চিত করুন

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এখনও বড় শক্তি হিসেবে কাজ করে কৃষি খাত। জিডিপিতে আনুপাতিক হারে এ খাতের অবদান কমে এলেও এখনও দেশের সর্বোচ্চ কর্মসংস্থান কৃষি খাতে। এছাড়া এসএমই খাত দেশের অর্থনীতিতে মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে। কিন্তু ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে এ দুটি খাতকে এখনও অবহেলা করে আসছে দেশের ব্যাংক খাত। এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্দিষ্ট পরিমাণ ঋণ এসএমই ও কৃষি খাতে বিতরণের নির্দেশনা দিলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো তা অনুসরণ করে না। বিষয়টি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘ব্যাংকার্স সভায় ক্ষোভ: কৃষি ও এসএমই খাতে ঋণ বিতরণে গতি নেই’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, কৃষি খাতের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও অর্থবছরের প্রথম চার মাসের নির্ধারিত ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি ৩৫টি ব্যাংক। অথচ বড় করপোরেট গ্রুপগুলোকে ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো উদার হস্ত বলেই প্রতীয়মান। এমনকি বড় ঋণগুলো পরিশোধের হার খুব সন্তোষজনক না হওয়া সত্ত্বেও ব্যাংকগুলো বড় ঋণের প্রতিই বেশি আগ্রহী। সাম্প্রতিক সময়ে এসব বিষয়ে প্রমাণও মিলেছে। গত মাসে দেশের ব্যাংক খাতের জন্য এক দুঃসহ সময় গেছে বৈকি। এর মধ্যে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর খবর হলো ইসলামী ব্যাংক থেকে ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠানের নামে বড় অঙ্কের ঋণ বিতরণ। এ ধরনের ঋণখেলাপি হয়ে পড়ার নজির সবচেয়ে বেশি। তা সত্ত্বেও সন্দেহজনক প্রতিষ্ঠানগুলো একের পর বড় ঋণ বাগিয়ে নিচ্ছে ব্যাংক খাত থেকে।

অন্যদিকে দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য বাড়ানোর ক্ষেত্রে কৃষি ও এসএমই খাতের বড় ভূমিকা থাকা সত্ত্বেও এ খাত পর্যাপ্ত ঋণ পায় না। এমনকি ফসল হানি বা প্রাকৃতিক নানা দুর্যোগের কারণে কৃষকরা তাদের গৃহীত ক্ষুদ্রঋণ পরিশোধে কিছুটা বিলম্ব করলে বা নির্ধারিত সময়ে পরিশোধে ব্যর্থ হলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পাশাপাশি তাদের গ্রেপ্তার করার ঘটনাও ঘটে থাকে অহরহ। অন্যদিকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে যারা ফেরত দেন না, তারা থেকে যান বহাল তবিয়তে। ফলে ব্যাংকগুলো বড় খেলাপি গ্রাহকদের তোষণ করার নীতি গ্রহণ করেছে কি না, সে বিষয়ে প্রশ্ন উঠতে থাকে।

ঋণ কেলেঙ্কারি বর্তমানে দেশে খুবই আলোচিত একটি বিষয়। যেসব ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে, তার ৯০ শতাংশের বেশি বড় ঋণের ক্ষেত্রে। কৃষিঋণ বা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঋণগুলো রিকভারির হার বেশ ভালো। তা সত্ত্বেও এ খাতে ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলোর আগ্রহ কম। এ পরিস্তিতির পরিবর্তন হওয়া জরুরি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কৃষি ও এসএমই খাতে ঋণ বিতরণ বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।