শেয়ার বিজ ডেস্ক: কাতারের নির্বাহীরা তাদের দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী। প্রায় ৮২ শতাংশ নির্বাহীর আশা, আগামী পাঁচ বছরে দেশটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস পূরণ বা অতিক্রম করতে পারবে। ব্যবসায়িক পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান আর্নেষ্ট অ্যান্ড ইয়াংয়ের (ইওয়াই) কাতার ইনভেস্টমেন্ট আউটলুক পালস ২০২২-এর প্রতিবেদনে অনুসারে এ তথ্য জানিয়েছে অ্যারাবিয়ান বিজনেস।
২০২১ সালের চতুর্থ প্রান্তিক থেকে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিক পর্যন্ত কাতারের বৃহৎ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নির্বাহীদের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের পরিপ্রেক্ষিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
চলতি বছর কাতারের মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি (জিডিপি) বেড়ে দাঁড়াবে ২১০ বিলিয়ন বা ২১ হাজার কোটি ডলারে। ২০২০ সালে যা ছিল ১৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। তবে কভিড মহামারির কারণে তখন জিডিপি কমেছে বলে জানিয়েছেন নির্বাহীরা।
তেল ও গ্যাস এবং ভোক্তাসেবাগুলো কাতারের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সাক্ষাৎকারদাতাদের মধ্যে যথাক্রমে ৬৪ ও ৪৫ শতাংশের আশা, আগামী পাঁচ বছরে এ খাতগুলো সাধারণ অর্থনীতিকে ছাড়িয়ে যাবে।
ইওয়াই কাতারের কান্ট্রি লিডার আম্মার সুদকি হাল্লাব বলেছেন, অনেক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও কাতার অর্থনীতি চাঙ্গা করতে সমর্থ হয়েছে এবং দৃঢ়তার সঙ্গে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ইভেন্টগুলোর আয়োজন করেছে। সফল টিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে কভিড-১৯ মহামারিও নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় দেশটি। মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সামাল দেয় দেশটির কর্তৃপক্ষ। এতে নির্বাহী ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয় এবং দেশজুড়ে অনেক কর্মসংস্থানের পথ সুগম হয়।
৫৫ শতাংশ সাক্ষাৎকারদাতা অবকাঠামো খাতের প্রবৃদ্ধি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। তবে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে এবং আসছে মাসগুলোয় কয়েকটি মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। নতুন মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে, শার্ক ক্রসিং, বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ ও লুসাইল সিটি প্রকল্পের উন্নয়ন। এগুলোর মধ্যে শার্ক ক্রসিংয়ের কাজ স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে শিগগির এর কাজ শুরু হবে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে সবার দুশ্চিন্তা কমে যাবে বলে আশা কর্তৃপক্ষের।
৬০ শতাংশ সাক্ষাৎকারদাতা নির্বাহী ইঙ্গিত দিয়েছেন, গত ১২ মাসে ২০২০ সালের তৃতীয়/চতুর্থ প্রান্তিক থেকে ২০২১ সালের তৃতীয়/চতুর্থ প্রান্তিকে তারা রিটার্ন পেয়েছেন। যদিও এ সময়ে কভিডজনিত কারণে নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। তারপরও ব্যবসা ও ভোক্তা কার্যক্রম অনেকাংশে ব্যবসায়ীদের অনুকূলে ছিল। ক্রমবর্ধমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও ভূরাজনৈতিক সংকট সত্ত্বেও আসছে ১২ মাসে একই ধারা বজায় থাকার ব্যাপারে আশাবাদী নির্বাহীরা। এমনকি গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে বিনিয়োগে উন্নতির ব্যাপারে আশাবাদী ৯১ শতাংশ নির্বাহী।
প্রায় ৬৪ শতাংশ নির্বাহীর ধারণা, মুনাফা অর্জনে কিছু প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতে পারে। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে নেয়া নানা পদক্ষেপের ফলে সে সমস্যাও থাকছে না। যেমন সম্প্রতি কাতার ভেঞ্চার মার্কেট উদ্বোধন করা হয়েছে, এর প্রধান লক্ষ্য এসএমই খাতের উন্নয়ন। এছাড়া দেশটির অর্থনীতিতে উদ্ভাবন ও পুঁজির জন্য কাতার ফিনটেক হাব উšে§াচন করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ৮২ শতাংশ নির্বাহীর বিশ্বাস, ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজনের মধ্য দিয়ে কাতার ‘শক্তিশালী’ অবস্থান থেকে ‘অতি শক্তিশালী’ হয়েছে। এতে দেশটি বৈশ্বিক পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হবে। ৫৫ শতাংশ নির্বাহী জানিয়েছেন, ফুটবল টুর্নামেন্ট ঘিরে পর্যটন, আতিথেয়তা ও আবাসন খাতে বিনিয়োগ বেড়েছে।
ফুটবল বিশ্বকাপ উপলক্ষে নর্থ ফিল্ড সাউথ (এনএফএস) সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়েছে। এ কারণে ২০৩০ সালে এশিয়ান গেমসের আয়োজন করতে আলাদা সম্প্রসারণের দরকার পড়বে না। এছাড়া হাইড্রোকার্বন থেকে অর্থনীতিকে দূরে রাখতে বৈচিত্র্যময় করার কৌশলগত জাতীয় লক্ষ্য বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং কাতার বিনিয়োগ গন্তব্য হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
আম্মার বলেন, কোনো সন্দেহ নেই যে, ফুটবল বিশ্বকাপ দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিশ্বকাপের চূড়ান্ত বাঁশি বাজার পরও যা অব্যাহত থাকবে।