নয়াপল্টনে পুলিশ বাধ্য হয়ে ‘বুলেট’ ছুড়েছে; স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকার নয়াপল্টনে সহিংসতার জন্য বিএনপিকেই দায়ী করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেছেন, সেখানে ‘বাধ্য হয়েই’ বুলেট ছুড়তে হয়েছে পুলিশকে। বিএনপিকে হুঁশিয়ার করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেছেন, কোনোভাবেই সড়কে সমাবেশ করতে দেয়া হবে না। ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ ঘিরে উত্তাপ ছড়ানোর মধ্যে গত বুধবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হওয়া দলটির নেতাকর্মীদের ওপর চড়াও হয় পুলিশ। সংঘর্ষে এক বিএনপি সমর্থক নিহত এবং অনেকে আহত হন। এরপর পুলিশ বিএনপি কার্যালয়ে ঢুকে দলটির ৩ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে।

অভিযানের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছিলেন, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে জড়ো হয়েছিল বিএনপির নেতাকর্মীরা, তাদের কার্যালয় থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে হাতবোমাও ছোড়া হয়। সেই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, পুলিশ কার্যালয়ে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা নিয়েই এসেছিল এবং তারাই হাতবোমা রেখে এখন বিএনপিকে দায়ী করছে।

সংঘর্ষে আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে গতকাল রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে গিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল। তিনি সেখানে সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারা (বিএনপিকর্মী) ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেছে, বোমা মেরেছে। পুলিশের পদক্ষেপ নেয়া ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। পুলিশ বাধ্য হয়ে বুলেট ছুড়েছে। কাঁদানে গ্যাস মেরেছে।’

গত বুধবারের সংঘর্ষে ৪৯ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানানো হয়। তাদের মধ্যে ১৬ জন পুলিশ হাসপাতালে আর একজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

একটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে ঢোকার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ককটেল বোমা মেরেছে। তাই বিএনপি অফিসে তল্লাশি চালানো হয়। বিএনপি কার্যালয় থেকে বিপুল চালের বস্তা ও পানির বোতল উদ্ধারের বিষয়টি তুলে তিনি বলেন, এত বিশাল চাল, ডাল পানির বোতল আনার কারণ কী? এর পেছনের কারণ বিএনপি সমাবেশের নামে রাস্তায় বসে পড়বে, এখন তাই শুনছি।

১০ ডিসেম্বর বিএনপি ঢাকায় সমাবেশ ডেকে সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীদের জড়ো করে অস্থিরতা তৈরির পাঁয়তারা করছিল বলে পুলিশের অভিযোগ। অন্যদিকে বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস বলেছিলেন, তাদের নেতাকর্মীরা সমাবেশ করেই ঘরে ফিরে যাবেন। বিএনপিকে এ সমাবেশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করতে পুলিশ বললেও তারা সেখানে যেতে নারাজ। দলটির পক্ষ থেকে নয়াপল্টনেই সমাবেশ করার কথা বলা হচ্ছে।

আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, বিএনপির জন্য ছাত্রলীগের সম্মেলন আগায় আনতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। অথচ তারা ভালো জায়গা ছেড়ে রাস্তায় করতে চায়। রাস্তায় সমাবেশ হবে না। বিএনপির কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করা নিষিদ্ধ হবে কি নাÑজানতে চাইলে তিনি বলেন, রাস্তায় সমাবেশ করতে কোনোভাবেই দেয়া হবে না।

এদিকে গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে নয়াপল্টনের বিএনপির কার্যালয়ে সামনে উভয় পাশের সড়কের ব্যারিকেড তুলে নিয়েছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, জনসাধারণের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে ব্যারিকেড খুলে দেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। ব্যারিকেড তুলে নিলেও সড়কের উভয় পাশে অনেক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। আর বিভিন্ন অলিগলির মুখেও রয়েছে অনেক পুলিশ সদস্য।