সমাবেশ নিয়ে রাজনৈতিক সহিংসতা কাম্য নয়

হিংস্রতা নয়, সমঝোতার রাজনীতিই কাম্য। এটি সবারই প্রত্যাশা। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সমঝোতা করবে কে, কীসের ভিত্তিতে সমঝোতা হবে। অনেক বিষয়েই তো মতবিরোধ। যেমন, এক পক্ষ বলছে, গণতান্ত্রিক সরকার ও গণতন্ত্র আছে বলেই উন্নয়ন হচ্ছে। অন্য পক্ষ বলছে, ‘সত্যিই কি গণতন্ত্র আছে! ২০১৪ ও ২০১৮ সালে কি নাগরিকরা ভোট দিতে পেরেছেন?’ কভিড মহামারির অভিঘাত এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক ব্যবস্থা। তাই বলে কি গণতন্ত্রও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। স্বচ্ছতা, নৈতিকতা না থাকলে মানুষ হিসেবে, সভ্য জাতি হিসেবে আমরা পিছিয়ে থাকব। রাজনৈতিক সংঘাত ছড়িয়ে পড়লে দেশের অর্থনৈতিক সংকট অধিকতর ভয়াবহ রূপ পরিগ্রহ করবে, যা দেশ-জাতির জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না।

কেউ নিজের মতো করে বলছেন, অর্থনীতি যদি ভালো থাকে, মানুষের আয়ের উপায় ও ক্ষুধা নিবারণ নিশ্চিত করা যায়; তখন রাজনৈতিক সহিংসতা খুব একটা হালে পানি পায় না। এমন বক্তব্যের নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দেয়া হয়েছে বলেই আমরা মনে করি। এরা আকারে-প্রকারে বলতে চান, ক্রান্তিকালে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বেশি দরকার। তাদের ব্যক্তিগত মত জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়া কেন? স্থিতিশীলতার কথা বলে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা উপেক্ষা করা কি ঠিক! ইদানীং শোনা যাচ্ছে, বিশেষ ভবনের দুর্নীতির বিচার করা হবে। সাধারণ মানুষ বলছে, বর্তমানে যে দুর্নীতি-অরাজকতা চলছে; তার বিচার এড়ানোর জন্য কৌশলে আগের অনিয়মের কথা সামনে আনা হচ্ছে। বিষয়টি এমন দাঁড়াচ্ছে, আমাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বললে তোমাদের দুর্নীতির বিচার করেই ছাড়ব!

একশ্রেণির শিক্ষাবিদ রাখঢাক না করেই বলছেন, বিশ্বব্যাপী সম্ভাব্য মহামন্দার পূর্বাভাসকে আমলে না নিয়ে রাজপথ দখলের পাল্টাপাল্টি হুমকি ক্ষমতার বলয়কে কুক্ষিগত করার অপকৌশল সর্বত্রই প্রত্যাখ্যাত। ডিসেম্বর দেশ ও জনগণের সর্বোচ্চ ত্যাগ-অর্জনের মাস, বিজয় অর্জনের মাস। বিজয়ের মাসে কেন একটি দল সমাবেশ করতে পারবে না। কেউ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে চাইলে আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। কিন্তু রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে ভিন্নতা, নৈতিকতা ও ন্যায্যতা নয়।

অতি সম্প্রতি বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীরা লাঠি নিয়ে দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন। এটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ। ২০০৬ সালে একটি রাজনৈতিক জোটের আহূত দেশব্যাপী অবরোধকে কেন্দ্র করে গোটা দেশ রক্তাক্ত হয়ে উঠেছিল। বিশেষ করে রাজধানীতে সংঘর্ষ রীতিমতো যুদ্ধে রূপ নিয়েছিল। কয়েকজন মারাও গিয়েছিলেন। রাজনীতিতে অবশ্যই প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শত্রু বিবেচনা করে হামলে পড়া গণতান্ত্রিক মানসিকতা নয়। সরকারের ধারণা, এবার বিএনপি মাঠে জনপ্রিয়তা দেখাতে পারলে সরকারকে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত একটা চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। তাই বিএনপিকে সমাবেশের মতো একটি রাজনৈতিক কর্মসূচিকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে ফেলেছে। এখন সে ধরনের অবস্থা সৃষ্টির আশঙ্কা দিয়েছে। শান্তিকামী মানুষের প্রত্যাশা রাজনীতি নিয়ে সংঘাত-সহিংসতা পরিহার করে রাজনৈতিক দলগুলো জনকল্যাণে পদক্ষেপ নেবে।