শেয়ার বিজ ডেস্ক: নেপালের কর্তৃপক্ষ প্রায় দেড় দশক পর অর্থনীতি চাঙ্গা করতে রাত্রিকালীন ব্যবসার শুরুর জন্য একটি ‘উদার নীতি’ গ্রহণ করেছে। এর আওতায় রাতের ব্যবসাগুলো বিকাশে সহায়তা করা হবে। কর্তৃপক্ষ মনে করছে, এতে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়বে। খবর: দ্য কাঠমান্ডু টাইমস।
কাঠমান্ডুর প্রধান জেলা কর্মকর্তা ঘনশ্যাম উপাধ্যায় বলেন, রাজধানী ঘিরে এ রাত্রিকালীন ব্যবসা পরিচালনা করা হবে এবং এজন্য সময়সূচি নির্ধারণের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে কিছু সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অ্যালকোহলের দোকানগুলোকে এখন থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখার অনুমতি দেয়া হয়েছে। একইভাবে রেস্তোরাঁগুলো মধ্যরাত (রাত ১২টা পর্যন্ত) খোলা রাখা যাবে এবং ড্যান্সবার ও ক্লাবগুলো ভোর ৪টা পর্যন্ত চালু রাখার অনুমতি দেয়া হয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কারণ স্থানীয় অর্থনীতিতে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে। তবে নীতিটিতে এখনও সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘক্ষণ খোলা থাকবে, যাতে পর্যটন খাতের সম্প্রসারণ হবে এবং চাকরির সুযোগ বাড়বে, বলেছেন উপাধ্যায়।
২০২০ সালে কভিড-১৯ মহামারির শুরু থেকে নেপালের অর্থনীতি স্থবির হয়ে রয়েছে। অর্থনীতির বেশিরভাগ সূচক গড়ের চেয়ে নিচে রয়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটে। যুদ্ধের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মূল্যস্ফীতি বাড়ে এবং নেপালও একই পরিস্থিতির শিকার। এ কারণে অন্যান্য দেশের মতো নেপালের পর্যটন খাতেও ধস নামে।
উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে নেপালের কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন ধরে রাত্রীকালিন ব্যবসা চালু করার চেষ্টা করছে। নানা কারণ দেখিয়ে বেশ কয়েকবার পদক্ষেপ নিয়েও পিছিয়ে আসে তারা। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ নিরাপত্তা। সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে জেলাগুলোয় বিরাজমান নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশজুড়ে রাত্রিকালীন ব্যবসা চালুর অনুমোদন করেছে।
মন্ত্রণালয়ের সহকারী মুখপাত্র বসন্ত ভট্টরাই বলেন, যারা রাতে ব্যবসা পরিচালনা করতে চায়, তাদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য আমরা দেশের সব নিরাপত্তা এজেন্সিকে কাজ করতে বলেছি। ব্যবসায়ীদের অনুরোধের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট জেলার নিরাপত্তা এজেন্সিগুলো রাতে ব্যবসা পরিচালনার অনুমতি দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
রাত্রিকালীন ব্যবসা নিরাপদে পরিচালনা করা উচিত, যোগ করেন ভট্টরাই।
সাধারণত, সন্ধ্যা ৭টায় নেপালের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠাগুলো বন্ধ হয়ে যায়, রাজধানীতে এক ঘণ্টা বাড়িয়ে রাত ৮টায় বন্ধ করা হয়। এর অর্থ রাতে কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকে না। ইতিহাস বলে, রাজধানীর থামেলজুড়ে নাইটলাইফ চলতে থাকে। তবে কিছু পানশালা বাদে রাত ১০টার আগে থামেলও ঘুমিয়ে পড়ে। কর্তৃপক্ষ বলেছে, নিরাপত্তার কারণে দোকানগুলো, রেস্তোরাঁগুলো ও পানশালাগুলো ১০টার আগে বন্ধ রাখা হয়।
প্রসঙ্গত ১৯৯৬ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত নেপালে জরুরি অবস্থা চলে। এতে প্রায় ১৭ হাজার মানুষ নিহত হয়। দ্বিতীয় দফার জনঅন্তোষ শুরু হয় ২০০৬ সালের শেষের দিকে, যা চলে ২০০৭ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত। এ সময় প্রায় ১৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকত দেশটি। এর পর নিরাপত্তার স্বার্থে দেশটির নাইটলাইফ বাতিল করা হয়।
তবে সেই পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে এবং জনজীবনে অসন্তোষ নেই বললে চলে। দীর্ঘদিনের রূপান্তরের পর দেশটি পর্যটন খাতের ওপর নির্ভর করে অর্থনীতির সম্প্রসারণে চেষ্টা করছে।
নেপালের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ মধ্যরাত পর্যন্ত তেরাইয়ের সব বিমানবন্দর চালু রেখেছে, এর অর্থ তারা ১৮ ঘণ্টা বিমান পরিচালনা করছে। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের নয়টি এয়ারপোর্টের মধ্যে সাতটিই এখন রাতে ফ্লাইট পরিচালনায় সক্ষম। এজন্য সর্বশেষ প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে। অতীতে প্রযুক্তির অভাবে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বিকাল ৫টার মধ্যে বন্ধ করা হতো।
পর্যটন খাতের ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিমানবন্দর দীর্ঘ সময়ের জন্য চালু রাখার অর্থ, দোকান, রেস্তোরাঁ, হোটেল, ট্যাক্সি, গণপরিবহন একত্রে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ কেশব আচার্য বলেন, এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। আমি বলতে চাই, এটা যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত।