অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা

বিশ্ব অর্থনীতি নতুন বছরে আরও খারাপ হতে পারে

শেয়ার বিজ ডেস্ক: কভিড পরিস্থিতি, যুদ্ধবিগ্রহ, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা কারণে চলতি ২০২২ সালটি বিশ্ব অর্থনীতির জন্য সুখকর ছিল না। আর কয়েক দিন পর আসছে নতুন বছর ২০২৩ সাল। নতুন করে চীনে কভিড সংক্রমণ, রেকর্ড মূল্যস্ফীতি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধসহ বিভিন্ন কারণে নতুন বছরটিতে মন্দা চলে আসতে পারে। অর্থনীতিবিদরা হুশিয়ার করে বলছেন, সামনের বছরে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। এজন্য অর্থনীতিবিদরা ২০২৩ সালের আরও বিষণœতার জন্য প্রস্তুত হতে বলেছেন।  খবর: এএফপি, এনডিটিভি।

২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী দেখা দেয় কভিড মহামারি। এতে করে থমকে যায় বিশ্ব অর্থনীতির চাকা। অনেকেই ভেবেছিল ২০২২ সালটি হবে ঘুরে দাঁড়ানোর বছর। কিন্তু এ বছর বিশ্ব দেখল রেকর্ড মূল্যস্ফীতি, বড় বড় প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট বিপর্যয়। ইতিহাসবিদ অ্যাডাম ট্রোজের মতে, এটি ছিল একটি ‘পলিক্রাইসিস’ বছর। এখন সামনের বছরে এর চেয়েও খারাপ পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকতে বলছেন অর্থনীতিবিদরা।

আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সামষ্টিক অর্থনীতি বিষয়ের অধ্যাপক রোয়েল বিটসমা বলেছেন, ‘এ শতকের শুরুতে অসংখ্য সংকট শুরু হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এমন কঠিন পরিস্থিতি আমরা আর কখনও দেখিনি।’

কভিডে বিপর্যস্ত ২০২০ সাল শেষে বিশ্ব যখন ২০২১ সালে পা দিল, তখন বাড়তে থাকল জিনিসপত্রের দাম, দেখা দিল রেকর্ড মূল্যস্ফীতি। অর্থনীতিবিদরা বলেছিলেন, এ মূল্যস্ফীতি সাময়িক সময়ের জন্য। দ্রুতই এটি কমে যাবে। কিন্তু ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করার পর বিশ্বব্যাপী খাদ্য ও জ্বালানির দাম আকাশচুম্বী হলো। বিশ্বের অনেক দেশ এখন মূল্যস্ফীতির সঙ্গে লড়াই করছে। জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও সে অনুযায়ী বেতন না বাড়ায় এখন অর্থ খরচের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

ফ্রাঙ্কফুর্ট ক্রিসমাস মার্কেটের ব্যবসায়ী নিকোলাস জানান, ক্রিম থেকে ওয়াইন, বিদ্যুৎ সবকিছুই আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে সুদের হার বাড়িয়েছে। এতে করে বিশ্বব্যাপী বেড়েছে মন্দা দেখা দেয়ার শঙ্কা। কারণ সুদের হার বাড়ানোর কারণে মানুষ ব্যাংক থেকে ঋণ কম নেবে। এতে করে ধীর হয়ে আসবে অর্থনৈতিক কার্যক্রম।

অরগানাইজেশন ফর ইকোনমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) জানিয়েছে, বিশ্বের ২০ উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে এ বছরের শেষ পর্যন্ত খুচরা পণ্যের দাম আট ভাগ বৃদ্ধি পাবে। পরের বছরের শুরুতে তা ৫ দশমিক ৫ ভাগে নেমে আসতে পারে। ওইসিডি বিশ্বের সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, তারা যেন সাধারণ মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসে।

জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব যেন সাধারণ মানুষের ওপর না পড়ে, সে চেষ্টা চালাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৭টি দেশ। এজন্য ৬৭৪ বিলিয়ন ইউরোর সহায়তা প্যাকেজ হাতে নিয়েছে তারা। এর মধ্যে জার্মানি নিজ দেশের নাগরিকদের জন্য খরচ করবে ২৬৪ বিলিয়ন ইউরো। কারণ রাশিয়ার জ্বালানির ওপর অতি নির্ভরশীল জার্মানিই সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছে।

ইসিবির প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিনা লাগার্দে ইউরোজনে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় সতর্ক করে বলছেন, ইসিবি তার ‘কঠোর নীতি’ বজায় রাখবে।

জানা গেছে, জার্মানিতে এখন প্রতি দুজনের মধ্যে একজন ভেবেচিন্তে খরচ করছে। তারা প্রয়োজনীয় পণ্যটি আগে বেছে নিচ্ছে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, ইউরোজনের অন্যতম শক্তিশালী জার্মানি ও ইতালি মন্দায় পড়বে। যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি এরই মধ্যে সংকুচিত হচ্ছে। রেটিং এজেন্সি এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল ২০২৩ সালের জন্য ইউরোজোনে ‘স্থবিরতা’র পূর্ভাবাস দিয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এখনও আশা করছে, ২০২৩ সালে ২ দশমিক ৭ ভাগ হারে অর্থনৈতিক পরিধি বাড়বে। ওইসিডির মতে, এটি হতে পারে ২ দশমিক ২ ভাগ।

এছাড়া প্রাকৃতিক বিপর্যয়ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ২৬৮ বিলিয়ন ডলারের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে বন্যার কারণে শুধু পাকিস্তানই ৩০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।