নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষ ও উত্তেজনার মধ্যে গতকাল শুক্রবার ঢাকার সড়কে কমেছে যাত্রী ও গণপরিবহন। মানুষের চাপ না থাকায় দূরপাল্লার বাসও তেমন ছেড়ে যায়নি। ‘চাপা উদ্বেগের’ মধ্যে ঢাকার ভেতরে এবং প্রবেশপথে টহল ও তল্লাশি চৌকিতে সক্রিয় দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। ‘অঘোষিত শঙ্কায়’ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে নজরদারি বাড়ানোর কথা বলছেন তারা।
গতকাল শুক্রবার মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, সায়েন্সল্যাব, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, গুলিস্তান, আরামবাগ, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, মহাখালী ও ফার্মগেট এলাকায় দুপুর পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছেÑযানবাহন চলাচল তেমন নেই। যেসব বাস চলছে, যাত্রী পাচ্ছে না তেমন।
গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে উত্তরবঙ্গের দিকে দূরপাল্লার বাস তেমন ছাড়েনি; আবার ওই অঞ্চল থেকেও ঢাকায় বাস ঢুকেছে কম। বেলা ১টায় টার্মিনালের হানিফ পরিবহনের কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা মো. লালন বলেন, অন্যান্য দিন এ সময় পাঁচটা গাড়ি যেত। আজ প্যাসেঞ্জার নেই, তাই একটা গাড়ি ছেড়েছে। গাবতলীতে ২০টি গাড়ি আসার কথা, আসছে দুটা।
শ্যামলী এনআর ট্রাভেলসের টিকিট বিক্রেতা নাজমুল হাসান মন্টু বলেন, উত্তরবঙ্গের ২০ জেলায় আমাদের ১০ রুটে গাড়ি চলে। দুপুর ১২টা পযন্ত ২০টি গাড়ি ছেড়ে যাওয়ার কথা। যাত্রী না থাকায় মাত্র পাঁচটি গাড়ি ছেড়েছে।
গাবতলী পর্বত সিনেমা হলের সামনেও দারুস সালাম থানার একটা স্থায়ী চেক পোস্টে তল্লাশি চলছিল। সেখানে দায়িত্ব পালন করা এসআই বায়েজীদ বলেন, এটা স্থায়ী চেকপোস্ট। আমরা নিয়মিত বসি, প্রয়োজনে তল্লাশি করি। এখন উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আরও সতর্ক রয়েছি।
গাবতলী টার্মিনালে কথা হয় আইনুল হোসেন নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে, যিনি বগুড়া থেকে ঢাকায় এসেছিলেন। তিনি বলেন, বগুড়া থেকে এসেছি বুধবারে। আরও দুদিন থাকার কথা ছিল। যে পরিস্থিতি চলছে, তাতে ভয়ে বাড়ি চলে যাচ্ছি।
উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকার প্রবেশপথ আমিন বাজারে তল্লাশি চৌকি বসিয়েছে পুলিশ। শুক্রবার সকাল থেকে সেখানে তল্লাশি চালানোর কথা জানান সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) আব্দুর রাশীদ। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জনগণের নিরাপত্তার জন্য তল্লাশি করা হচ্ছেÑকেউ যেন নাশকতা করতে না পারে।
শুরু থেকেই ঢাকায় ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ নয়াপল্টনে করার কথা জানিয়ে আসছিল বিএনপি। তবে পুলিশ সোওরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছিল। এ নিয়ে অনড় অবস্থানের মধ্যেই বুধবার সংঘর্ষের পর বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বিএনপি নেতারা। বিকল্প স্থানের বিষয়ে তারা আলাপ করেন। এ বিকল্প হিসাবে বিএনপি কমলাপুরের খেলার মাঠ চাইলেও তাতে সায় মেলেনি পুলিশের পক্ষ থেকে। বরং মিরপুর বাঙলা কলেজ মাঠে বিএনপিকে সমাবেশ করার কথা বলেছিল পুুলিশ। তবে সবশেষে রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠ ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছে বিএনপি, সেখানেই সমাবেশ করবে দলটি।
এদিকে মিরপুরে বিএনপির সমাবেশের খবরের পর শুক্রবার দুপুরে ওই এলাকায় যান চলাচল কমে যায়। সড়কে বাসের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে দেখা যায় যাত্রীদের। মিরপুরের কাজীপাড়া এলাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিপণন বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, অফিসের কাজে মানিকগঞ্জ গিয়েছিলাম। গাড়ি পেতে অনেক কষ্ট হলো। মহাখালী যাব, ২০ মিনিট হবে অপেক্ষা করছি। এই রুটের গাড়িই পাচ্ছি না।
মিরপুর-কমলাপুর রুটে চলাচলকারী আয়াত গাড়ির হেলপার সালাউদ্দিন বলেন, গাড়িঘোড়া ভাঙচুরের ভয়ে অনেকে গাড়ি বের করেনি। এজন্য রাস্তায় গাড়ি কম। এখনও কোনো অস্থিরতা দেখিনি। ভেজাল দেখলে বন্ধ করে দেব।
মোহাম্মপুর বাসস্ট্যান্ডেও তুলনামূলকভাবে গণপরিবহন কম। সকালে বিআরটিসি বাসে করে মোহাম্মদপুর থেকে বাড্ডা যাচ্ছিলেন জাহিদুর। তিনি বলেন, জরুরি কাজে বাড্ডা যাচ্ছি। গাড়ি পেতেও ঝামেলা, আবার সিএনজিতে ভাড়াও বেশি চায়। অনেকটা ফাঁকা বাস পেয়ে এ গাড়িতে উঠলাম। দ্রুত বাস ছেড়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায়ও লোকসমাগম তেমন চোখে পড়েনি। সড়কে পুলিশ ও র্যাবকে দেখা গেছে টহল দিতে। র্যাবের গাড়িবহর পল্টন ও দৈনিক বাংলা মোড় হয়ে মতিঝিলের দিকে যেতে দেখা যায়। মোড়ে মোড়ে ছিল পুলিশের সতর্ক পাহারা। নটরডেম কলেজের সামনে র্যাবের দল যানবাহন থামিয়ে তল্লাশি করছিল।
গুলিস্তানে ভ্রাম্যমাণ হকারদের ভ্যানে করে শীতের কাপড় বিক্রি করতে দেখা গেছে। র্যাবের টহল টিমকে দেখে তড়িঘড়ি করে ভ্যান গুটিয়ে নিলেও ১০ মিনিট পরই আবার বসে যাচ্ছেন, তবে ক্রেতা কম।
ভ্রাম্যমাণ হকার শহীদ মিয়া বলেন, ‘রাস্তায় আওন রিস্ক জাইন্নাও আইছি। ইনকাম না হইলে বউ-বাচ্চা লইয়া খামু কী? যা আছে কপালে, আল্লার নামে বাইর অইছি।’ মহাখালী এলাকায়ও অন্যদিনের চেয়ে যানবাহন অনেক কম চলাচল করছে। মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কিছু বাস ছেড়ে যাচ্ছে, তবে যাত্রী নেই।
ময়মনসিংহগামী শৌখিন পরিবহনের বাসের হেলপার শামসুদ্দিন বলেন, শুক্রবার সকালে অনেক যাত্রী হয় আমাদের লাইনে। কিন্তু আজ খালি, মানুষ নেই। ঢাকার প্রবেশপথ ৩০০ ফুট সড়কের শেখ হাসিনা ক্রিকেট স্টেডিয়াম এবং মস্তুল এলাকায় দেখা যায় পুলিশের টহল। প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন পরিবহন থামিয়ে তল্লাশ করছিলেন তারা।