নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে রাজশাহীগামী সিল্ক সিটি এক্সপ্রেস ট্রেনে বেশ তড়িঘড়ি করে উঠছিলেন ফিরোজ কাদের; খানিকটা দেরি করা ফেলায় এমনিতেই ট্রেন ধরার তাড়া ছিল, এর মধ্যে স্টেশনে ঢোকার মুহূর্তেই পুলিশ তাকে থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
পুলিশ কী জানতে চেয়েছে এমন প্রশ্নে ফিরোজ বলেন, ‘আমার টিকিট আগেই কাটা ছিল। স্টেশনে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশের একজন আমার টিকিট চেক করলেন। কোথায় যাব, কেন যাব, কেন ঢাকায় এসেছিলামÑএসব প্রশ্ন করেছেন। এটা তাদের কাজেরই অংশ।’
ঢাকায় দাপ্তরিক কিছু কাজে আসার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যদিও কাজ শেষ হয়নি, তবে পরিস্থিতি বিবেচনা করে চলে যাচ্ছি। সামনের সপ্তাহে এসে কাজ শেষ করব।’
১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকার সড়কে যেমন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টহল ও তল্লাশি বেড়েছে, গতকাল কমলাপুর রেলস্টেশনেও সেই চিত্র দেখা গেছে।
স্টেশনে পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। স্টেশনের ভেতরে-বাইরে সরব উপস্থিতি দেখা গেছে পুলিশ সদস্যদের। কিন্তু অন্যান্য দিনের স্টেশনে ছিল না তেমন। তবে এদিন ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছেড়ে যাওয়া এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকায় আসা ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক ছিল বলে জানান কমলাপুর রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক মাসুদ সারওয়ার।
তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ট্রেন ঠিক সময়ে স্টেশনে এসেছে, পাশাপাশি ঠিক সময়ে স্টেশন ছেড়েছে। অন্যান্য দিনের তুলনায় যাত্রীসংখ্যা অনেকটাই কম বলা যায়।
‘যাত্রীরা আতঙ্কিত হওয়ায় এমনটা হতে পারে। তবে স্টেশনের পরিস্থিতি একদম ঠিকঠাক আছে। কোনোরকম অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এখন পর্যন্ত ঘটেনি।’
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিরাপত্তার স্বার্থে কমলাপুর রেলস্টেশনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের কথা জানান মাসুদ সারওয়ার।
‘আমাদের রেলওয়ে পুলিশসহ পুলিশের অন্যান্য বাহিনীও তৎপর আছে। ক্ষেত্রবিশেষে সন্দেহজনক কাউকে পেলে জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশি করা হচ্ছে।’
গতকাল কমলাপুর স্টেশনে দেখা যায়, বাইরে একসঙ্গে বেশি মানুষকে জটলা করতে দিচ্ছে না পুলিশ। এছাড়া স্টেশনের ভেতরে রেলওয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি পুলিশ বুথেও পর্যবেক্ষক টিম কাজ করছে।
কমলাপুর রেলওয়ে থানার ওসি ফেরদৌস বিশ্বাস বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকলে আমরা তল্লাশি করি। নিয়মিত কাজের অংশ হিসাবেই সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশি করা হচ্ছে। তবে কাউকে হয়রানি করা পুলিশের উদ্দেশ্য নয়। এ অবস্থায় আমরা যাত্রীদের কাছ থেকেও সহযোগিতা আশা করছি।’
স্টেশনে আসা যাত্রীরা জানান, শনিবার বিএনপির সমাবেশ ঘিরে ঢাকার পরিস্থিতি ‘খারাপ’ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে তাদের মধ্যে। এমন আশঙ্কা থেকেই জরুরি কাজে ঢাকায় এলেও তারা শুক্রবার বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।
বেলা দেড়টায় স্টেশনের ৭ নম্বর প্ল্যাটফর্মে এসে পৌঁছায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা রাজশাহী কমিউটর ট্রেন, সেখানে যাত্রীদের সংখ্যা ছিল যেন হাতে গোনা।
ওই ট্রেনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসেন ধানমন্ডির বাসিন্দা আরিফ আল মান্নান। রাজধানীর একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কাজ করেন তিনি। ছুটি নিয়ে তিন দিন আগে গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে গিয়েছিলেন। শনিবার ফেরার কথা থাকলেও ফিরেছেন এক দিন আগে।
‘ভেবেছিলাম কাল (শনিবার) আসব। কিন্তু রোববার থেকে অফিস। শনিবার যদি পরিস্থিতি খারাপ হয়, সেই কথা ভেবে আজকেই চলে এসেছি। তবে ট্রেন বলতে গেলে আজ ফাঁকাই ছিল।’
তবে অন্যদিনের চেয়ে গতকাল যাত্রীসংখ্যা খানিকটা কমই থাকে বলে জানান কমলাপুর স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম স্টেশন মাস্টার শাহাদাত হোসেন। তার দাবি, ‘শুক্রবার যাত্রীসংখ্যা সবসময়ই কম থাকে। আজকে প্রত্যেকটা ট্রেন নিজেদের শিডিউল অনুযায়ী একদম ঠিক সময়ে এসেছে এবং ঠিক সময়ে প্ল্যাটফর্ম ছেড়েছে। ট্রেনের যাত্রীসংখ্যাও স্বাভাবিক আছে।