মেট্রোরেলের ভাড়া ৫০ শতাংশ কমানোর দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: যাত্রীদের মতামত ও কোনো পর্যবেক্ষণ ছাড়া ঢাকার সিটি বাসের দ্বিগুণ হারে মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণ অযৌক্তিক ও গণবিরোধী আখ্যা দিয়ে চালুর আগে মেট্রোরেলের কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া ও সর্বনি¤œ ভাড়া ৫০ শতাংশ কমানোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

গতকাল শনিবার সকালে নগরীর সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ দাবি জানান। তিনি বলেন, ঢাকা ও পশ্চিমবঙ্গে কলকাতা শহরের আর্থসামাজিক অবস্থা, মাথাপিছু আয় ও গড় জিডিপি বিবেচনায় নিলে প্রায় সব সূচকে সমান অবস্থান রয়েছে। অথচ কলকাতার মেট্রোরেলের তুলনায় ঢাকার মেট্রোরেলে কিলোমিটার প্রতি ভাড়া দ্বিগুণ এবং সর্বনি¤œ ভাড়া ৪ গুণ।

ফলে যাত্রীস্বার্থ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দাবি করে তিনি বলেন, ‘বেসরকারি লক্কড়-ঝক্কড় বাস কোম্পানিগুলো লাভবান হবে, সামর্থ্যহীন যাত্রী সাধারণ মেট্রোরেল ব্যবহারের সক্ষমতা হারাবে; ফলে মেট্রোরেলে যাত্রী পরিবহনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হবে।’

লিখিত বক্তব্যে যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, ভারতের কলকাতায় মেট্রোরেলের ভাড়া সড়ক পরিবহনের তুলনায় সবচেয়ে কম। সেটা কলকাতা মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ তাদের ওয়েবসাইটে স্পষ্ট উল্লেখ করে রেখেছে। কলকাতায় মেট্রোরেলের সর্বনি¤œ ভাড়া ৫ রুপি বা ৬ টাকা। ঢাকায় মেট্রোরেলের সর্বনি¤œ ভাড়া ২০ টাকা। কলকাতায় মেট্রোরেলের সর্বোচ্চ ভাড়া ২৫ রুপি বা ৩১ টাকা। ঢাকায় মেট্রোরেলের সর্বোচ্চ ভাড়া ১০০ টাকা। কলকাতায় ৫ রুপি বা ৬ টাকা দিয়ে ২ কিলোমিটার পর্যন্ত যাতায়াত করা যায়, ১০ রুপিতে ৫ কিলোমিটার, ১৫ রুপিতে ১০ কিলোমিটার, ২০ রুপিতে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত যাতায়াত করা যায়। ২০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বের জন্য সর্বোচ্চ ২৫ রুপি বা ৩১ টাকা লাগে। বাংলাদেশে উত্তরা থেকে মতিঝিল ২০ কিলোমিটার পথে মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ টাকা; যা কলকাতার মেট্রোরেলের চেয়ে ৪

গুণ বেশি। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির মেট্রোয় একই দূরত্বে ৪০ রুপি বা ৫০ টাকা লাগে, যা ছুটির দিনে ৩০ রুপিতে নেমে আসে। দিল্লির মেট্রোয় ৩২ কিলোমিটার পথে ৬০ রুপিতে যাতায়াত করা যায়।

এছাড়া পাকিস্তানের লাহোরে অরেঞ্জ লাইন মেট্রোরেলের ভাড়ার সঙ্গে তুলনা করে বলা হয়, সেখানে সর্বনি¤œ ভাড়া পাকিস্তানি ২০ রুপি বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯ টাকা। ২৭ কিলোমিটার দূরত্বের জন্য সর্বোচ্চ ৪০ রুপি বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৮ টাকা লাগে। লাহোরের মেট্রোতে প্রথম ৪ কিলোমিটার ২০ রুপি বা ৯ টাকা। ৫ কিলোমিটার থেকে ৮ কিলোমিটারের জন্য ২৫ রুপি বা ১১ টাকা, ৯ থেকে ১২ কিলোমিটারের জন্য ৩০ রুপি বা ১৪ টাকা লাগে। ১৩ থেকে ১৬ কিলোমিটারের জন্য ৩৫ রুপি বা ১৬ টাকা লাগে। ১৬ থেকে ২৭ কিলোমিটারের জন্য ৪০ রুপি বা ১৮ টাকা লাগে। আগে লাহোর মেট্রোয় যেকোনো দূরত্বে যাতায়াতের জন্য ৪০ রুপি বা ১৮ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা ছিল। এক সমীক্ষায় দেখা যায়, ৮৮ শতাংশ যাত্রীই পুরো ২৭ কিলোমিটারের বদলে প্রথম ১৬ কিলোমিটার অংশে যাতায়াত করেন। তখন মেট্রো কর্তৃপক্ষ যাত্রী সাধারণের সুবিধার্থে এভাবে সø্যাবভিত্তিক ভাড়া নির্ধারণ করে।

বাংলাদেশের মেট্রোরেলে উচ্চ নির্মাণ ব্যয়ের বিষয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী সম্প্রতি নির্মিত এশিয়া মহাদেশের কয়েকটি মেট্রোরেলের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, কলকাতা ও দিল্লি মেট্রোরেলের নির্মাণ ব্যয় কম হওয়ায় এসব রেলে ভাড়াও কম। এ দুটি রেল নির্মাণে ঢাকা থেকে বহুগুণে কম ব্যয় হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ২০১৩ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে নির্মিত ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার নর্থ-সাউথ মেট্রোরেলে প্রতি কিলোমিটারে খরচ হয়েছে ৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ২০১১ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে নির্মিত ভিয়েতনামের হ্যানয় শহরে লাইন-২-এ মেট্রোরেলে প্রতি কিলোমিটারে খরচ হয়েছে ৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। ভারতের দিল্লি লাইন-১ মেট্রোরেল নির্মাণে কিলোমিটার প্রতি খরচ হয়েছে ৫ কোটি ৬ লাখ ডলার। ২০১৫ থেকে ২০২০ সালে নির্মিত পাকিস্তানের লাহোর অরেঞ্জ মেট্রোরেল নির্মাণে কিলোমিটার প্রতি খরচ ৬ কোটি ৬১ লাখ ডলার। অথচ ২০১৭ থেকে ২০২৩ সালে ঢাকা উত্তরা থেকে কমলাপুর ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেলের নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি খরচ হচ্ছে ২৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো প্রতিযোগিতামূলক মূল্যের পরিবর্তে কেন এত উচ্চমূল্যে মেট্রোরেল নির্মাণে খরচ হচ্ছে যাত্রীসাধারণ তা জানতে চায়Ñপ্রশ্ন রেখে মোজাম্মেল হক বলেন, ‘একদিকে মেগা প্রকল্পগুলোয় বেহিসাবি খরচ হচ্ছে, অন্যদিকে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ব্যাংকগুলো খালি করে দিচ্ছে। এর প্রতিটির মাশুল জনগণকে চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে। ফলে আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে চাল, ডাল, তেল, মাছ, মাংস সবকিছুর দাম দ্বিগুণ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তিনগুণেরও বেশি।’