শেয়ার বিজ ডেস্ক: বিদেশ থেকে আমদানি করা ইলেকট্রিক ব্যাটারি সেল ভারতীয় আবহাওয়ার জন্য উপযুক্ত নয়। অতীতে ইলেকট্রিক স্কুটারে বেশ কয়েকবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার এ কথা বলেছে ওলা ইলেকট্রিক কর্তৃপক্ষ। তাই এ ধরনের সমস্যা সমাধানের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল সংস্থাটি। সেই ধারাবাহিকতায় এবার লিথিয়াম আয়ন সেল সম্পর্কে নতুন ঘোষণা করল তারা। ২০২৩ সাল থেকে ভারতে লিথিয়াম আয়ন উৎপাদন শুরুর কথা নিশ্চিত করলেন ওলার কর্ণধার ভাবিশ আগরওয়াল।
ভারতের গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আগামী বছর ওই নতুন সেলের সঙ্গে ওলার প্রথম বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেল বাজারে আসছে।
ইলেকট্রিক ভেহিকেলের (ইভি) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ লিথিয়াম আয়ন সেল, যা এবার ভারতের তামিলনাড়ু অঙ্গরাজ্যের কৃষ্ণগিরির কারখানায় নিজেরাই উৎপাদন শুরু করবে বলে জানিয়েছে ওলা। প্রাথমিক পর্যায়ে তাদের কারখানার সক্ষমতা পাঁচ গিগাওয়াট হবে বলে জানিয়েছেন ভাবিশ। দেশে সেল তৈরির ফলে ব্যাটারি প্যাকের দাম ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। বর্তমানে সংস্থাটি তাদের এস১ ও এস১ প্রো-এর ব্যাটারি দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্থা এলজি চেম থেকে আমদানি করেছে।
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক অতীতে একাধিকবার বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল এস১ ও এস১ প্রো। এ ইলেকট্রিক স্কুটারগুলোয় আগুন লেগে যাওয়া ছাড়াও চলতে চলতে সামনের চাকা খুলে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। যদিও এজন্য কোম্পানির ইলেকট্রিক স্কুটারের জনপ্রিয়তা কমেনি। গত বছর এ দুই মডেল নিজে হাজির হয়েছিল ওলা। তবে এস১ স্কুটার উৎপাদন আপাতত বন্ধ রেখেছে কোম্পানিটি। শুধু এস১ প্রো উৎপাদন করছে ওলা। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে ৭০ হাজারের বেশি এস১ প্রো ইলেকট্রিক স্কুটার (ই-স্কুটার) বিক্রি করেছে। দেশটির বিশ্লেষকরা জানান, অতীতে কেবল একটি মডেল দিয়ে স্কুটার বিক্রিতে এমন সাফল্য আসেনি অন্য কোনো গাড়িনির্মাতা প্রতিষ্ঠানের।
অতীতে এমন নজির ভারতের অন্য কোনো গাড়িনির্মাতা প্রতিষ্ঠানের নেই। ঢিমেতালে যেখানে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো ই-স্কুটার বিক্রি করছে, সেখানে মাত্র একটি মডেল দিয়ে বাজিমাত করেছে ওলা। প্রথম ইউনিট বিক্রি শুরুর সাত মাসের মাথায় প্রতিষ্ঠানটির এস১ প্রো বিক্রি হলো ৭০ হাজারের বেশি। এটাই এখন তাদের ফ্ল্যাগশিপ প্রোডাক্ট। প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৫ আগস্ট লঞ্চ হয়েছিল এ ব্র্যান্ড ওলাএস১ প্রো। দাম রাখা হয়েছিল এক লাখ ৩০ হাজার রুপি। ডেলিভারি শুরু হয় গত ডিসেম্বর মাস থেকে। গুণগত মান ও কারিগরি ত্রুটি নিয়ে একাধিক অভিযোগ সত্ত্বেও বিক্রিতে নজরকাড়া সাফল্য স্বস্তিতে রাখছে ওলাকে।
সাধারণত লিথিয়াম আয়ন সেল চীন, তাইওয়ান, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ভারতের বাজারে প্রবেশ করে। তাই আত্মনির্ভরতার লক্ষ্যে দেশি প্রযুক্তিতে জোর দিতে ব্যাটারির উদ্ভাবন এবং গবেষণার জন্য প্রায় চার হাজার ১৩০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চলেছে ওলা। বেঙ্গালুরুতে এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যাটারি ইনোভেশন সেন্টার গড়ে তুলছে তারা।
গত বৃহস্পতিবার ওলার কর্ণধার ভাবিশ এক সংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের মধ্যে ওলা ইলেকট্রিকের খরচ কমবে এবং লাভবান সংস্থা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবে। ওলা তাদের আসন্ন মোটরসাইকেল ও স্কুটার সাবস্ক্রিপশন প্ল্যানে পরিবর্তন আনার কথা জানিয়েছে।
এদিকে গতকাল রোববার ওলা তাদের নতুন সফটওয়্যার মুভওএস৩ সব স্কুটার ব্যবহারকারীদের জন্য উš§ুক্ত করেছে। এ সফটওয়্যারের নতুন বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে মাল্টিপল প্রোফাইল অ্যাড করার সুবিধা, প্রক্সিমিটি লক-আনলক, হাইপারচার্জিং ও ওয়াই-ফাই কানেক্টিভিটি।
বিগত কয়েক দিনে প্রকাশিত একাধিক রিপোর্টে জানা গেছে, শিগগির আরও কম দামে ইলেকট্রিক স্কুটার আনতে চলেছে ভারতীয় স্টার্ট আপ কোম্পানিটি। ভারতের বাজারে বিপুল পরিমাণে কোনো প্রোডাক্ট বিক্রি করার জন্য দামের দিকে নজর দিতে হবে বলে বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন। তাই মধ্যবিত্তের সাধ্যের মধ্যে ইলেকট্রিক স্কুটার লঞ্চ করার পরিকল্পনা করেছে কোম্পানিটি। চলতি বছর এ মডেল বাজারে আনার পরিকল্পনা ছিল তাদের, যদিও নতুন এ মডেল সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য জানা যায়নি।