শীতে উম্মেষ ঘটুক মানবতার

সারাদেশে শীতের তীব্রতা ক্রমেই বাড়ছে। সেইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ছিন্নমূল মানুষের শীতজনিত দুর্ভোগ। ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতের প্রকোপে মানবেতর জীবনযাপন করছে অসহায় এসব মানুষ। শীতবস্ত্রের অভাবে খড়কুটো দিয়ে আগুন জ্বেলে শীত নিবারণের চেষ্টাও করছে অনেকে। শৈত্যপ্রবাহের রুক্ষতা থেকে রক্ষা পাওয়ার ন্যূনতম ব্যবস্থা না থাকায় কষ্ট কেবল বেড়েই যাচ্ছে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের দুর্ভোগ অসহনীয় অবস্থায় পৌঁছাচ্ছে। শীত নিবারণের পোশাক না থাকায় অনেকে শীতের তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে মারাও যাচ্ছে।

শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বেশিরভাগ এলাকায় কুয়াশাও বাড়ছে। অনেক এলাকায় ঘন কুয়াশা দুপুর পর্যন্ত গড়াচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, আগামী কয়েক দিন এই শৈত্যপ্রবাহ আর কুয়াশা থাকবে। তবে শীতের তীব্রতা দেশের উত্তরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি। প্রচণ্ড শীতের কারণে সেখানকার মানুষ বাইরে বের হতে পারছে না। অচল হয়ে পড়েছে অধিকাংশ এলাকা। শীতের তীব্রতার কারণে নিন্মআয়ের মানুষ, যেমন দিনমজুর যারা দিন আনে দিন খায়, তাদের কাজকর্ম প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। যারা ছিন্নমূল মানুষ, যাদের ঘরবাড়ি নেই, তাদের দুঃখ-কষ্টের যেন শেষ নেই। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের আগুন জ্বালিয়ে রাত কাটাতে হচ্ছে। প্রচণ্ড শীতের কারণে ছিন্নমূল মানুষের মধ্যে যারা শিশু ও বৃদ্ধ তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে রোগব্যাধি। বেশিরভাগ শিশুর নিউমোনিয়া দেখা দিয়েছে। বৃদ্ধরা ভুগছেন শ্বাসকষ্টে।

শীতের তীব্রতাকে উপেক্ষা করার জন্য আমরা রকমারি শীতবস্ত্র পরিধান করছি। কিন্তু আমরা যে পথ দিয়ে প্রতিনিয়ত চলাচল করছি, সেই পথে বসবাসরত মানুষগুলোর দিকে একটু খেয়াল করলে দেখতে পাব শীতের তীব্রতাকে উপেক্ষা করার জন্য তাদের কেউ কেউ একটি চটের বস্তা গায়ে জড়িয়ে শুয়ে রাত কাটানোর জন্য প্রহর গুনছে, কেউ আবার একটি পলিথিন ব্যাগকে আশ্রয় করে শুয়ে আছে, আবার কেউ শীতের তীব্রতাকে মেনে নিয়েই কাঁপতে কাঁপতে ঘুমিয়ে পড়েছে, কেউ আবার শুকনো খড়কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে তাপ পোহাচ্ছে আর অপেক্ষা করছে উত্তপ্ত রবির আলোর জন্য, যা তাদের জন্য একটু উষ্ণতা বয়ে নিয়ে আসবে। সময় এখন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার। শীতের প্রকোপ আরও বাড়ার আগেই সমাজের গরিব ও অসহায় মানুষদের রক্ষায় উদ্যোগ নিতে হবে। শীতার্ত মানুষের জন্য শীতবস্ত্র সরবরাহ অনেকেরই সামর্থ্যরে বাইরে নয়, তবে দরকার সময়োচিত উদ্যোগ গ্রহণ ও এর যথাযথ বাস্তবায়ন। আপনার যৎসামান্য ভালোবাসা ও সহানুভূতিই পারে শীতার্ত মানুষের হƒদয়ে উষ্ণতার পরশ বুলিয়ে দিতে। তাই আসুন নিজ নিজ অবস্থান থেকে শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াই।

মেহেদী হাসান অর্ণব

শিক্ষার্থী, ব্যবস্থাপনা বিভাগ 

সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা