পাকিস্তানকে ৩৬০ মিলিয়ন ইউরো সহায়তার ঘোষণা ফ্রান্সের

শেয়ার বিজ ডেস্ক: চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়া পাকিস্তানকে ৩৬০ মিলিয়ন ইউরো অনুদান হিসেবে দেয়ার ঘোষণা করেছে ফ্রান্স। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের অনুরোধে সাড়া দিয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখো এ ঘোষণা দিয়েছেন। খবর: আল জাজিরা।

দেশের আর্থিক সংকট কাটাতে বিভিন্ন দেশের কাছে অর্থসহায়তা চাইছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। তবে অনেক দেশ তার অনুরোধে সাড়া দেয়নি বলে জানা গিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে এগিয়ে এসেছে ফ্রান্স। দেশটির বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানও যেন পাকিস্তানকে সহায়তার জন্য এগিয়ে আসে সেই অনুরোধও জানিয়েছেন শাহবাজ শরীফ।

গত কয়েক মাস ধরে চরম অর্থনৈতিক দৈন্যদশায় ভুগছে পাকিস্তান। শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যার কারণে দেশটির এক তৃতীয়াংশ মানুষ চরম খাদ্য সংকটে পড়েছেন। ১ হাজার ৭০০ মানুষ বিধ্বংসী বন্যায় প্রাণ হারিয়েছেন। ঘরছাড়া হয়েছেন ৮০ লাখের বেশি মানুষ। বন্যা চলে গিয়ে শীত মৌসুম চলে এলেও বন্যা বিপর্যস্ত এলাকাগুলোয় এখনও পুনর্বাসন ও পুনর্গঠন কাজ শুরু করা যায়নি। পাকিস্তান সরকারের হিসাব অনুসারে, বন্যায় গৃহহীন কয়েক লাখ মানুষের বাড়িঘর নির্মাণ, বিধ্বস্ত কয়েক হাজার কিলোমিটার রাস্তা, রেলপথ নির্মাণের জন্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুনর্গঠনের জন্য ১ হাজার ৬৩০ কোটি ডলার আর্থিক সহায়তা দরকার। বিশেষ করে এ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের দারিদ্র্য দশা থেকে বের করে আনতেও এ অর্থ বিনিয়োগ করা হবে। তাই ক্ষতিগ্রস্ত পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে ইতোমধ্যে জাতিসংঘের কাছে ১৬ বিলিয়ন (১ হাজার ৬০০ কোটি) ডলার সহায়তা চেয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী।

এ জন্য জেনেভায় জাতিসংঘের একটি সম্মেলনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের নেতৃত্বাধীন একটি দল যোগ দিয়েছে। সম্মেলনে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া প্রায় ৪০টি দেশ, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও দাতা সংস্থা এতে যোগ দেয়।

এ সম্মেলনে উপস্থিত দেশগুলোর প্রতিনিধি ও সংস্থাগুলো পাকিস্তানকে ৯ বিলিয়ন (৯০০ কোটি) ডলার সহায়তার অঙ্গীকার করেছে।

ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ডের (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, সংক্ষেপে আইএমএফ) কাছে ১১০ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার আবেদন জানিয়েছেন পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার। যদিও এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। জেনেভার এ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল আইএমএফ’র সঙ্গে বৈঠকে বসবে। তারা পাকিস্তানে বেইল আউট নিয়ে বিষয়ে কথা বলবেন। নানা জটিলতায় আটকে থাকা সেই অর্থ ছাড়ের বিষয়ে কথা বলতে এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। সম্ভব হলে বৈঠক শেষে পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী এ অর্থ নিয়ে দেশে ফিরতে চান।

এদিকে পাকিস্তানে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। আটার কেজি ১৮০ রুপি ছাড়িয়ে গিয়েছে। চাল-ডালও গরিব মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গিয়েছে। এক টুকরো রুটির জন্য হাহাকার করছেন দেশটির অনেক মানুষ। ইতোমধ্যে অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়েছে ২৫ থেকে ৫২ শতাংশ। সবমিলিয়ে দেশটির সাধারণ নাগরিকদের অবস্থা শোচনীয়। পরিস্থিতি সামলানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে সরকার। বিদ্যুৎ সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এসব কারণে ক্রমশ সরকারের বিরুদ্ধে জনরোষ বাড়ছে। এ জনরোষ থেকে ক্ষমতা হারানোর শঙ্কায় জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছে আর্থিক সহায়তা চাইছেন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি শাহবাজ শরীফের অনুরোধে সাড়া দিয়েছে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক। তারা পাকিস্তানকে ৪ দশমিক ২ বিলিয়ন বা ৪২০ কোটি ডলার সহায়তা করবে। বিশ্বব্যাংক দুই বিলিয়ন ডলার বা ২০০ কোটি ডলার সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে। এশিয়ান ইনফ্রাসট্রাকচার ব্যাংক ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার বা ১৫০ কোটি ডলার সহায়তা করবে। এছাড়া সৌদি আরব ১ বিলিয়ন, চীন ১০০ মিলিয়ন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ৯৩ মিলিয়ন, জার্মানি ৮৮ মিলিয়ন, জাপান ৭৭ মিলিয়ন, যুক্তরাজ্য ১০ মিলিয়ন, আজারবাইজান ২ মিলিয়ন ডলার সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে।