মফিজ জোয়ার্দ্দার, চুয়াডাঙ্গা : তীব্র শীতে কাবু হয়ে পড়েছেন চুয়াডাঙ্গাবাসী। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে চুয়াডাঙ্গা জনপদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে তেমন বাইরে বের হচ্ছেন না। ছিন্নমূল ও অসহায় মানুষের দুর্ভোগ চরমে বেড়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের দেখা মিললেও শৈত্যপ্রবাহের কারণে কমেনি শীতের দাপট। ফলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এ এলাকার মানুষ। তীব্র শীত উপেক্ষা করে কাজের সন্ধানে বের হওয়া খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছেন বিপাকে। খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন শীতার্ত মানুষ।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গায় ৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। যা সারাদেশের মধ্যে সর্বনিন্ম তাপমাত্রা। এছাড়া চলতি মৌসুমে এটিই জেলার সর্বনিন্ম তাপমাত্রা।
তীব্র শীতে প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। ফলে সব থেকে বেশি সমস্যায় পড়েছেন দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ। ভোর থেকেই এলাকার বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে ও চায়ের দোকানে শীত নিবারণের চেষ্টায় আগুন জ্বালিয়ে উত্তাপ নিতে দেখা গেছে নি¤œ আয়ের মানুষগুলোকে।
এদিকে তীব্র শীতের কারণে হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে ঠাণ্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা। বিশেষ করে শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা হাসপাতালে ভিড় করছে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে। গত তিন দিনে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে শিশুসহ প্রায় ১৫০০ রোগী ঠাণ্ডাজনিত কারণে আউটডোরে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেন সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো.আতাউর রহমান।
এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে বোরো ধানের বীজতলা ও আলুক্ষেত রক্ষায় বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। ধানের বীজতলা রক্ষায় সকালে চারার ওপর থেকে শিশির সরিয়ে দেয়া, সম্ভব হলে চারা রাতের বেলা ঢেকে দেয়া, বীজতলায় সেচ দিয়ে পরদিন সকালে পানি বের করে দেয়া এবং বীজতলা লাল হলে জিপসাম ও ইউরিয়া সার দেয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আলুক্ষেতে আগামশসা ও নাবিশসা ছত্রাক যাতে না লাগে, সে জন্য ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে বলা হয়েছে। এ জন্য মাঠপর্যায়ে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুভাস চন্দ্র সাহা।
তীব্র শীতে শিশু শিক্ষার্থীরা বেশ কষ্ট পাচ্ছে। ভোরে প্রাইভেট পড়তে আসা কয়েকজন শিক্ষার্থীরা বলেন, ভোরে প্রাইভেটে যেতে ৬-৭ দিন ধরে খুব কষ্ট হচ্ছে। কারণ, আগে ভ্যান কিংবা ইজিবাইকে যাতায়াত করতাম, এখন যাওয়া যাচ্ছে না। প্রচণ্ড শীত সঙ্গে হিমেল বাসাতে হাত-পা বরফ হয়ে যাচ্ছে। তাই এই কদিন হেঁটেই যেতে হচ্ছে। শরীরটাও একটু গরম হচ্ছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতেও লেনদেন অস্বাভাবিক হারে কমে গেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বেলা ১১টার আগে ক্রেতা ও গ্রাহকদের দেখা মিলছে না।
চুয়াডাঙ্গা সরকারি ভিক্টোরিয়া জুবিলি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিলাল হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ে সকালের শিফট শীতের কারণে সাড়ে ৭টা থেকে সোয়া ৮টায় করা হয়েছে। তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত হলেও ওপরের শ্রেণিতে ৫০ শতাংশের কাছাকাছি।
কয়েকজন অভিভাবক বলেন, তীব্র শীতে বাচ্চারা উঠতে চাইছে না। আমরাও জোর করতে পারছি না। এ জন্যই মাঝে মধ্যেই স্কুলে যেতে দেরি হচ্ছে বাচ্চাদের।
গতকাল ভোরে চুয়াডাঙ্গা বড় বাজারে কাজের সন্ধানে আসা কয়েকজন দিনমজুর জানান, তীব্র শীতে হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। যেন বরফ পড়ছে। মনে হচ্ছে একটা আস্ত ফ্রিজের মধ্যে রয়েছি।
তারপরও থেমে নেই কাজ। বাধ্য হয়েই কর্মস্থলে যেতে হচ্ছে। শীতে কাজ না পেয়ে বাড়িতে ফিরতে হচ্ছে অনেকেরই।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আতাউর রহমান বলেন, তীব্র শীতে রোটাভাইরাসের কারণে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বেশিরভাগই শিশু রোগী। শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়াসহ শীতজনিত বিভিন্ন রোগে হাসপাতালের আউটডোরে তিন থেকে চার শতাধিক বয়োবৃদ্ধরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। গত তিন দিনে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে শিশুসহ প্রায় ১৫শ রোগী ঠাণ্ডাজনিত কারণে আউটডোরে চিকিৎসা নিয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রকিবুল হাসান বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় সর্বনিন্ম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৯৭ শতাংশ। যা সারাদেশের মধ্যে সর্বনিন্ম তাপমাত্রা। এ মৌসুমে এটিই জেলার সর্বনিন্ম তাপমাত্রা। শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত আছে।