বেতন বাড়ানোর দাবিতে পর্তুগালে শিক্ষকদের বিক্ষোভ

শেয়ার বিজ ডেস্ক: বেতন বাড়ানো ও উন্নত কর্মপরিবেশের দাবিতে পর্তুগালের রাজধানী লিসবনের সড়কে বিক্ষোভ করেছেন লাখো শিক্ষক ও স্কুলকর্মী। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এর চেয়ে বড় বিক্ষোভ আর দেখা যায়নি। দেশটিতে গত ডিসেম্বর থেকে শিক্ষকরা ধর্মঘট করছেন, ফলে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। খবর: রয়টার্স।

গত শনিবার ইউনিয়ন অব অল এডুকেশন প্রফেশনালসের (স্টপ) আয়োজনে শান্তিপূর্ণভাবে এ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ কর্মসূচিতে বিক্ষোভকারীরা নানা ধরনের ব্যানার নিয়ে উপস্থিত হন সেøাগান দেন। তাদের ব্যানারে ‘সবার জন্য শিক্ষা’, ‘মর্যাদা’, ‘শ্রদ্ধা’, ‘সম্মান’, ‘শিক্ষা: ভবিষ্যতের ভিত্তি’, ‘মূল্যস্ফীতির সমন্বয়ে ক্ষতিপূরণ/ভর্তুকি’, ‘মূল্যায়ন’ প্রভৃতি লেখা ছিল। তারা ওই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে দেশটির শিক্ষামন্ত্রী জোয়াও কস্তাকে পদত্যাগেরও আহ্বান জানান।

পুলিশের মতে, ২০ হাজারের বেশি শিক্ষক বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যোগ দেন। তবে আয়োজকরা জানিয়েছেন, কর্মসূচিতে ১ লাখের বেশি শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।

পর্তুগালে সর্বনিন্ম বেতনকাঠামোয় থাকা শিক্ষকরা প্রতিমাসে এক হাজার ১০০ ইউরো (এক হাজার ২০০ ডলারের কাছাকাছি) বেতন পান। অপরদিকে শীর্ষসারির অনেক শিক্ষকের আয় মাসে ২ হাজার ইউরোর নিচে। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, বর্তমান জীবযাপনের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এ মজুরি খুবই কম।

বিক্ষোভ শুরুর আগে ইতিহাসের শিক্ষক ৬২ বছর বয়সী মারিয়া দুয়ার্তে বলেছেন, শিক্ষকদের ন্যায্য বেতন প্রাপ্য। কারণ আমরা সারা জীবন কাজ করেছি, আমরা কখনও দুর্নীতিগ্রস্ত হইনি, চুরি করিনি, দুর্ভাগ্যবশত যেটা রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে হয়েছে।

দেশটির প্রধানমন্ত্রী আন্তোনিও কস্তার নেতৃত্বাধীন সমাজতান্ত্রিক দল এক বছর আগে নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ক্ষমতায় আসে। কিন্তু এরপর অতীতের অসদাচরণের অভিযোগে বা প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকাণ্ডের দায়ে ১৩ জন মন্ত্রী ও সেক্রেটারি অব স্টেটসকে দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করতে হয়। এসব ঘটনা ক্ষমতাসীন দলকে বেশ ঝামেলায় ফেলে।

গণিতের শিক্ষক আইটর মাতোস বলেছেন, যে নেতারা এ বিক্ষোভ দেখছেন তারা পরবর্তী সময়ে কী পদক্ষেপ নেবেন সে বিষয়ে খুব সতর্কতার সঙ্গে চিন্তা করা তাদের জন্য ভালো হবে। কারণ আমরা এ কর্মসূচির প্রতিক্রিয়া দেখতে চাই, গুরুতর ব্যবস্থা নেয়া হোকÑএটাই চাই।

৪৭ বছর বয়সী এক শিক্ষক জানান, শিক্ষকদের আয় এখন নিয়মিত কমছে। প্রায়ই তাদের এমন স্কুলে নিয়োগ দেয়া হয়, যা তাদের বাড়ি থেকে অনেক দূরে।

বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের শিক্ষক ৫২ বছর বয়সী লুসিন্দা লোপেজ বলেন, আমাদের সম্মান দিতে হবে। আমাদের যা সত্যিকারের প্রাপ্য তা দিতে হবে তাদের (সরকার), অল্প যা রয়েছে আমাদের, তা তারা কেড়ে নিতে পারে না।

শিক্ষা খাতের দুর্দশায় পরিস্থিতির অবনতির কথা জানিয়ে বিক্ষোভকারীদের অনেককে এদিন কালো পোশাক পরতে দেখা গেছে। সরকার তাদের পরিস্থিতির উন্নতিতে কিছুই করছে না বলেও অভিযোগ তাদের।

এদিকে দেশটির শিক্ষামন্ত্রী গত শুক্রবার বলেছেন, কিছু শিক্ষককে ক্লাসে ফেরাতে বাধ্য করতে তিনি ডিক্রি জারির কথা ভাবছেন। এর আগে গত বুধবার তিনি ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে সমঝোতার জন্য আলোচনার আহ্বান করেছিলেন। তবে দাবি-দাওয়া পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তার সঙ্গে কোনো আপসে যেতে রাজি হননি।

আয়োজকরা আজ থেকে কঠোর কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন। এ ধরনের কর্মসূচি আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

প্রসঙ্গত পর্তুগালে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় সাধারণত ৬ বছর বয়স থেকে। বাধ্যতামূলক বেসিক শিক্ষা প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় সার্কেলে হয়ে থাকে। এ শিক্ষাব্যবস্থায় কয়েক লাখ শিক্ষক জড়িত। তারা বিভিন্ন সময় রাজধানীর পাশাপাশি দেশজুড়ে বিভিন্ন শহরে বেতন বাড়ানোর দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। তাদের সঙ্গে মাঝে মধ্যে শিক্ষার্থীদের দেখা যায়।

কভিড-১৯ মহামারির কারণে দুই বছর পর্তুগালের শিক্ষাব্যবস্থা অচলাবস্থার মধ্য দিয়ে যায়। দীর্ঘদিন পর এ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।