অমর একুশে বইমেলার পর্দা উঠছে আগামীকাল

নিজস্ব প্রতিবেদক: বৈশ্বিক মহামারি কভিড-১৯-এর আগ্রাসনের পর এবারই প্রথম যথাসময়ে অর্থাৎ ১ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) শুরু হতে যাচ্ছে অমর একুশে বইমেলা। এখন চলছে শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি। এবারের বইমেলার মূল প্রতিপাদ্যÑপড়ো বই গড়ো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ।

আগামীকাল বুধবার বিকাল ৩টায় বইমেলা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। এতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর। স্বাগত বক্তব্য দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।

অমর একুশে বইমেলা ২০২৩-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বাংলা একাডেমি প্রকাশিত সাতটি নতুন গ্রন্থ উšে§াচন করবেন এবং বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২২ বিতরণ করবেন। ২০২২ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণগত মানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক গ্রন্থের মধ্য থেকে দেয়া হবে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’। এছাড়া প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে শৈল্পিক বিচারে সেরা গ্রন্থের জন্য দেয়া হবে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’। প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচার করে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ দেয়া হবে সংশ্লিষ্ট প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে।

এবার বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট জায়গায়। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১১২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৬৫টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৮৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৩৬টি ইউনিট অর্থাৎ মোট ৬০১টি প্রতিষ্ঠানকে ৯০১টি ইউনিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মেলায় ৩৮টি প্যাভিলিয়ন থাকবে।

এবার বইমেলার আঙ্গিকগত ও বিন্যাসে পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিশেষ করে মেট্রোরেল স্টেশনের অবস্থানগত কারণে গতবারের মূল প্রবেশপথ এবার একটু সরিয়ে বাংলা একাডেমির মূল প্রবেশপথের উল্টো দিকে অর্থাৎ মন্দিরগেটটি মূল প্রবেশপথ হিসেবে ব্যবহƒত হবে। গতবারের প্রবেশপথটি বাহির পথ হিসেবে চিহ্নিত থাকবে। এছাড়া টিএসসি, দোয়েল চত্বর ও ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন অংশে আরও ৩টি প্রবেশ ও বাহিরপথ থাকবে।

বইমেলা উপলক্ষে গতকাল সোমবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে অমর একুশে বইমেলার সদস্যসচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম জানান, গতবার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনিস্টিটিউশন অংশে ১৮২টি স্টল ও ১১টি প্যাভিলিয়ন ছিল। পাঠক, দর্শক ও প্রকাশকদের সম্মিলিত আহ্বান ছিল এবারের মেলায় যেন তাদের দৃশ্যমান অংশে সন্নিবেশ করা হয়। আমরা আশা করি, ২০২৩ সালের বইমেলার বিন্যাস সবার জন্যই মনোপুত ও বাস্তবসম্মত হয়েছে।

তবে গতবারের ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনের স্থানটিকেও এবারের মেলার একটি অংশ হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে। সেখানে নামাজের স্থান, ওয়াশরুমসহ অন্যান্য পরিষেবা অব্যাহত থাকবে। উল্লেখ্য, খাবারের স্টলগুলোকে এবার এমনভাবে সুবিন্যস্ত করা হয়েছে যেন এলোমেলোভাবে খাবারের স্টল বইমেলায় আসা পাঠকের মনোযোগ বিঘিœত না করে।

তিনি আরও জানান, শিশুচত্বরটির পরিধি কম হওয়ায় এবার এ চত্বরটি মন্দির গেটে প্রবেশের ঠিক ডান দিকে বড় পরিসরে রাখা হয়েছে যেন শিশুরা অবাধে বিচরণ করতে পারে এবং তাদের কাক্সিক্ষত বই সহজে সংগ্রহ করতে পারে।

এবার লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তরিত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গ্রন্থ উম্মোচন অংশের কাছাকাছি। সেখানে ১৫৩টিসহ ৫টি স্থানে লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বইমেলায় বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে। প্রতিদিন বিকাল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে সেমিনার ও সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

বাংলা একাডেমির ৩টি প্যাভিলিয়ন এবং শিশু-কিশোর উপযোগী প্রকাশনার বিপণনের জন্য ১টি স্টল থাকবে। প্রতি শুক্র ও শনিবার মেলায় বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ‘শিশুপ্রহর’ থাকবে। অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে শিশুকিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি ও সংগীত প্রতিযোগিতার আয়োজন থাকছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি নুরুল হুদা, সচিব এ এইচ এম লোকমান, বিকাশের চিফ মার্কেটিং অফিসার মীর নওবত আলী প্রমুখ।