মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাক টিসিবির ন্যায্যমূল্যের চিনি

সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় বিভিন্ন স্থানে খাদ্য অধিদপ্তর ন্যায্য মূল্যের দোকানে এবং টিসিবি নিজ বিক্রয়কেন্দ্র ও ট্রাকসেলের মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রি করত। এসব বিক্রয়কেন্দ্রে পণ্য কেনার জন্য দরিদ্র জনগোষ্ঠী ভিড় করেছেন, তা নয়; মধ্যবিত্তদের সংখ্যাও বেড়েছে। এতেই প্রতীয়মান হয় সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কোথায় গিয়ে ঠেকেছে।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এত দিন ট্রাকে তেল, চিনি, পেঁয়াজ, ডাল, খেজুর ও ছোলা সুলভ মূল্যে বিক্রি করলেও বর্তমানে ভ্রাম্যমাণ বিক্রি কার্যক্রম এখন বন্ধ। শুধু ফ্যামিলি কার্ডধারীরা এখন সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য কিনতে পারছেন।

শুধু ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে ডিলারের দোকান বা নির্ধারিত স্থায়ী স্থাপনা থেকে নির্দিষ্ট তিনটি পণ্য বিক্রি করা হয়। ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে যারা পণ্য কেনেন, তারা অবশ্য সীমিত আয়ের জনগোষ্ঠী। কিন্তু এর বাইরেও অনেক মানুষ আছেন, যারা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে বড়ই বিপাকে আছেন। তাই ফ্যামিলি কার্ডের সংখ্যা বাড়ানো খুবই দরকার।

বৃহস্পতিবার সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি টিসিবির জন্য ২৫ হাজার মেট্রিক টন চিনি কেনার প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে।

এদিকে ওই দিনই রমজান উপলক্ষে ঢাকাসহ সারাদেশে ভর্তুকি মূল্যে খাদ্যপণ্য বিক্রি শুরু করেছে টিসিবি। এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারী নি¤œ আয়ের পরিবারের মধ্যে ভোজ্যতেল, চিনি, খেজুর, ছোলা ও মসুর ডাল বিক্রি করা হবে। একজন কার্ডধারী একবারে দুই লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি মসুর ডাল, চিনি, ছোলা ও এক কেজি খেজুর কিনতে পারবেন। কার্ডধারীরা প্রতি কেজি চিনি ৬০ টাকা, খেজুর ১০০ টাকা, মসুর ডাল ৭০ টাকা, ছোলা ৫০ টাকা ও সয়াবিন তেল ১১০ টাকা লিটারে কিনতে পারবেন।

ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে পণ্য বিক্রিতে নি¤œ আয়ের মানুষ উপকৃত হচ্ছে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এর বাইরেই অনেকে আছেন, যারা কষ্টের কথা কারও কাছে মুখ ফুটে বলতে পারেন না। আপাতদৃষ্টিতে তারা ফ্যামিলি কার্ড পাওয়ার ‘যোগ্য’ নন, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। খরচ কমাতে কমাতে তারা এমন এক জায়গায় চলে গেছেন যে ন্যূনতম পুষ্টিকর খাবার সংস্থান করা তাদের জন্য দুষ্কর হয়ে গেছে। একপ্রকার ‘নূন আনতে পান্তা ফুরোয়’ অবস্থা! বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আগামী দিনে কার্ডের সংখ্যা বাড়ানো হতে পারে। কবে নাগাদ ফ্যামিলি কার্ড বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট করেননি। আর ফ্যামিলি কার্ড বাড়ানো হলেও সবাই তা পাবেন, এটিও বলা যায় না। 

রোজার আগে মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। তখন টিসিবির ট্রাক সেলে একপ্রকার নির্ভরতা পান সাধারণ মানুষ।

আমাদের মনে রাখতে হবে, টিসিবির ট্রাক থেকে নি¤œ মধ্যবিত্তরাও পণ্য কেনেন। তাই পণ্যের দাম না বাড়িয়ে বাজার পরিস্থিতির ওপর টানা নজরদারি করে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। পণ্যের দাম বাড়িয়ে নয়, খোলাবাজারে বিক্রি বাড়িয়ে বাজারে হস্তক্ষেপ করার মতো সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। সাধারণ মানুষ যাতে ন্যায্যমূল্যের চিনিসহ সব নিত্যপণ্য কিনতে পারেন, সেজন্য ট্রাকসেলে বিক্রির ব্যবস্থা করা উচিত বলেই আমরা মনে করি।