নিজস্ব প্রতিবেদক: বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠীকে মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতায় ই-সিমসহ সব সিমের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে, এ শিল্পের উন্নয়নও নিশ্চিত হবে। এছাড়া মোবাইলের মতো জরুরি এ খাতের বার্ষিক ন্যূনতম কর প্রত্যাহার বা সমন্বয় করাও প্রস্তাব করেছে মোবাইল অপারেটরগুলোর সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটাস অব বাংলাদেশ (অ্যামটব)। সংগঠনের কর্মকর্তারা বলছেন, তামাকশিল্পে ন্যূনতম কর নির্ধারণ করা হয়েছে ১ শতাংশ। অথচ মোবাইলের মতো জরুরি খাতে এ হার ২ শতাংশ নির্ধারিত আছে, যা আয়কর আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
সংগঠনটি জানায়, শিল্প টিকিয়ে রাখতে ও সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ন্যূনতম কর কমানোর বিকল্প নেই। এই করহার কমিয়ে ১ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে সংগঠনটি। অন্যদিকে, সিগারেট খাতে রাজস্ব ফাঁকি রোধে সিগারেটের চোরাচালান রোধ করার প্রস্তাব করেছে দেশীয় ও বহুজাতিক সিগারেট কোম্পানিগুলো। গতকাল রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর সম্মেলন কক্ষে প্রাক-বাজেট আলোচনায় পৃথক এসব প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এনবিআর সদস্য (শুল্কনীতি) মো. মাসুদ সাদিকের সভাপতিত্বে আলোচনায় অ্যামটব ছাড়াও বাংলাদেশ সিগারেট ম্যানুফ্যাকচারাস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ লোকাল সিগারেট ম্যানুফ্যাচারাস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ বিড়ি শিল্প মালিক সমিতির প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
ই-সিমসহ সব ধরনের সিম সরবরাহের ওপর থেকে ২০০ টাকা ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব দিয়ে অ্যামটব মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এস এম ফরহাদ বলেন, সিমের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার করা হলে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর পক্ষে গ্রামাঞ্চল এবং বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠীর কাছে আকর্ষণীয় প্যাকেজ নিয়ে হাজির হওয়া সুবিধাজনক হবে। একই সঙ্গে তা বাংলাদেশের ডিজিটাইজেশন লক্ষ্য অর্জন করার জন্য সহায়ক হবে, সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে এবং শিল্প খাতের উন্নয়ন নিশ্চিত হবে। ই-সিম নিরাপদ, সুবিধাজনক এবং পরিবেশবান্ধব।
করপোরেট কর কমানোর প্রস্তাব করে তিনি বলেন, দেশে সাধারণ করপোরেট কর হার অতালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য ২০ থেকে ২২ দশমিক ৫ শতাংশ। অথচ জরুরি সেবা হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ মোবাইল খাতের জন্য উচ্চহারে করপোরেট কর দিতে হয়। স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত মোবাইল অপারেটরের ক্ষেত্রে করের হার ৪০ শতাংশ ও তালিকাবহির্ভূত কোম্পানির জন্য ৪৫ শতাংশ। করারোপের ক্ষেত্রে মোবাইল অপারেটরগুলোর পৃথক শ্রেণিভুক্ত না করে বরং অন্যান্য কোম্পানির সারিতে পুনর্বিন্যস্ত করা এবং সেই হারে কর হ্রাস করার প্রস্তাব করেন তিনি।
এ ছাড়া ন্যূনতম কর সমন্বয় করা এবং অসমন্বয়কৃত অঙ্ক জের হিসাবে টানা, ক্যাপিটাল অ্যালাউন্স বা অবচয় ভাতা সমন্বয়, দ্বৈত কর পরিহার চুক্তি বাস্তবায়ন, ই-সিমসহ সব ধরনের সিম সরবরাহের ওপর ভ্যাট অপসারণ, সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। টেলিকম মেশিনারি, ইকুইপমেন্ট ও সফটওয়ারের জন্য পৃথক এইচএস কোডের প্রস্তাব দিয়েছে অ্যামটব।
দেশীয় সিগারেট মালিকদের সংগঠন লোকালি ওনার্স সিগারেট ম্যানুফ্যাচারার মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়, গত কয়েক বছরে দেশীয় নি¤œস্তরের সিগারেটের দাম বেড়েছে ৬৪২ শতাংশ। এজন্য সিগারেটের চোরাচালান বেড়েছে। বহুজাতিক কোম্পানির সিগারেট নি¤œস্তর থেকে মধ্যম স্তরে রেখে নি¤œস্তর শুধু দেশীয় কোম্পানির জন্য রাখার প্রস্তাব করা হয়। এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও বাস্তবায়ন হয়নি। দেশে সিগারেটের বাজার ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি। সিগারেটের বাজার একটি কোম্পানির অধীন হয়ে গেছে। ওই কোম্পানি টাকা বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে। দেশীয় কোম্পানিকে এই সুযোগ দেয়া হলে রাজস্ব বাড়বে, দেশের টাকা দেশে থাকবে।
বাংলাদেশ সিগারেট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর চেয়ারম্যান গোলাম মাইনুদ্দিন প্রস্তাব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, নকল সিগারেট কিছু বন্ধ হয়েছে। নকল সিগারেট বন্ধ করা হলে রাজস্ব আরও বাড়বে। নতুন করে কর বাড়ানো হলে ভোক্তাদের ওপর আরও চাপ বৃদ্ধি পাবে। এর পাশাপাশি বিদেশ থেকে চোরাচালান হয়ে বিদেশি সিগারেট ঢুকবে। অপরদিকে, বাংলাদেশ বিড়ি মালিক সমিতি প্রস্তাবে বিড়িতে শুল্ক ১৮ টাকা হতে নূন্যতম ২ টাকা কমিয়ে ১৬ টাকা করার দাবি জানিয়েছে। এছাড়া বিড়ির ওপর অগ্রিম আয়কর ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা ও সরেজমিনে পরিদর্শন ছাড়া বিড়ি ফ্যাক্টরি তৈরির লাইসেন্স দেয়া বন্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছে।
সভায় এনবিআর সদস্য (মূসক নীতি) জাকিয়া আহমেদ বলেন, নকল ব্যান্ডরোল, ব্যবহƒত ব্যান্ডরোল রোধ করা সম্ভব নয়। এরপরও তা বন্ধে আমাদের এনফোর্সমেন্ট অব্যাহত রয়েছে। তবে সিগারেট ও বিড়ির নকল ব্যান্ডরোল প্রতিরোধে সিগারেট ও বিড়ি তৈরির কাগজের বিষয়ে কঠোর হচ্ছে এনবিআর; যাতে লিগ্যাল ওয়েতে কাগজ আমদানি বা সরবরাহ হয়।