বেতন বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনে গ্রাম পুলিশ

গ্রাম পুলিশের জন্য জাতির জনকের ঘোষিত বেতন স্কেল আজও পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি

দেশে ৪৬ হাজার ৮৭০ জন গ্রাম পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : বেতন বাড়ানো ও চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে আন্দোলন করছেন গ্রাম পুলিশ সদস্যরা। সোমবার সকাল ১০টা থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সারা দেশ থেকে আসা গ্রাম পুলিশ সদস্যরা এই মানববন্ধনে অংশ নেন। মিজানুর রহমান নামে গ্রাম পুলিশের এক সদস্য বলেন, ‘আমাদের বেতন মাত্র ৬ হাজার ৫০০ টাকা। সরকার থেকে ৩ হাজার ২৫০ টাকা দেয় আর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ৩ হাজার ২৫০ টাকা। এই টাকায় কিছু হয় না। আমাদের ডিউটি ২৪ ঘণ্টা।’ যতক্ষণ দাবি আদায় না হবে, আন্দোলন চলবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন এই গ্রাম পুলিশ সদস্য। আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক গ্রাম পুলিশ সদস্য মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমাদের থেকে ১০ সদস্যের একটি দল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়েছেন। সেখানে স্মারক লিপি জমা দেওয়া হবে। আমাদের এক দফা এক দাবি—আমাদের চাকরি জাতীয়করণ করতে হবে। যতক্ষণ আমাদের দাবি নিয়ে কোন ইতিবাচক কিছু না পাবো আমরা এখানেই আন্দোলন চালিয়ে যাব।’

বাংলাদেশ গ্রাম পুলিশ বাহিনীর মহাসচিব এমএ নাসের বলেন, ‘১৯৭৫ থেকে আজ পর্যন্ত আমরা অনেক আন্দোলন সংগ্রাম করেছি, আমাদের বিধিমালা পর্যন্ত পরিবর্তন করেছি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়— গ্রাম পুলিশের জন্য জাতির জনকের ঘোষিত বেতন স্কেল আজও পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। কয়েক মাস আগে আমরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছিলাম। তারপর এই ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনেও আলোচনা হয়। কিন্তু সেটাও আজ অবধি কার্যকর হয়নি। যে কারণে আজকে আমাদের মানববন্ধন।’

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রাম পুলিশ বাহিনীর চাকরি জাতীয়করণের আদেশ প্রদান করেন। যা ১৯৭৬ সালে পরিপত্র আকারে স্থানীয় সরকার বিভাগ হতে প্রতিটি জেলায় পাঠানো হয়। জাতির পিতার সেই আদেশমূলে জারিকৃত গ্রাম পুলিশ বাহিনীর চাকরি জাতীয়করণের পরিপত্রটি আজ অবধি বাস্তবায়িত হয়নি। জাতীয়করণের আদেশ বাস্তাবায়নের দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, প্রায় ৪৬ হাজার ৮৭০ জন গ্রাম পুলিশ দেশে প্রত্যন্ত অঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করছে। অথচ আমাদের কোনও অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নেই। বঙ্গবন্ধু ঘোষিত জাতীয়করণের পরিপত্র নিয়ে আমরা দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, যেন আমাদের জাতীয়করণের প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হয়।

মানববন্ধন শেষে প্রধানমন্ত্রী এবং স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন গ্রাম পুলিশের সদস্যরা। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন— বাংলাদেশ গ্রাম পুলিশ বাহিনী কর্মচারী ইউনিয়নের উপদেষ্টা আলহাজ মোকাদ্দেম হোসেন, বাংলাদেশ সংযুক্ত শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন স্বপন, সাধারণ সম্পাদক বজলুর রহমান বাবলু, বাংলাদেশ গ্রাম পুলিশ বাহিনী কর্মচারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কমান্ডার মো. মোস্তফা কামাল, মহাসচিব কমান্ডার এম.এ নাছের প্রমুখ। মানববন্ধনে প্রায় এক হাজার গ্রাম পুলিশ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধন শেষে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি স্মারকলিপি দেয়া হয়।