শেয়ার বিজ ডেস্ক: লিবিয়ার একটি সাইট থেকে আড়াই টন প্রাকৃতিক ইউরেনিয়াম হারিয়ে গেছে বলে জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষণকারী পরিদর্শকরা দেখতে পেয়েছেন। খবর: বিবিসি।
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) এক বিবৃতিতে চলতি সপ্তাহে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে বিষয়টি অবহিত করেছে। লিবিয়ার ওই স্থানটি দেশটির সরকারের নিয়ন্ত্রণে ছিল না বলে জানিয়েছে তারা।
গত মঙ্গলবার পরিদর্শকরা ওই সাইটটি পরিদর্শনের পর ইউরেনিয়াম উধাও হওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে। গত বছরই সাইটটি পরিদর্শনের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ওই অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে তা স্থগিত করতে হয়েছিল বলে আইএইএ-এর প্রধান রাফায়েল গ্রোসির গোপনীয় ওই বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, পরিদর্শকরা দেখতে পান, ঘনীভূত ইউরেনিয়াম আকরিক (ইউওসি) অবস্থায় ১০টি ড্রামে রাখা প্রায় আড়াই টন প্রাকৃতিক ইউরেনিয়াম ওই স্থানটিতে নেই। কিন্তু আগে এক ঘোষণায় লিবিয়া জানিয়েছিল ইউরেনিয়ামগুলো সেখানে রাখা হয়েছে।
ওই স্থানটি থেকে কোন পরিস্থিতিতে ইউরেনিয়ামগুলো সরানো হয়েছে এবং এখন সেগুলো কোথায় রয়েছে তা নির্ধারণে তারা আরও তৎপরতা চালাবে বলে জানিয়েছে আইএইএ। তবে লিবিয়ার কোন স্থান থেকে ইউরেনিয়ামগুলো খোয়া গেছে তার নাম উল্লেখ করেনি তারা।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পারমাণবিক উপাদানের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে অজ্ঞতা তেজস্ক্রিয় বিকিরণের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, পাশাপাশি পারমাণবিক নিরাপত্তা উদ্বেগও তৈরি করে।
২০০৩ সালে আইএইএ-এর তৎকালীন প্রধান মোহাম্মেদ এল বারাদেই লিবিয়ার পারমানবিক অস্ত্র তৈরির কয়েকটি প্রকল্প পরিদর্শন করে জানান, লিবিয়া তাদের পারমাণবিক মারণাস্ত্র প্রকল্পের একেবারে গোড়ার দিকে রয়েছে।
তাছাড়া পরমাণু অস্ত্রকেন্দ্রিক লিবিয়ার প্রযুক্তি এবং এর জন্য ব্যবহƒত যন্ত্রাংশ সংগৃহীত হয়েছে বিভিন্ন দেশ থেকে। তিনি আরও জানান, কোন কোন দেশ থেকে পরমাণু প্রকল্পের জন্য প্রযুক্তি ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ লিবিয়ায় সরবরাহ করেছিল তা সহজে জানা যাবে। তবে লিবিয়া যে বেশ অত্যাধুনিক মানের নেটওয়ার্ক নিয়ে এ কাজে নেমেছিল, তার প্রমাণ পায়নি আইএইএ। পর্যবেক্ষকদের অনুমান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নানা ব্যক্তি এবং বিভিন্ন মাধ্যম লিবিয়াকে সাহায্য করেছে। কোনো একটি বিশেষ দেশের সহায়তার ওপর নির্ভর করে তাদের পরমাণু কর্মসূচি আগায়নি। চোরাইপথে ও দালালদের মাধ্যমে যাবতীয় প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ এবং তথ্যপ্রযুক্তি সংগ্রহ করেছে দেশটি।
তবে একই বছর লিবিয়ার তৎকালীন নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি তাদের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি বন্ধ করে দেন। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ওই বছর গোপন আলোচনার পর পারমাণবিক, রাসায়নিক ও জৈব অস্ত্র তৈরির কর্মসূচি থেকে সরে আসেন লিবিয়ায় শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফি। তার শাসনামলে ইউরেনিয়াম উত্তোলনের জন্য আধুনিক প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ ছিল লিবিয়া। তখন লিবিয়া সেন্ট্রিফিউজ সংগ্রহ করেছিল যেগুলো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি একটি পারমাণবিক বোমার নকশার তথ্যও দিতে পারত। কিন্তু বোমা তৈরির ক্ষেত্রে লিবিয়া তেমন একটা অগ্রসর হতে পারেনি।
পরে ২০১১ সালে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সমর্থনে হওয়া গণ-অভ্যুত্থানে গাদ্দাফি ক্ষমতাচ্যুত ও নিহত হওয়ার পর থেকে লিবিয়ায় অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ২০১৪ সাল থেকে দেশটির রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ পূর্ব-পশ্চিমের প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে বিভক্ত হয়ে রয়েছে। ২০২০ সালে এসব পক্ষগুলোর মধ্যে শেষ বড় যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
জাতিসংঘের শান্তি পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২১ সালের প্রথম দিকে লিবিয়ায় একটি অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। তাদের ওই বছরের ডিসেম্বর নির্বাচন আয়োজন করে সরে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ওই নির্বাচন আর অনুষ্ঠিত না হওয়ায় এ সরকারের বৈধতাও বিতর্কিত হয়ে পড়েছে। সেই সংকটের জেরে লিবিয়া এখনও পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজধানী ত্রিপোলিতে নামমাত্র অন্তর্র্বর্তী সরকারের মধ্যে এবং আগে সামরিক শক্তিমান খলিফা হাফতার সমর্থিত আরেকটি সরকারের মধ্যে বিভক্ত অবস্থায় রয়েছে।