কভিডে শিক্ষা খাতের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পদক্ষেপ নিন

ভাইরাসজনিত মহামারি কভিড-১৯-এর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বের সব দেশের শিক্ষা খাতে বড় ক্ষতি হয়। প্রায় দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সশরীরে পাঠদান বন্ধ ছিল। এরপর সশরীরে পাঠদান শুরু হলে দেখা যায়, অনেক শিক্ষার্থী পড়ালেখায় ফেরেনি। এ ঝরে পড়ার হার মেয়ে শিক্ষার্থীদের তুলনায় ছেলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেক বেশি। রাষ্ট্রীয় পরিসংখ্যান সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপে উঠে এসেছে, কভিডে শিক্ষায় ঝরে পড়ার হার ছেলেদের মধ্যে বেশি। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার ‘সার্ভে অন চিলড্রেন এডুকেশন ইন বাংলাদেশ, ২০২১’ শীর্ষক জরিপের ফল প্রকাশ করে। জরিপটি পরিচালনায় সহায়তা করে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, শিক্ষার সব স্তরেই মেয়ে শিক্ষার্থীর তুলনায় ছেলে শিক্ষার্থীর ঝরে পড়ার হার বেশি। এর মধ্যে প্রাথমিক স্তরে ছেলে শিক্ষার্থীদের ওপর করোনার অভিঘাত সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ স্তরে করোনার আগে যে হারে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে থাকত, কভিডকালে তা আড়াই গুণ বেড়েছে।

প্রতিবেদন প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বিবিএসের ডেমোগ্রাফি অ্যান্ড হেলথ উইংয়ের পরিচালক বলেছেন, আন্তর্জাতিক মানের জরিপ পদ্ধতি ও প্রশ্নপত্র অনুসরণ করে সারাদেশে মোট ৯ হাজার খানায় জরিপটি করা হয়েছে। মাঠপর্যায়ে যে তথ্য পাওয়া গেছে, সেটিই প্রকাশ করেছে বিবিএস।

কভিডকালে শিক্ষা খাতে কী ক্ষতি হয়েছে, তা কমবেশি সবার জানা। কিন্তু বিবিএসের এ-সংক্রান্ত জরিপ নির্ভরযোগ্য বলে ধারণা। এ জরিপের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও নীতিনির্ধারকরা শিক্ষা ক্ষেত্রে সৃষ্ট ঘাটতি পূরণে পরিকল্পিত কর্মপদ্ধতি গ্রহণ করলেই জরিপ সার্থক হবে। জরিপ করা হয় ক্ষতি পরিমাপের জন্য নয়, বরং সেটি কাটিয়ে উঠতে করণীয় নির্ধারণের জন্য।

কভিডকালে পরীক্ষা ছাড়া শিক্ষাগত সনদ দিতে হয়েছে; শিক্ষাক্ষেত্রে এমন অনেক কিছু ঘটেছে, যা আগে আমরা কল্পনা করিনি। সশরীরে ক্লাস না হলেও অনলাইনে কিংবা বাসায় কিছু কাজ দেয়া হয়েছে। কিছু শিক্ষাদানও হয়েছে। কিন্তু তা কখনও সরাসরি পাঠদান ও পাঠ গ্রহণের সমতুল্য নয়। কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে শিক্ষার্থীদের বড় অংশ পাঠদান প্রক্রিয়ার বাইরে থেকে গেছে। তাই শিক্ষা খাতে বৈষম্য প্রকট হয়ে উঠেছে।

আমাদের মনে আছে, কভিড সংক্রমণ শুরুর দিকে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে অভিভাবকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের জন্য যেমন জোর দবি জানিয়েছেন, তেমনি সংক্রমণ কমে আসার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে উচ্চকিত হয়েছেন। দীর্ঘসময় পড়ালেখার বাইরে থাকায় দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা যা শিখেছে, তা ভুলতে বসেছে। এরই মধ্যে তাদের পরবর্তী শ্রেণিতে প্রমোশন দেয়া হয়েছে। অটোপাস নিয়েও কথা উঠেছে।

অটোপাসে শতভাগ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়। শিক্ষাক্ষেত্রে ঘটে যাওয়া ক্ষতির মধ্যে ওপরের দিকে থাকবে অটোপাস। কিন্তু পরে কেন স্বাভাবিক সময়ে পরীক্ষা তুলে দেয়া হলো, সেটি নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

শহরাঞ্চলের বাইরে সুনির্দিষ্টভাবে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা সরকারের ওপর নির্ভরশীল। সময়োপযোগী পরিকল্পনা, অর্থ বরাদ্দ এবং স্বচ্ছতা-জবাবদিহির সঙ্গে তা খরচ করলে শিক্ষা খাতে বৈষম্য কমানো সম্ভব।

আমাদের নীতিনির্ধারকদের উচিত হবে, শিক্ষা খাতে কভিডের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে অন্য দেশগুলোর নেয়া ব্যবস্থা যাচাই করে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে সেভাবে ঢেলে সাজানো।