শেয়ার বিজ ডেস্ক: পুঁজিবাজারে ক্রমাগত দরপতনের মধ্যে থাকা সুইজারল্যান্ডের ক্রেডিট সুইস ব্যাংকের আংশিক বা পুরোটা কিনে নিতে চায় দেশটির সবচেয়ে বড় ব্যাংক ইউবিএস। এ বিষয়ে উচ্চপর্যায়ের আলোচনা চলাছে। খবর: বিবিসি ও দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
ইউবিএসের প্রতিদ্বন্দ্বী সুইজারল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাংক ক্রেডিট সুইস তাদের আর্থিক প্রতিবেদনে অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় দুর্বলতার কথা জানিয়েছিল। এরপর পুঁজিবাজারে ক্রেডিট সুইসের শেয়ারের ব্যাপক দরপতন শুরু হয়। গত বুধবার ক্রেডিট সুইস ব্যাংকের শেয়ারের ২৪ শতাংশ দরপতন হয়। ফলে ইউরোপীয় বাজারে ব্যাংকটির সম্পদ মূল্য আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে।
সমস্যা সমাধানে জরুরিভাবে সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের দেয়া ৫৪ বিলিয়ন (৫ হাজার ৪০০ কোটি) ডলারও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারেনি। নিকট ভবিষ্যতে যেন তারল্য-সংকটে পড়তে না হয়, তা নিশ্চিত করতে এ উদ্যোগ নিয়েছে ক্রেডিট সুসি। নিয়ন্ত্রক সংস্থাও তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে।
আজ পুঁজিবাজার খোলার আগে ক্রেডিট সুইস নিয়ে নিয়ন্ত্রকরা একটি চুক্তির আশা করছেন। এর আগে গত শনিবার রাতে ক্রেডিট সুইস নিয়ে জরুরি বৈঠবে বসে সুইস সরকার। তবে ব্যাংকটির সঙ্গে সমঝোতার আলোচনা নিয়ে সরকারি কোনো বক্তব্য এখনও আসেনি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রও এ বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি।
ক্রেডিট সুইস ব্যাংক কিনতে ইউবিএস ব্যাংক সরকারকে ৬ বিলিয়ন (৬০০ কোটি) ডলারের খরচ সামলাতে বলেছে। ব্যাংক কিনে নেয়ার কোনো চুক্তি হলেই অসংখ্য মানুষকে চাকরি হারাতে হবে।
অর্থ সংকটে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ও সিগনেচার ব্যাংক বন্ধের আলোচনার মধ্যে ক্রেডিট সুইস ব্যাংকের দুরবস্থা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ওই দুটি ব্যাংক পতনের পর যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকিং খাত নিয়ে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ।
ক্রেডিট সুইস ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৫৬ সালে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগসহ বিভিন্ন কেলেঙ্কারিতে পড়ে ব্যাংকটি। ২০২২ সালে ব্যাংকটি ৭ দশমিক ৩ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঙ্ক (৭ দশমিক ৯ বিলিয়ন বা ৭০৯ কোটি ডলার) আর্থিক ক্ষতির কথা জানায়। তার আগে ২০০৮ সালে সবচেয়ে নাজুক পরিস্থিতিতে পড়ে ব্যাংকটি। এরপর গত বছর সবচেয়ে খারাপ সময় পার করে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের আগ পর্যন্ত ব্যাংকটি লাভজনক অবস্থায় যেতে পারবে না।
দেশের ভেতরে ৯৫টি শাখায় কার্যক্রম পরিচালনা করে ক্রেডিট সুইস। পাশাপাশি তাদের বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগ ব্যাংকিং কার্যক্রম রয়েছে এবং ধনী গ্রাহকদের সম্পদ পরিচালনা করে তারা। বিশ্বে শীর্ষ ৩০টি ব্যাংকের একটি ক্রেডিট সুইস, যার পতন অর্থনীতিতে বিপর্যয় তৈরি করতে পারে। এ ব্যাংকটি আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ঋণ নেয়ার পর সৌদি ন্যাশনাল ব্যাংক জানায়, তারা আর ক্রেডিট সুইস ব্যাংকে বিনিয়োগ করবে না। তাতে বিশ্বের প্রায় সব আর্থিক বাজারে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়Ñবড় সূচকের পতন হয়।
২০২২ সালে ৯ হাজার কর্মী কমানোর পরও বিশ্বব্যাপী ক্রেডিট সুইসের ৫০ হাজার ৪৮০ জন কর্মী ছিল। এর মধ্যে সুইজারল্যান্ডেই ছিল ১৬ হাজার ৭০০ জন। নিউ ইয়র্ক, লন্ডন ও সিঙ্গাপুরে তাদের বিনিয়োগ শাখা রয়েছে। ভারত ও পোল্যান্ডে কয়েক হাজার তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক কর্মী রয়েছে তাদের। ইউবিএসের কর্মী সংখ্যা ৭৪ হাজার। এক হলে ক্রেডিট সুইসকে আরও কর্মী কমাতে হবে।
অপরদিকে ২০২২ সালে ইউবিএস ব্যাংক লাভ করে ৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন (৭০৬ কোটি) ডলার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্রেডিট সুইস কেনার ব্যাপারে আলোচনা চলছে। ইউবিএসের বাজার মূলধন প্রায় ৬৫ বিলিয়ন (৬ হাজার ৫০০ কোটি) ডলার। ওদিকে ক্রেডিট সুইসের বাজার মূলধন ৮ বিলিয়ন (৮০০ কোটি) ডলার। একীভূত হলে কিংবা কিনে নিলে সুইজারল্যান্ডের অভ্যন্তরীণ ৩০ শতাংশ ঋণ ও সঞ্চয় নিয়ন্ত্রণ করবে ইউবিএস।
ইউবিএস ও ক্রেডিট সুইসÑউভয় ব্যাংকই সুইজারল্যান্ড ও বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ।