আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর সামনে রেখে রাজধানীর বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা মার্কেটে আমদানি করেছেন প্রায় কয়েক কোটি টাকার পোশাক পরিচ্ছদ। গতকাল বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ড নিমিষেই ধ্বংস করে দিয়েছে হাজার হাজার ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের সব স্বপ্ন ও আনন্দ। গুলশান, ধানমন্ডি ও গুলিস্তানের অগ্নিকাণ্ডের পর দেশবাসী দেখল বঙ্গবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। নিমিষেই সর্বহারা করে দিয়েছে ২ হাজার ৯৩১টি দোকান এবং ৫ হাজার ব্যবসায়ীকে। যার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। পাশের তিনটি মার্কেটও রেহাই পাইনি এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড থেকে। মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়ে আশপাশের ভবনগুলো। এর আগে ২০১৯ সালে এ বঙ্গবাজার মার্কেটকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু কেউ কোনো সাড়া দেইনি। যার পরিণতি হিসেবে পেয়েছে গতকালকের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। মঙ্গলবার ভোর ৬টা১০ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা। বাজারের খুব কাছেই ছিল ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তর। ২ মিনিটেই তদের প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। আশপাশে ছিল না পানির ব্যবস্থা। যার কারণে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা সময়মতো এলেও সময় মতো তাদের কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি পানি সংকটের কারণে। মানুষ এখন খালি জায়গা কিংবা পুকুর ভরাট করে আবাসন গড়ে তুলছে। যে যেভাবে পারে জায়গা দখল করে নিচ্ছে। এটা কি অপরিকল্পিত নগরায়নের উদাহরণ নয়? কীসের জন্য এত বড় মার্কেটের আশপাশে পানির উৎসের সংকট। আগুন নেভাতে কেন হাতিরঝিল থেকে হেলিকপ্টারে করে পানি আনতে হয়। আজকে যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের পুকুরটা না থাকত তাহলে কী অবস্থা হতো চিন্তা করে দেখেছেন। দমকলকর্মীরা পানি নিয়ে আসতে আসতে ততক্ষণে অগ্নিকাণ্ড ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যেই ভস্মীভূত হয়ে যায় হাজার হাজার দোকান। ফায়ার সার্ভিসের ৫০টি ইউনিটসহ আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেন সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ পুলিশ সদস্যরা। তারা আগুন নির্বাপণ ও ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়। দীর্ঘ ৬ ঘণ্টা চেষ্টার পর ১২টা ২৬ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত বঙ্গবাজারের এনেক্স ভবনে আগুন জ্বলছিল। আগুন নেভানোর কাজে আরও সহযোগিতা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কর্মীরা ব্যবসায়ীদের জানমাল সরাতে সহায়তা করেন। বঙ্গবাজারের এ অগ্নিকাণ্ড শুধু দোকানগুলোকে পুড়ে ছাই করেনি; বরং শেষ করে দিয়েছে হাজার হাজার ব্যবসায়ীর স্বপ্ন। কেড়ে নিয়েছে হাজার হাজার পরিবারের ঈদ আনন্দ। শুধু কি এতটুকুতেই শেষ? না, এ বঙ্গবাজার মার্কেট ছিল হাজার হাজার ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থানের উৎস। তারা বর্তমানে নিঃস্ব ও সর্বহারা। আবার অনেক ব্যবসায়ী এ দোকানগুলোর ওপর নির্ভর করেই তাদের সংসার চালাতেন। এ পরিবারগুলো এখন কী করবে? কোথায় যাবে? তাদের পাশে কি সরকার বা সমাজ এসে দাঁড়াবে? এটা শুধু প্রশ্নই থেকে যায়। এবার আসি পানি সংকটের প্রসঙ্গে, আজকে যদি বঙ্গবাজারের আশপাশে পুকুর বা পানির অন্য কোনো উৎস থাকত তাহলে ফায়ার সার্ভিস অতিদ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারতেন। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা কম হতো। এখন জনগণ অসচেতন। কিছুদিন পর পর এমন ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটছে। এই তো গত ২২ মার্চ গৌরিপুর, ময়মনসিংহর, শ্যামগঞ্জ বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। সেখানেও সেই পানি সংকট এর সমস্যা। বারবার সব জায়গাতে একই পানির সংকটে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এর কোনো প্রতিকার নেই। কর্তৃপক্ষ বা ব্যবসায়ীরা কেউ কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। পরিশেষে, বলতে চাই মানবসৃষ্ট অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে সবার সচেতনতা জরুরি। বিশেষ করে কর্তৃপক্ষকে সূক্ষ্মভাবে নজরদারি করতে হবে। কারা পুকুরগুলো ভরাট করে আবাসন তৈরি করতেছে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কখন কীভাবে অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয় কেউ বলতে পারে না। তাই ভবিষ্যতে যাতে অগ্নিকাণ্ডের সময় পানির সংকটে না পড়তে হয়, তার জন্য বড় বড় শিল্প- কলকারখানা মার্কেটের পাশে পুকুর না থাকলে কৃত্তিমভাবে পুকুর খনন করতে হবে। তাহলে অতিদ্রুত সময়ে অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে। এর জন্য দরকার সর্বসাধারণের ব্যাপক সচেতনতা। সময় গেলে সাধন হবে না, লালনের এই গান আবহমানকাল থেকেই সবাই বিশ্বাস ও ধারণ করে করলেও সময়মতো কেউ কোনো কাজ সম্পাদন করে না।
মোস্তফা কামাল
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়