স্মরণীয়-বরণীয়

শহীদ বুদ্ধিজীবী, সমাজসংস্কারক, দানশীল নূতন চন্দ্র সিংহের ৫২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনা ও তাদের দোসরদের হাতে তিনি নির্মমভাবে নিহত হন। নূতন চন্দ্র সিংহ ১৯০০ সালের ১ ডিসেম্বর রাউজান জেলার গহিরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। দীর্ঘদিন ব্যবসা করার পর তিনি চট্টগ্রামে ফিরে আসেন এবং কুন্ডেশ্বরী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি শ্রী কুন্ডেশ্বরী ঔষধালয় নামে একটি আয়ুর্বেদ ওষুধ কারখানা স্থাপন করেন। শিক্ষা বিস্তার এবং সমাজসেবায় নূতন চন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ  অবদান রাখেন। তিনি নিজ অর্থ ব্যয়ে ১৯৬০ সালে কুন্ডেশ্বরী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কুন্ডেশ্বরী বালিকা বিদ্যামন্দির, ১৯৬৯ সালে কুন্ডেশ্বরী মহিলা কলেজ স্থাপন করেন। এ ছাড়া তিনি কুন্ডেশ্বরী ভবন এবং ডাকঘর স্থাপন করেন। তিনি গহিরা হাইস্কুল, গহিরা কলেজ, রাউজান কলেজ, রাউজান স্কুল, হাটহাজারী কলেজ, বাঁশখালী কলেজ, ফতেয়াবাদ কলেজসহ বহু শিক্ষা সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ কার্যক্রমের মাধ্যমে  এদেশে গণহত্যা শুরু করলে নূতন চন্দ্র সিংহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮টি শিক্ষক তাদের পরিবার-পরিজনকে কুন্ডেশ্বরী প্রতিষ্ঠানগুলোতে আশ্রয় দেন। পরে তিনি তাদের নিরাপদে ভারতে যেতে সহায়তা করেন। এপ্রিলের শুরুর দিকে যখন পাকিস্তানি বাহিনী চট্টগ্রাম দখল করে নেয়, তখন স্থানীয় দোসরদের সাহায্যে ১৩ এপ্রিল কুন্ডেশ্বরীতে হানা দেয়। সেদিন সকালে  সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী পাকিস্তান সেনাবাহিনীদের দলবল নিয়ে তাদের বাড়িতে আক্রমণ চালায়। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী নিজ হাতে নূতন চন্দ্র সিংকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন বলে অভিযোগ রয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি মৃত্যুরবণ করেন। নূতন চন্দ্র সিংহ বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি প্রদত্ত শিক্ষানুরাগী সম্মাননা, উত্তর কাট্টলী আলহাজ মোস্তফা হাকিম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন কর্তৃক শিক্ষা বিস্তারে অবদানের জন্য সম্মাননা, চট্টগ্রাম সমিতি কর্তৃক সমাজসেবার জন্য পুরস্কার, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকার জন্য ঢাকা প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা (চট্টগ্রাম অঞ্চল) প্রদত্ত সম্মাননাসহ অসংখ্য সম্মাননা লাভ করেন। ২০১১ সালে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ ক্ষেত্রে অসাধারণ ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ  তিনি স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন। 

কাজী সালমা সুলতানা