ওষুধ ও প্রসাধনীর জন্য পৃথক আইন চান ব্যবসায়ীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: ওষুধ ও প্রসাধনীকে একই আইনের আওতায় না এনে বরং এ দুই শিল্পকে পৃথক আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন প্রসাধনী ব্যবসায়ীরা। গতকাল রোববার দুপুরে দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ‘প্রস্তাবিত ঔষধ ও কসমেটিকস আইন-২০২৩: বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যৎ প্রভাব’ শীর্ষক সেমিনারে প্রসাধনী ব্যবসায়ীরা এ দাবি জানান।

সেমিনারে উš§ুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে ব্যবসায়ীরা বলেন, প্রস্তাবিত ঔষধ ও কসমেটিকস আইন-২০২৩-এর ৩১-৩৫ ধারা অনুযায়ী কসমেটিকস উৎপাদন, বিতরণ, আমদানি বা রপ্তানির জন্য এবং এ কাজে নিয়োজিত কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা দোকান মালিককে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কাছে নিবন্ধন ও লাইসেন্স গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অথচ একই বিষয়গুলো অনুসরণ করে ‘বিএসটিআই আইন-২০১৮’-এর অধীনে কসমেটিকসের প্রয়োজনীয় সব লাইসেন্স দিয়ে আসছে বিএসটিআই। একই বিষয়ে নতুন একটি রেগুলেটর শুধু আরেকটি স্তর তৈরি করবে এবং ব্যবসা করার খরচ ও জটিলতা বাড়াবে।

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয় এমন কোনো আইন করা হবে না বলে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, যখনেই কোনো আইন করা হয়, তা মানুষের মঙ্গলের জন্যই করা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজই হচ্ছে দেশের মানুষের স্বাস্থ্যের সেবা দেয়া এবং তা নিশ্চিত করা।

আগামীতে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে প্রসাধনী শিল্পের অংশীজনদের নিয়ে একটি শুনানির আয়োজনের ব্যবস্থা করা হবে বলে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ম্যানডেট হলো দেশের মানুষের স্থাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমন বিষয়গুলোকে রোধ করা। আইনটি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, এ আইন পাশের আগে সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির মিটিংয়ে কসমেটিকস সেক্টরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত নিশ্চিতের আহ্বান জানাচ্ছি। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে একটি শুনানি আয়োজনে উদ্যোগ নেবেন বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘ঔষধ ও কসমেটিক দুটো পণ্যই সাধারণ ভোক্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাত্যহিক জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। তবে এ দুটি পণ্যের চাহিদা এবং ব্যবহারের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। দুটো শিল্পের জন্য যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন অত্যন্ত জরুরি। তবে উৎপাদন পর্যায় থেকে আমদানি পর্যন্ত এ দুটি পণ্যের ব্যবহারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন হওয়ায় একই আইনের আওতায় এনে

ঔষধের কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রসাধনী সামগ্রীর কার্যক্রম পরিচালিত হলে প্রয়োগের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘কসমেটিকস এবং ঔষধের জন্য একই আইন ও এর প্রয়োগ ঔষধ প্রশাসনের মাধ্যমে পরিচালিত হওয়ার সম্ভাব্য সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা প্রয়োজন। কারণ আইন অবশ্যই ব্যবসাবান্ধব হতে হবে, অন্যথায় এই শিল্পের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়বে, যা কর্মসংস্থানের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলে আমরা মনে করি।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন বলেন, মিয়া ড্রাগ আইনটি বেশ ভালো। আগে অ্যান্টিবায়োটিক সবাই যে যার মতো ব্যবহার করতে পারলেও নতুন আইনের মাধ্যমে তা পারবে না। এ সময় ক্ষুদ্র শিল্পকে এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) মহাপরিচালক আবদুস সাত্তার বলেন, দেশ, দেশের প্রতিষ্ঠান ও জনগণকে বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতা সক্ষমতার জন্য সব রকম সহযোগিতা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত হতে পারবে। স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে বিএসটিআই থেকে সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।

প্যানেল ও উš§ুক্ত আলোচনায় যুক্ত হয়ে বক্তারা বলেন, কসমেটিকস ও ঔষধ প্রকৃতিগতভাবে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের পণ্য। যেহেতু কসমেটিকস হলো ভোক্তার কাক্সিক্ষত সুবিধার ওপর ভিত্তি করে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার এবং সৌন্দর্যের জন্য ভোক্তাবান্ধব পণ্য, সেহেতু এগুলো কম ঝুঁকিপূর্ণ এবং সাধারণত ব্যবহারের জন্য নিরাপদ। অপরদিকে ঔষধ রোগ বা অসুস্থতা, নিরাময় এবং চিকিৎসার সঙ্গে সম্পর্কিত এবং ঔষধের ব্যবহারের সঙ্গে উচ্চ স্বাস্থ্যঝুঁকি জড়িত, তাই ঔষধের ক্ষেত্রে পৃথক নিয়ন্ত্রণমূলক বিধানাবলি প্রযোজ্য হয়ে থাকে এবং চিকিৎসকের পরামর্শে এটি ব্যবহƒত হয়। এ কারণেই এ দুই ধরনের পণ্য আলাদা আইন ও বিধি দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করার যৌক্তিকতা ও আবশ্যকতা রয়েছে।

ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, খসড়া আইনে প্রস্তাবিত নতুন বিধানাবলি কসমেটিকস শিল্পের উৎকর্ষই শুধু বাধাগ্রস্ত করবে না, এ শিল্প পরিচালনার ব্যয়ও উত্তরোত্তর বাড়িয়ে দিবে। ফলে কসমেটিকস শিল্পে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাবে এবং বর্তমান কসমেটিকস খাতের বিনিয়োগ ও ঝুঁকিতে পড়বে। তদুপরি কসমেটিকস পণ্যের দামও উল্লেখজনকভাবে বৃদ্ধি পাবে, যার সরাসরি বিরূপ প্রভাব পড়বে ভোক্তাসাধারণের ওপর। এ আইন বাস্তবায়িত হলে নতুন কসমেটিকস বাজারে আনা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল হবে। ফলে ভোক্তাদের পছন্দ অনুযায়ী কসমেটিকস বাজারে আনা কিছু ক্ষেত্রে অসম্ভব হবে বলে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, এতে ভোক্তাদের চাহিদা পূরণ অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে এবং কসমেটিকসের দাম বাড়বে।