দুর্নীতি বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা পরিপালিত হোক

বর্তমানে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে দুর্নীতি। সর্বব্যাপী দুর্নীতির কবলে উন্নয়ন-অগ্রগতির সুফল পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। দেশের প্রশাসন, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, শিক্ষানীতি, সংস্কৃতি, শিল্প-বাণিজ্যসহ সর্বত্রই চলছে দুর্নীতি।

দুর্নীতি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার বিকল্প নেই। এশিয়ার দেশগুলোয় দুর্নীতি নিয়ে নমনীয়তা রয়েছেÑএক নোবেল বিজয়ীর বক্তব্যকে উল্লেখ করে মঙ্গলবার হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ বলেছেন, দুর্নীতি বন্ধ করতে চাইলে তিনটি বিষয় অবশ্যই মানতে হবেÑদুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর একটি পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে; আইন-বিধি মান্য করতে হবে, আইন-বিধির প্রয়োগ করতে হবে এবং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ হতে হবে।

দুর্নীতি বন্ধে উচ্চ আদালতের মন্তব্য সময়োপযোগী বলেই আমরা মনে করি। মানুষ কেন দুর্নীতি করে তার উত্তর খুঁজতে ব্যক্তির আর্থ-সামাজিক অবস্থা, মানসিকতা, শিক্ষা ও দৃষ্টিভঙ্গি এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে হবে।  রাষ্ট্র অবশ্যই কঠোর হবে। কিন্তু নাগরিকদেরও দায়িত্ব রয়েছে। কেউ যদি সিদ্ধান্ত নিয়েই থাকে; তাহলের দুর্নীতি বন্ধ দুষ্করই বটে। তাই প্রত্যেক নাগরিককে দুর্নীতি করব না; দুর্নীতি করতে দেব নাÑএই মন্ত্রে উজ্জীবিত হতে হবে। দুর্নীতির প্রতিকার, প্রতিরোধ ও সংশোধনের জন্য কার্যকর সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। দুর্নীতিবাজদের সামাজিকভাবে বয়কট করা গেলে দুর্নীতি কমবে।

দুর্নীতি নির্মূলে রাষ্ট্র কীভাবে কঠোর হবে। এর প্রথম পন্থা হলো শূন্য সহনশীলতা। এরপর দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়া এবং অবাধ গণমাধ্যম ও সক্রিয় নাগরিকসমাজ বিকাশে উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা।

অভিযোগ রয়েছে, রাষ্ট্রের বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি করে দুর্নীতিবাজদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে। সরকারের পক্ষ থেকে দুর্নীতির বিষয়টি অস্বীকার করা হয়। এর ফলে দুর্নীতিবাজরা প্ররোচিত হচ্ছে।

রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোয় জবাবদিহি ও অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর্থিক খাতে সংঘটিত কেলেঙ্কারি ও জালিয়াতির বিচার করতে হবে। বিচারিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনৈতিক আনুগত্যের ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। 

কোনো দেশেই সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া দুর্নীতি প্রতিরোধ হয় না। দুর্নীতি প্রতিরোধে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি। সুস্পষ্ট রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকলেই সুশাসন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

দুর্নীতি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ক্ষমতার সঙ্গে দুর্নীতির নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। এ ক্ষমতা হতে পারে ব্যক্তি পর্যায়ে, পারিবারিক পর্যায়ে, সামাজিক পর্যায়ে, রাজনৈতিক পর্যায়ে ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে। রাষ্ট্র যদি আইনের শাসন নিশ্চিত করে তাহলে কোনো ব্যক্তির পক্ষে দুর্নীতি করা সম্ভব নয়। কেননা ক্ষমতা ও সুযোগের কারণে অনেকেই দুর্নীতিবাজ হয়। দুর্নীতি সমাজ ও রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সুশাসন, সুস্থ ও সহনশীল রাজনৈতিক বিশ্বাস ও স্থিতিশীলতা এবং সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়। দুর্নীতি দারিদ্র্য ও সবধরনের অন্যায়-অবিচার বাড়ায়। বৈষম্য সৃষ্টি করে। ফলে সাধারণ মানুষ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। জনস্বার্থে সরকার দুর্নীতি বন্ধে উচ্চ আদালতের পরামর্শ মেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।