শনিবার রাজধানীতে ঢাকা চেম্বার (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘স্টেকহোল্ডারস ডায়ালগ অন এনার্জি স্ট্র্যাটেজি: টুওয়ার্ডস আ প্রেডিক্টেবল ফিউচার’ শীর্ষক সেমিনারে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, অপরিকল্পিত কারখানার ফলে গ্যাস সংকট বেড়েছে। প্রতিদিন অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করছি, আবার প্রতিদিন নিচ্ছে। একটা কূপ খনন করতে ৯-২৫ মিলিয়ন ডলার লাগে। তারপর গ্যাস নাও পেতে পারেন।
প্রতিমন্ত্রী এমন সময় এমন কথা বললেন, যখন শিল্পকারখানায় গ্যাস সংকট দিন দিন তীব্র আকার ধারণ করছে। এ কারণে কারখানার স্বাভাবিক উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। বিভিন্ন কারখানামালিক বলছেন, প্রতি বর্গফুটে যেখানে ১৫ পিএসআই গ্যাসের চাপ থাকা দরকার, সেখানে অনেক কারখানায় তা দু-তিন পিএসআইতে নেমেছে। পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ না থাকায় চাহিদা অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। রপ্তানিপণ্য তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন খাতে ক্রয়াদেশ বাতিলের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গ্যাস না থাকলে বিদ্যুৎ প্রধান ভরসা, সেখানেও সরবরাহ নেই।
অপরিকল্পিত কারখানা স্থাপনের ফলে গ্যাস সংকট বেড়েছে। এর দায় কে নেবে? গ্যাস সংযোগ ছাড়া কারখানা স্থাপনের অনুমোদন পায় কীভাবে?
তিতাসের ৫৪ শতাংশ গ্যাস ব্যবহার করে শিল্প খাত; কিন্তু শিল্পকারখানা নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস পাচ্ছে না। শিল্পকারখানায় জ্বালানির সংকট নতুন নয়। শিল্পাঞ্চলে গ্যাস সংকট কম-বেশি থাকবেই। কিন্তু এ থেকে উত্তরণে আমরা কী ব্যবস্থা নিয়েছি। গ্যাস হলো বস্ত্রশিল্প তথা স্পিনিং, উইভিং ও ডাইং-প্রিন্টিং-ফিনিশিং মিলের মূল জ্বালানি। কাজেই বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে এ শিল্পে বিপর্যয় নেমে আসবে এবং এর ফলে রপ্তানি খাত অনিশ্চয়তায় পড়বে, যা অনভিপ্রেত।
গ্যাস খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া উচিত, এ কথা বলাই বাহুল্য। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে গ্যাস খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে বলেছিল, দেশে গ্যাসের চাহিদার সঙ্গে উৎপাদনের বিস্তর ফারাক রয়েছে, যা নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
দীর্ঘ মেয়াদে গ্যাস সংকটের সমাধান করতে হলে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করতে হবে, আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন করতে হবে। সরকারকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। বিভিন্ন সময়ের ভূতাত্ত্বিক জরিপে বাংলাদেশের মাটির নিচে এবং এ দেশের সমুদ্রসীমায় ব্যাপক পরিমাণে গ্যাস মজুতের আভাস পাওয়া গেছে। ভাটির দেশ হওয়ায় এদেশের মাটির নিচে দীর্ঘ মেয়াদে অধিক পরিমাণে গ্যাস মজুতের সম্ভাবনা বেশি।
শিল্পায়নের প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গ্যাস ও বিদু্যুতের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে এবং ভবিষ্যতেও এ চাহিদা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। এ অবস্থায় নতুন গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কারের বিকল্প নেই। মনে রাখতে হবে, গ্যাসের সহজলভ্যতা একটি দেশের শিল্পায়নের বিকাশকে ত্বরান্বিত করে, গ্যাসের স্বল্পতা শিল্পায়নের বিকাশকে মন্থর করে। গ্যাস সংকট এড়াতে ত্রিমাত্রিক সাইসমিক জরিপ ও বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানো হবে। অপরিকল্পিত কারখানা স্থাপনে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস পাওয়াও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এ ধরনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি এ খাতে শৃঙ্খলা ও ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।