নজরুল ইসলাম: খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের ভূমি অধিগ্রহণে দুর্নীতি হয়েছে। অধিগ্রহণের সময় অতিরিক্ত মূল্য দেখিয়ে এসব টাকা লোপাট করা হয়েছে। এই ঘটনায় জমির মালিকের সঙ্গে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এলএ শাখার যোগসাজশ পাওয়া গেছে। জমি অধিগ্রহণকালে সমসুবিধাযুক্ত ১০টি বিক্রীত দলিলের পরিবর্তে কেবল পাঁচটি উচ্চমূল্যের বিক্রীত দলিলের মূল্য বিবেচনায় আনা হয়েছে। এতে অধিগ্রহণ করা জমির শতকপ্রতি প্রকৃত গড়মূল্য দুই লাখ ১৮ হাজার ৮৯৫ টাকার পরিবর্তে চার লাখ ২০ হাজার ৬৮৯ টাকা দাঁড়ায়। এতে সরকারের অতিরিক্ত এক কোটি ৫১ লাখ ৩৪ হাজার ৫৯৮ টাকার ক্ষতি হয়েছে। দুর্নীতির এই টাকা আত্মসাৎ করেছেন খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সার্ভেয়ার উদয়ন চাকমা। জমির মালিক সুভাষ চৌধুরীর সহায়তায় তিনি এসব টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তাদের দুজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের সহকারী পরিচালক আহামদ ফরহাদ হোসেন মামলাটি দায়ের করেছেন। সমন্বিত জেলা কার্যালয় রাঙামাটিতে মামলাটি দায়ের করা হয়।
এজাহারে অভিযোগ আনা হয়, বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের জন্য খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন ভূমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। সদর উপজেলার ২৬২ নম্বর গোলাবাড়ি মৌজার ১০৬(ঘ) খতিয়ানে ২৮৫১ ও ২৮৫২ নম্বর দাগের শূন্য দশমিক দুই পাঁচ একর বা ২৫ শতক জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ২০১৯ সালের ১৯ মার্চ তখনকার জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এলএ শাখার সার্ভেয়ার উদয়ন চাকমাকে অধিগ্রহণকালীন পরবর্তী এক বছরের সমশ্রেণির দলিল সংগ্রহ করে সমসুবিধাযুক্ত দলিলগুলোর ‘গড় মূল্য’ নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেন। উদয়ন চাকমা ২৬২ নম্বর গোলাবাড়ি মৌজার অভ্যন্তরে বিক্রি হওয়া প্রথম শ্রেণির মোট ৩৪৮টি দলিল থেকে শুধু পাঁচটি দলিলের ভূমিকে সমসুবিধাযুক্ত বিবেচনা করে অধিগ্রহণ করা ভূমির মূল্যে শতকপ্রতি চার কোটি ২০ লাখ ৬৮৯ টাকা ৫৫ পয়সা হিসেবে প্রস্তাব করেন। উদয়ন চাকমা ওই মৌজায় যে পাঁচটি বিক্রি হওয়া ভূমির দলিলকে সমসুবিধাযুক্ত বিবেচনা করেছেন, সেগুলো ছিল অধিক মূল্যের জমি, যার ফলে ২৫ শতক জমির ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছে তিন কোটি ১৫ লাখ ৫১ হাজার ৭২৩ টাকা। অধিগ্রহণ করা জমির কাছের খাগড়াছড়ি থেকে বটতলি বাজারে যাতায়াতের রাস্তাসংলগ্ন একই মৌজার একই খতিয়ানের বিক্রি হওয়া পাঁচটি দলিলের ভূমিও সমসুবিধাযুক্ত, ওই মৌজার তখনকার সময়ে সংগ্রহ করা বিক্রি হওয়া ৩৪৮টি জমির দলিল, মৌজা ম্যাপ, সাক্ষী-সাবুদ ও অন্যান্য রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায়
এর প্রমাণ পাওয়া যায়। অধিগ্রহণের সময় যদি ওই পাঁচটি দলিল বিবেচনা করা হতো, তাহলে শতকপ্রতি গড় মূল্য দাঁড়াত দুই লাখ ১৮ হাজার ৮৯৫ টাকা। আর অধিগ্রহণ করা ২৫ শতক জমির ক্ষতিপূরণ (অতিরিক্ত ২০০ শতাংশ) দিতে হতো এক কোটি ৬৪ লাখ ১৭ হাজার ১২৫ টাকা। অর্থাৎ, খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ভবন স্থাপনের জন্য ২৫ শতক জমি অধিগ্রহণকালে সমসুবিধাযুক্ত ১০টি বিক্রীত দলিলের পরিবর্তে কেবল পাঁচটি উচ্চমূল্যের বিক্রীত দলিলের মূল্য বিবেচনায় আনা হয়েছে। এতে অধিগ্রহণ করা জমির শতক প্রতি প্রকৃত গড়মূল্য দুই লাখ ১৮ হাজার ৮৯৫ টাকার পরিবর্তে চার লাখ ২০ হাজার ৬৮৯ টাকা নির্ধারণ করে উদয়ন চাকমা তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেননি। তিনি নিজে অবৈধ উপায়ে আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে সরকারি এক কোটি ৬৪ লাখ ১৭ হাজার ১৩৫ টাকার পরিবর্তে তিন কোটি ১৫ লাখ ৫১ হাজার ৭২৩ টাকা পরিশোধ করেছেন। তিনি অতিরিক্ত এক কোটি ৫১ লাখ ৩৪ হাজার ৫৯৮ টাকা জমির মালিক সুভাষ চৌধুরীর সহায়তায় আত্মসাৎ করেছেন। ২০১৯ সালের ৩০ জুন জমির মালিক সুভাষ চৌধুরীকে চেকের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করা হয়। খাগড়াছড়ি গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নাহিদ পারভেজ এক চেকের মাধ্যমে ওই টাকা ছাড় দেন।
উদয়ন চাকমা খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ভাইবোনছড়া ইউনিয়নের ছোটনালা এলাকার মৃত তটিন চন্দ্র চাকমার ছেলে।
খাগড়াছড়ি পাসপোর্ট অফিস সূত্র জানিয়েছে, ভূমি অধিগ্রহণের দুর্নীতিতে শুধু সার্ভেয়ারই জড়িত নন, আরও অনেকের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দুদক সূত্র শেয়ার বিজকে জানিয়েছে, তদন্তে আরও কারও সংশ্লিষ্টতা পেলে তা আমলে নেয়া হবে। অনুসন্ধান পর্যায়ে এই দুজনের সংশ্লিষ্টতাই পাওয়া গেছে।