অন্যদের সহায়তাও নিশ্চিত করা হোক

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ডাউন পেমেন্ট ছাড়াই ঋণ পুনঃতফসিল করতে পারবেন বলে যে খবর ছাপা হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে, তা ইতিবাচক বৈকি। খেয়াল করার বিষয়, চলতি বছর দেশের বিভিন্ন অঞ্চল কয়েক ধাপে বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত কেবল উত্তরাঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা অর্ধকোটির বেশি। তার আগে বোরো মৌসুমের শেষভাগে সৃষ্ট বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন হাওরাঞ্চলের কৃষক। তবে এর প্রভাবে উত্তরাঞ্চলে বোরো উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল বলে জানা যায়নি। অবশ্য ঘরে তোলার ঠিক আগ মুহূর্তে সংঘটিত বন্যায় উত্তরবঙ্গের কিছু জেলায় আউশ ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর মেলে। তার মানে, চলতি বছর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তিনটি শ্রেণি চিহ্নিত করা যেতে পারে। এক. যারা বোরো মৌসুমে ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেন, দুই. যাদের আউশ মৌসুমে ক্ষতি হয়েছে এবং তিন. আমন ফলন তলিয়ে গেছে যাদের। এদের মধ্যে আবার প্রথমটির ক্ষতি পরবর্তী দুই মৌসুম অপেক্ষা বেশি ও পরবর্তী দুই মৌসুমের মধ্যে আবার আউশের জন্য যতটা না হাহাকার, তারচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তা আমনের ফলন নিয়ে।

কয়েকটি বাদে অধিকাংশ জেলায়ই বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি দেখা যাচ্ছে এখন; ধীরে ধীরে অবসান ঘটছে সাময়িক জলাবদ্ধতার। কৃষিজমি থেকেও পানি নেমে যাচ্ছে ক্রমে। যদি এটা অব্যাহত থাকে, তাহলে যেসব অঞ্চলে ক্ষণস্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছিল, সেগুলোর আমন উৎপাদন তুলনামূলকভাবে কম ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশা। ফলে সেসব অঞ্চলের কৃষকের দুশ্চিন্তা চলতি বন্যা নিয়ে নয়, বরং নতুন করে বন্যার পূর্বাভাস নিয়ে। ফসল কাটার মুহূর্তে পরবর্তী বন্যা এসে গেলে তাদের পক্ষে আমনের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা কঠিন হবে। এ অবস্থায় ঢালাওভাবে ঋণ পুনঃতফসিলিকরণের সুযোগ না রেখে নীতিটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। কেননা ত্রাণ বিতরণের বেলায় আমরা দেখেছি, সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা জোগানো হচ্ছে বটে; তবে এর সঙ্গে যুক্ত এক শ্রেণির জনপ্রতিনিধি রাজনৈতিক বিবেচনায় ত্রাণ পাওয়ার অযোগ্য ব্যক্তিদেরও সুবিধা দিচ্ছেন। সামনে জাতীয় নির্বাচন। এ অবস্থায় ত্রাণের ময়দানে নিজেদের উপস্থিতি জাহিরের প্রবণতা থাকতেই পারে। কিন্তু বিষয়টি যেন অতিউৎসাহে পরিণত না হয় আর সেজন্য বন্যার্তরা তাদের ন্যায্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হন, সেদিকে লক্ষ রাখা দরকার। কথাটি বিশেষভাবে প্রযোজ্য কৃষকের ঋণ পুনঃতফসিলিকরণের বেলায়। আমরা জোর দিয়ে বলতে চাই, এর সুষ্ঠু বাস্তবায়নে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে।

বন্যায় কম ক্ষতিগ্রস্ত হননি ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বোধ করি মৎস্য খামারিদের। অস্বীকার করা যাবে না, মৎস্য খামারগুলো আমাদের প্রাণিজ আমিষের বড় জোগানদাতা এখন। সার্বিকভাবে মাছের বাজার নিয়ন্ত্রণেও তাদের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। অথচ আগস্টের বন্যায় কোটি কোটি টাকার ক্ষতি গুনছেন মৎস্য খামারিরা। বাঁধ ভেঙে ডাঙায় প্রবেশ করা পানি প্রায় বিলীন করে দিয়েছে অনেক খামার। লক্ষণীয়, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ সহজে ও কম সময়ে সম্পন্ন করা গেলেও তার জন্য বিনিয়োগটা অগ্রাহ্য করার মতো নয়। সুতরাং যেসব মাছচাষির বিনিয়োগ চলতি বন্যায় বিনষ্ট হয়েছে, তাদের জন্য একটা বিশেষ ব্যবস্থা উল্লিখিত ঋণনীতিতে রাখা প্রয়োজন। আলাদাভাবে ভাবা যেতে পারে অন্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের নিয়েও। তাতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের জন্য ঋণ পুনঃতফসিলিকরণ সিদ্ধান্তের যথাযথ বাস্তবায়নে সমস্যা হবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস।