নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে করপোরেট কর না কমিয়ে অপরিবর্তিত রাখা হচ্ছে। তবে শর্ত পালনে ব্যর্থ হলে কোম্পানিকে বাড়তি করের বোঝা বইতে হবে। আড়াই শতাংশ হারে বাড়তি করপোরেট কর দিতে হবে। আজ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ করবেন। এতে করপোরেট কর বিষয়ে প্রস্তাবনা দেয়ার কথা রয়েছে।
সূত্রমতে, বর্তমানে খাতভিত্তিক অনেক করপোরেট করহার কার্যকর রয়েছে। শর্ত পালনের ভিত্তিতে নন-লিস্টেড কোম্পানির করহার ৩০ থেকে সাড়ে ২৭ শতাংশ। অর্থনীতিকে অধিকতর আনুষ্ঠানিক করা এবং এক ব্যক্তি কোম্পানির প্রতিষ্ঠা উৎসাহিত করার লক্ষ্যে নন-লিস্টেড কোম্পানির মতোই শর্ত পরিপালন সাপেক্ষে এক ব্যক্তি কোম্পানির বিদ্যমান করহার ২৫ থেকে সাড়ে ২২ শতাংশ। পরিশোধিত মূলধনের নির্দিষ্ট পরিমাণের অধিক শেয়ার আইপিও’র মাধ্যমে হস্তান্তর হলে তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য বিদ্যমান করহার সাড়ে ২২ থেকে ২০ শতাংশ। তবে এক্ষেত্রে বার্ষিক নির্ধারিত পরিমাণ নগদ ব্যয় ও বিনিয়োগ ব্যতীত সব ধরনের ব্যয় ও বিনিয়োগ এবং সব ধরনের আয় অথবা প্রাপ্তি ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে করতে ব্যর্থ হলে করহার ২০ শতাংশের প্রযোজ্য তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার সাড়ে ২২ শতাংশ। একইভাবে শর্তের ব্যত্যয় ঘটলে করহার সাড়ে ২২ শতাংশের জন্য প্রযোজ্য তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার ২৫ শতাংশ। ২০২০-২১ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত প্রতি বছর করপোরেট করহার হ্রাস করা হয়েছে। বর্তমানে প্রতিবছর দেশের কর জিডিপি বৃদ্ধির লক্ষ্য আদায়ের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে সার্বিক বিবেচনায় করপোরেট করহার বিদ্যমান কাঠামোটি বহাল রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, পাবলিক ট্রেডেড নয়, এমন কোম্পানির করহার সাড়ে ২৭ শতাংশ। শর্ত পরিপালনে ব্যর্থ হলে করপোরেট করহার হবে ৩০ শতাংশ। পাবলিক ট্রেডেড কোম্পানি, যেমন ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (মার্চেন্ট ব্যাংক ব্যতীত) করপোরেট করহার সাড়ে ৩৭ শতাংশ। পাবলিক ট্রেডেড নয় এমন ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করপোরেট করহার ৪০ শতাংশ। মার্চেন্ট ব্যাংকের করপোরেট করহার ৪০ শতাংশ। সিগারেট, বিড়ি, জর্দা, গুলসহ সব ধরনের তামাকজাত পণ্য প্রস্তুতকারী কোম্পানির করপোরেট করহার ৪৫ শতাংশ। তবে এসব কোম্পানিকে বাড়তি আড়াই শতাংশ সারচার্জ দিতে হয়। এর বাইরে এক শতাংশ টার্নওভার কর রয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে টার্নওভার কর তিন শতাংশ করার প্রস্তাব করা হচ্ছে। পাবলিকলি ট্রেডেড মোবাইল ফোন কোম্পানির করপোরেট করহার ৪০ শতাংশ, পাবলিকলি ট্রেডেড নয়, এমন মোবাইল ফোন কোম্পানির করপোরেট করহার ৪৫ শতাংশ। ব্যক্তি-সংঘ, ট্রাস্ট ও ফান্ডের করপোরেট করহার সাড়ে ২৭ শতাংশ, কৃত্রিম ব্যক্তিসত্তা ও অন্যান্য করযোগ্য সত্তার করপোরেট করহার সাড়ে ২৭ শতাংশ। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বা কেবলমাত্র তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষাদানে নিয়োজিত বেসরকারি কলেজের করপোরেট করহার ১৫ শতাংশ। তবে সব ধরনের আয়, প্রাপ্তি ও প্রত্যেক একক লেনদেনে পাঁচ লাখ টাকার অধিক ও বার্ষিক ৩৬ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে সব ধরনের ব্যয় ও বিনিয়োগ অবশ্যই ব্যাংক স্থানান্তরের মাধ্যমে সম্পাদন করতে হবে।
অপরদিকে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হচ্ছে। মূল্যস্ফীতির কারণে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের প্রকৃত আয় কমে যাওয়ায় তাদের করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে ব্যক্তি করদাতারা নিয়মিত কর পরিশোধে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে। পুরুষ করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে তিন লাখ ৫০ হাজার এবং মহিলা ও ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে চার লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিবন্ধী করদাতার ক্ষেত্রে চার লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে চার লাখ ৭৫ হাজার টাকা; গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে চার লাখ ৭৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকা এবং তৃতীয় লিঙ্গ করদাতাদের ক্ষেত্রে বহাল থাকা তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে চার লাখ ৭৫ হাজার টাকা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে সর্বনি¤œ করহার ১০ শতাংশ থেকে হ্রাস করে পাঁচ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ করহার ৩০ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ২৫ শতাংশে নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া কোনো প্রতিবন্ধীর বৈধ অভিভাবকের ক্ষেত্রে আয়কর সীমা আরও ৫০ হাজার টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। অপরদিকে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে, এমন করদাতার ন্যূনতম কর দিতে হবে দুই হাজার টাকা। ভ্রমণ কর বাড়ানো হচ্ছে। ভ্রমণ কর বর্তমানে ৫০০ টাকা থেকে চার হাজার টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছর তা বাড়িয়ে ৭৫০ টাকা থেকে ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত করা হবে।