‘সেবা সহজীকরণই মার্কেন্টাইল ব্যাংকের মূল লক্ষ্য’

শেয়ার বিজ: মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ২৪ বছরের অর্জন নিয়ে কিছু বলুন?

কামরুল ইসলাম চৌধুরী: বর্তমানে ১৫২টি শাখা ও ৩৫টি উপশাখা নিয়ে আমরা ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছি। প্রান্তিক জনপদে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিতে এরই মধ্যে ১৮৭টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট চালু করা হয়েছে। ব্যাংকের নিজস্ব এটিএম বুথের সংখ্যাও ১৯৫। এ সময়ের মধ্যে প্রচলিত ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি শরিয়াহ্ভিত্তিক ইসলামিক ব্যাংকিং কার্যক্রমও চালু করেছে মার্কেন্টাইল ব্যাংক। ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৯ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা আমানত জমা হয়েছে আমাদের ব্যাংকের। তার বিপরীতে ঋণ ও অগ্রিমের পরিমাণ ২৮ হাজার ৮৭ কোটি টাকা। গত বছরে ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৭১৪ কোটি টাকা। গত বছর রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২৫ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা এবং আমদানি ২০ হাজার ৯২২ কোটি টাকা। গত বছর প্রবাসী আয় আসে ছয় হাজার ৮২৭ কোটি টাকা। এছাড়া গত বছর দিলকুশায় একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ব্যাংকিং শাখা খোলা হয়েছে, এখান থেকে বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে দেশব্যাপী আমাদের সব শাখা ও উপশাখায় গ্রাহকদের ইসলামি ব্যাংকিং সেবা দেয়া হয়।

শেয়ার বিজ: প্রতিষ্ঠার নতুন বছরে আপনাদের পরিকল্পনা নিয়ে কিছু বলুন?

কামরুল ইসলাম চৌধুরী: প্রতিষ্ঠার নতুন বছর বেশিকিছু পরিকল্পনা নিয়েছি। এর মধ্যে সেবা সহজীকরণ মূল লক্ষ্য। প্রান্তিক এলাকায় নতুন নতুন উপশাখা ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনা, যাতে গ্রাহকরা সহজেই সেবা পেতে পারে। এছাড়া পরিচালনদক্ষতা, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও ডিজিটাল রূপান্তর, শ্রেণিকৃত ঋণ আদায় জোরদার করা, ঋণ বিতরণে কৃষি ও এসএমই খাতকে অগ্রাধিকার প্রদান এবং আর্থিক খাতে বিদ্যমান ঝুঁকি মোকাবিলায় দক্ষতার সঙ্গে ব্যাংক তহবিল ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করাও আমাদের লক্ষ্য।

শেয়ার বিজ: ঋণ বিতরণে আপনারা কোন খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন?

কামরুল ইসলাম চৌধুরী: দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করার লক্ষ্যে বৃহৎ খাতের পাশাপাশি মার্কেন্টাইল ব্যাংক ক্ষুদ্র ও মাঝারিসহ অতিক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেয়ার চেষ্টা করছে। যেহেতু আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেশি, তাই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং কৃষি খাতকে গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। গ্রাহকের চাহিদার কথা বিবেচনা করে মার্কেন্টাইল ব্যাংক এখানে কিছু পণ্য ও সেবা চালু করেছে, যেমন চাকা, নারী উদ্যোক্তা ঋণÑঅনন্যা, সমৃদ্ধি, মৌসুমী, সঞ্চালক, উম্মষ, উদয়ন, কৃষি ঋণÑনবান্ন প্রভৃতি। ব্যাংকের অর্থায়নের মূল ক্ষেত্র হচ্ছে গার্মেন্ট তথা তৈরি পোশাকশিল্প, যা আমাদের দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ও কর্মসংস্থানের বৃহত্তম উৎস। আমরা রপ্তানি ও দেশীয় শিল্পের বিকাশে ব্যবসায়ীবান্ধব বিভিন্ন ধরনের ঋণ সুবিধার প্রবর্তন করেছি।

শেয়ার বিজ: চলমান সংকটে কোন ধরনের কৌশল নিয়ে এগোচ্ছেন?

কামরুল ইসলাম চৌধুরী: কভিড মহামারির পর চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় আমরা ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণযোগ্য ব্যয় কমিয়ে ফি ও কমিশনভিত্তিক ব্যবসার ওপর জোর দিয়েছি। গ্রাহকের সেবার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যাংকার ও গ্রাহকের সম্পর্ক বজায় রেখে ব্যবসার গতিকে সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি। ফলে আমানত ও ঋণ দুটোই বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া তৈরি পোশাকশিল্পসহ অন্যান্য খাতে এলসি করা ও রেমিট্যান্স প্রবাহ ঠিক রাখার জন্য আমাদের দক্ষ কর্মিবাহিনী সচেষ্ট ছিল। গ্রাহকদের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথা বিবেচনা করে মার্কেন্টাইল ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা ও সব শাখায় ইসলামি ব্যাংকিং সেবা চালু করেছে। প্রতিযোগিতামূলক ব্যাংকিং ইন্ডাস্ট্রিতে আমাদের ব্যাংকের স্বকীয়তা ও অনন্যতা বজায় রেখে গ্রাহকদের জন্য ব্যাংকিং সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে উৎকর্ষ নিশ্চিত করতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

শেয়ার বিজ: উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে আমানত পেতে কোনো সমস্যায় পড়ছেন কি?

কামরুল ইসলাম চৌধুরী: কভিড মহামারির পরই ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট ব্যাংক খাতে আমানত কমে যাওয়ার মূল কারণ, যার ফলে কয়েকটি ব্যাংক তারল্য সংকটেও পড়েছে। কিন্তু এদিক দিয়ে মার্কেন্টাইল ব্যাংক বেশ শক্তিশালী অবস্থানে আছে। ২০২২ সালে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের আমানত ২০২১ সালের তুলনায় প্রায় সাত শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ২৯ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা।

শেয়ার বিজ: চলমান ডলার সংকট কীভাবে মোকাবিলা করছেন?

কামরুল ইসলাম চৌধুরী: এক্ষেত্রে পরিস্থিতি মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা যথাযথভাবে পরিপালন করতে হবে। মানি লন্ডারিং নিয়ন্ত্রণ ও প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ যাতে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে আসে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। রপ্তানি আয় যথাসময়ে দেশে আনয়ন বাধ্যতামূলক করতে হবে। সর্বোপরি নীতি নির্ধারক ও ব্যাংকারের যৌথ সমন্বয়ে সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।

শেয়ার বিজ: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন সুদহার ব্যবস্থা কীভাবে দেখছেন?

কামরুল ইসলাম চৌধুরী: আগামী জুলাইয়ের মধ্যে আমানত ও সুদহার স্থিতিশীল রাখতে একটা করিডোর ব্যবস্থা চালু করা হবে, যাতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সুদহারের সীমা নির্ধারিত হবে। নতুন এ ব্যবস্থায় ব্যাংকগুলো কৃষি, সিএমএসএমইর মতো খাতে ঋণ বিতরণে  উৎসাহিত হবে। বর্তমানে বেসরকারি খাতের ব্যাংকঋণের প্রায় ৬০ শতাংশই বড়দের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। একই সঙ্গে দেশের মূল্যসস্ফীতির হারও বেড়ে চলেছে। ঋণের চাহিদার তুলনায় আমানত প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত বাজারভিত্তিক সুদ ব্যবস্থাই হতে পারে বিদ্যমান চাহিদা ও জোগানের অসামঞ্জস্য দূর করার একমাত্র সমাধান।