বেজার সঙ্গে তিন প্রতিষ্ঠানের জমি বরাদ্দ চুক্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক:বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ এবং তিনটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর ও সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে মোট ১৫ একর জমি বরাদ্দে চুক্তিস্বাক্ষর হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বেজা কার্যালয়ে এই চুক্তিস্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জমি বরাদ্দ দেয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হলোÑইসতামেরিনা রিফুয়েলিং স্টেশন, বাংলাদেশ এগ্রিকালচার প্রডাক্টস এবং র?্যাংগস প্রোপার্টিজ লিমিটেড। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন। অনুষ্ঠানে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বেজার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ইসতামেরিনা রিফুয়েলিং স্টেশন প্রতিষ্ঠানটি নিট প্লাস লিমিটেডের সহযোগী সংস্থা। প্রতিষ্ঠানটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে ২ একর জমিতে ২.৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগে রিফুয়েলিং স্টেশন অব সিএনজি, এলপিজি, অকটেন, পেট্রল, ডিজেল, কার ওয়াশিং ফেসিলিটি, রেস্টুরেন্ট এবং শপিং মল স্থাপন করবে।

অন্যদিকে বিএসআরএম গ্রুপের সহযোগী সংস্থা বাংলাদেশ এগ্রিকালচার প্রডাক্টস বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে ১০ একর জমিতে ১৪.৫৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগে কেশিও নাট এবং কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ প্লান্ট স্থাপন করবে। এতে প্রায় ৪০০ জনের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। স্টিলপণ্য উৎপাদনে শীর্ষস্থানীয় এ প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন থেকে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটি এর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে ১৪০ একর জমি লিজ নিয়েছে এবং এখানে উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। 

সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে জমি বরাদ্দ পেয়েছে র?্যাংগস প্রোপার্টিজ। র?্যানকন গ্রুপ অব বাংলাদেশের একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে প্রতিষ্ঠানটি ১০.২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগে ৩ একর জমিতে হোটেল ও রিসোর্ট স্থাপন করবে। এতে প্রায় ৪০০ মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, বেজা বাংলাদেশে বিনিয়োগবান্ধব সুস্থ পরিবেশ গড়ে তুলতে সমর্থ হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, মীরসরাইতে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও শিল্প নগর নির্মিত হচ্ছে। এর ফলে এদেশে শিল্পায়নের অভূতপূর্ব বিপ্লব সাধিত হবে এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যসমূহ পূরণ হবে। বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চলের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, নতুন নতুন খাতে বিনিয়োগের ফলে শিল্পাঞ্চলসহ সব অর্থনৈতিক অঞ্চলের রপ্তানি বাজার আরও সমৃদ্ধ হবে।

বেজার পক্ষে নির্বাহী সদস্য (বিনিয়োগ উন্নয়ন) মো. মজিবর রহমান এবং ইসতামেরিনা রিফুয়েলিংয়ের পক্ষে ইশতিয়াক আহমেদ পাটোয়ারী, বাংলাদেশ এগ্রিকালচার প্রডাক্টসের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমির আলী হুসেইন ও র‌্যাংগস প্রোপার্টিজের পক্ষে মাশিদ রহমান চুক্তিস্বাক্ষর করেন।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম ও ফেনী জেলার মীরসরাই, সীতাকুণ্ড ও সোনাগাজী উপজেলায় প্রায় ৩৩ হাজার একর ওপর ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর’ স্থাপনের কাজ শুরু করেছে। এ শিল্প নগরে এখন পর্যন্ত দেশি-বিদেশি প্রায় ১৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ৪টি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে উৎপাদন শুরু করেছে, যেগুলোর উৎপাদনকাজ গত ২০ নভেম্বর ২০২২ তারিখে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেন। আরও ১৫টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান শিল্পস্থাপনের কাজ শুরু করেছে, যা পর্যায়ক্রমে আগামী সেপ্টেম্বর ২০২৩ হতে উৎপাদন শুরু করবে। প্রায় ৮ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এ শিল্প নগরে।

পর্যটন খাতের বিকাশকে ত্বরান্বিত করতে এবং বঙ্গোপসাগরের সুনীল জলরাশিকে কাজে লাগিয়ে বেজা গড়ে তুলছে সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক। এ পর্যন্ত সাবরাং-এ ২১ জন বিনিয়োগকারীকে জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৩৬৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে টেকনাফ উপজেলার সাগর তীরে অবস্থিত। এ ট্যুরিজম পার্কে মোট জমির পরিমাণ ৯০০ একরের বেশি। পাহাড় ও সাগরের বৈচিত্র্যময় দৃশ্য, সুদীর্ঘ বালুকাময় সৈকত এ স্থানকে সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে পরিণত করেছে। সাবরাং ট্যুরিজম পার্কটি সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৩৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। দেশি-বিদেশি পর্যটকের পাশাপাশি স্থানীয় পর্যটকদের ট্যুরিজম পার্কে আরও বেশি আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে মাস্টারপ্ল্যানে পার্কের বিভিন্ন স্থানে ফুড কর্নার, সমুদ্র তীরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য উš§ুক্ত মঞ্চ, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও প্রকৃতিপ্রেমিকদের জন্য রিজার্ভ ফরেস্ট, বিনোদন কেন্দ্র, দেশীয় পণ্যের স্টল প্রদর্শনের স্থান, শিশুদের খেলার পার্ক, আন্ডার ওয়াটার ওয়ার্ল্ড, বোটানিক্যাল গার্ডেন ও অ্যাকুয়ারিয়াম ইত্যাদি প্রস্তাব করা হয়েছে।