জয়পুরহাটে আড়তগুলোয় নেই চামড়া কেনার প্রস্তুতি

প্রতিনিধি, জয়পুরহাট :জয়পুরহাটের আড়তগুলো থেকে প্রায় প্রতিবছর কোরবানির ঈদে ১০০ কোটি টাকার পশুর চামড়া ঢাকায় সরবরাহ করা হয়। তবে এ বছর জেলার চামড়ার আড়তগুলোয় নেই কোনো প্রস্তুতি। কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমান বাজার ধসে এমনিতেই লোকসান, তার ওপর ট্যানারি মালিকদের প্রায় ৩৫ কোটি টাকার বাকি দিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেক চামড়া ব্যবসায়ী। তাদের আশঙ্কা চামড়া কিনতে না পারলে সেগুলো চোরাকারবারির হাতে চলে যাবে। এ অবস্থায় চামড়াশিল্পকে বাঁচাতে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ চেয়েছে চামড়া মালিক সমিতি।

জয়পুরহাট শহরের আরাফাত নগর, পাঁচবিবি উপজেলার রেলগেট ও আক্কেলপুর উপজেলার হাজিপাড়া এলাকায় চামড়ার আড়তগুলোয় অন্য বছরের মতো এবার নেই কোনো প্রস্তুতি। ব্যবসায়ীরা জানান, ট্যানারি মালিকেরা গত কয়েক বছরের কোটি কোটি পাওনা টাকা এখনও পরিশোধ করতে পারেননি। তাছাড়া প্রতি বছর ট্যানারি মালিকদের বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত দামে চামড়া কেনায় বিপাকে পড়েছে মূল ব্যবসায়ীরা। সীমান্ত জেলা হওয়ায় চামড়া পাচারের আশঙ্কাও থাকে এখানে। চামড়ার প্রধান কাঁচামাল লবণের দাম ও শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় সব মিলিয়ে ব্যবসায়ীরা লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন। তাই বকেয়া টাকা পরিশোধে ট্যানারি মালিকরা যেন উদ্যোগ নেন এবং সেইসঙ্গে ব্যাংকগুলোও যেন সহজ শর্তে লোন দেয়, এ বিষয়ে সরকারকে সুদৃষ্টিও কামনা করেন তারা।

জয়পুরহাট সদরের চামড়া ব্যবসায়ী গোলজার হোসেন জানান, ট্যানারি মালিকদের কাছে পাওনা টাকা না পাওয়ায় তারা বিপাকে রয়েছেন চামড়া কেনা নিয়ে। ফলে আসন্ন ঈদে নতুন করে চামড়া কেনা মুশকিল হয়ে পড়বে। ব্যাংক লোন পরিশোধ করতে না পারায় নতুন করে লোন দেয়া হচ্ছে না। অন্যদিকে ট্যানারি মালিকেরা সবসময় সিন্ডিকেট দিয়ে চামড়া কেনেন, সেই সঙ্গে দাম পরিশোধের সময় অল্প করে টাকা দেন, যা দিয়ে তারা ব্যবসা চালাতে পারেন না।

পাঁচবিবি উপজেলার চামড়া ব্যবসায়ী অহেদুল হোসেন ছোটন জানান, চামড়া পাচার হওয়ার প্রচুর আশঙ্কা রয়েছে। পাচার  রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে এ শিল্প লাভের মুখ দেখবে।

জেলা চামড়া ব্যাবসায়ী গ্রুপের সভাপতি শামিম আহমেদ জানান, দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি চামড়াশিল্পের প্রসারে কাঁচামাল লবণের দাম স্থিতিশীল রাখাসহ চামড়া পাচার রোধ এবং বকেয়া টাকা পরিশোধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে এ শিল্প টিকে থাকবে।

জয়পুরহাট-২০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল রফিকুল ইসলাম জানান, চামড়া পাচার রোধে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। চোরাকারবারিরা সীমান্ত এলাকার যে জায়গাগুলোয় তাদের পাচারের পথ হিসেবে ব্যবহার করে থাকে, সেই জায়গাগুলো সবসময় নজরদারির মধ্যে রাখা হয়।