বন্যাকবলিত এলাকায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করুন

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নদনদীর পানি বেড়ে বন্যা দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার মানুষ নানা ভোগান্তিতে আছেন। গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, কুড়িগ্রামে নদনদীর পানি কমলেও সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। জেলার প্রায় ৬২ হাজার পানিবন্দি মানুষ রান্না করা খাবার ও বিশুদ্ধ পানীয় জলের সংকটে ভুগছেন। 

প্রতি বছরই বন্যার ভাঙনে প্রায়ই ক্ষতিগ্রস্ত হন নদী-তীরবর্তী মানুষ। বন্যা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এটি মোকাবিলায় স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়া একপ্রকার অসম্ভব। বন্যায় গবাদিপশুসহ হাতের কাছে যা ছিল, তা নিয়ে বাসিন্দারা নিরাপদ দূরত্বে চলে যান। কেউ আত্মীয়দের বাড়ি ও সড়কের উঁচু স্থানে আশ্রয় নেন। তখন  ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সবাই একপ্রকার অসহায় হয়ে পড়েন। এরই মধ্যে বন্যার্তদের ভোগান্তির খবর প্রশাসনের গোচরীভূত হয়েছে। বন্যাদুর্গতদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য, চিকিৎসাসামগ্রী ও ত্রাণ পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে নাগরিকদেরও। সাধ্যমতো দুর্গতদের অর্থ, ত্রাণসামগ্রী, খাদ্য, বস্ত্র, ওষুধ ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা যেতে পারে। সাহায্য-সহযোগিতা যেন লোকদেখানো বা ফটোসেশনের জন্য না হয়।

অতীতে লক্ষ করা গেছে, বিচ্ছিন্নভাবে সহায়তায় কেউ বারবার পায়, কেউ একবারও পায় না। এমন যেন না হয়। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য অর্থ তহবিল সংগ্রহ, সাহায্য-সহযোগিতা ও বিতরণে স্থানীয় প্রশাসন, উন্নয়নকর্মী বা স্বেচ্ছাসেবী দলকে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।

বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর পানিবাহিত রোগ বেড়ে যায়। সে পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রয়োজনে প্রত্যন্ত এলাকায় মেডিকেল টিম পাঠাতে হবে। সাময়িক সহায়তা নয়, দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই পরিকল্পনার স্থায়ী সমাধানের কথাও বিবেচনায় রাখতে হবে। সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

‘দুর্গত অঞ্চল’ ঘোষিত হওয়ার মতো অবস্থা না হলেও বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ বিশুদ্ধ পানি, খাবার প্রভৃতি নিয়ে বিপাকে আছে। সাম্প্রতিক সময়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বেশি গুরুত্ব পাওয়ায় অসময়ের বন্যা কম গুরুত্ব পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কোনোভাবে এটি এড়িয়ে গেলে বন্যার শিকার হওয়া এলাকার মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে। বসতঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসবা প্রতিষ্ঠান ও মাঠে-প্রান্তরে জমে থাকা পানি নিষ্কাশনে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। পানি জমে থাকলে বাস্তাঘাটেরও বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। বিশুদ্ধ পানির অভাবে পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিতে পারে।

ব্যক্তিগত চেষ্টায় কতটা সতর্ক থাকা যায়! এ অবস্থায় জরুরি ওষুধ, খাদ্য, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও সরকারি ত্রাণ সহায়তা বাড়ানো দরকার।

ত্রাণ বিতরণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। বন্যাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই পরিকল্পনার মাধ্যমে কৃষক ও নি¤œ আয়ের মানুষদের বন্যা মোকাবিলায় সক্ষম করে তোলা প্রয়োজন। মনুষ্যসৃষ্ট বন্যার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।