নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাজধানী ছাড়ছে মানুষ। বাস, ট্রেন, লঞ্চসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ। তবে সাম্প্রতিক বন্যা ও বৃষ্টিপাতের কারণে রাজধানীসহ দেশের অধিকাংশ মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবার তীব্র ভোগান্তির আশঙ্কা রয়েছে। ঈদযাত্রার চতুর্থ দিনে ঘরমুখো মানুষের উপচেপড়া ভিড়ের মধ্যে কমলাপুর ছেড়ে গেছে বিভিন্ন রুটের ট্রেন। অন্যদিকে পদ্মায় তীব্র স্রোতে ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে পারাপারের জন্য এখন পর্যন্ত অপেক্ষায় রয়েছে তিন শতাধিক গাড়ি।
বন্যার কারণে সড়কপথে খানাখন্দ ও সম্ভাব্য যানজট এড়াতে এবার ঈদে ট্রেনযাত্রার প্রতি ঝুঁকেছে মানুষ। তারই ধারাবাহিকতায় ঘরে ফেরা মানুষের ভিড় বাড়ছে কমলাপুর স্টেশনে। তবে ট্রেনের দেরিতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে অনেককে। কিন্তু সব ভোগান্তি সয়েই বাড়ি ফিরতে উদগ্রীব যাত্রীরা। রাজশাহীগামী সিল্কসিটি এক্সপ্রেসের কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা বেলা ২টা ৪০ মিনিটে। ছেড়ে যাওয়ার সময়ে ট্রেনটি প্ল্যাটফর্মে পৌঁছালে অপেক্ষায় থাকা যাত্রীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে ট্রেনের দরজার দিকে। ধাক্কাধাক্কি, হুড়োহুড়ি করে যে যেভাবে পারে ট্রেনে চড়েছে।
এভাবে বেলা সোয়া ৩টা পর্যন্ত ঠেলেঠুলে যেকোনোভাবেই হোক যাত্রীরা উঠেছেন। অনেকের আশ্রয় হয়েছে দরজা বা দরজার পাদানিতে। টিকিট কাটতে পারেনি যারা, এমন অনেকে উঠে পড়েছে ট্রেনের ছাদে। গতকাল বুধবার কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে যাওয়া বেশিরভাগ ট্রেনের চিত্র এমন।
সকাল থেকে কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলোয় আগের তিন দিনের চেয়ে বেশি ভিড় দেখা যায়, তবে উত্তরাঞ্চলের ট্রেনগুলোয় ভিড় ছিল সবচেয়ে বেশি।
ভেতরে জায়গা না পেয়ে অনেকে ট্রেনের ছাদে চড়ছেন। অনেকে ইঞ্জিনের সামনের অংশে বসে ঝুঁকি নিয়েই বাড়ির পথে রওনা হয়েছেন। সকালের ট্রেনগুলোয় ভিড় মোটামুটি থাকলেও দুপুরের পর থেকে স্টেশনে যাত্রীদের ভিড় আরও বাড়ে।
গত ২১ আগস্ট যারা ঈদের আগাম টিকিট কিনেছিলেন, তারাই গতকাল বুধবার বাড়ির পথের ট্রেন ধরেছেন। এর বাইরে ‘সিটবিহীন টিকিটের’ যাত্রী আছে অসংখ্য।
অনেক ভিড় ঠেলে ট্রেনের কামরায় নিজের নির্ধারিত আসনে বসেছেন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার তাসকিনুর রহমান। তাসকিনুর বলেন, ‘কাউন্টার থেকে টিকিট ছাড়ার পর পাইনি। এরপর অনলাইনেও চেষ্টা করেছিলাম, পাইনি। কিন্তু গতকাল আবার অনলাইনে চেষ্টা করার পর দেখলাম টিকিট আছে। কিনে ফেললাম। আজ অফিস থেকে বলে আগে চলে এসেছি। বাড়ি যাওয়ার সময় খুব এক্সাইটেড থাকি। খুব খুশি লাগছে।’
বাংলাদেশের মুসলমানরা কোরবানির ঈদ উদযাপন করবেন ২ সেপ্টেম্বর শনিবার। তার আগে বৃহস্পতিবার শেষ কর্মদিবসশেষেই ঘরমুখো যাত্রীদের সবচেয়ে বেশি চাপ থাকবে বলে রেল কর্মকর্তারা মনে করছেন।
দেওয়ানগঞ্জ স্পেশাল ট্রেনের যাত্রী সারোয়ার হোসেন বলেন, ‘যাত্রাপথের কষ্ট বাড়ি পৌঁছানোর পর আর থাকে না। যাওয়ার সময় একটু কষ্ট হয়। কিন্তু বাসায় ঈদ করার একটা আনন্দ থাকে। সে কারণে কষ্টটা আর বেশি মনে থাকে না।’
এদিকে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার শিমুলিয়া ঘাট দিয়ে ঈদযাত্রীদের পাশাপাশি কোরবানির গরুর ট্রাকের চাপও আছে। এ অবস্থায় ফেরি স্বাভাবিক গতিতে চলতে না পারায় ঘাটে যানবাহনের লাইন ক্রমান্বয়ে দীর্ঘ হচ্ছে।
শিমুলিয়া ঘাট বিআইডব্লিউটিসির এজিএম খন্দকার শাহ নেওয়াজ খালেদ বলছেন, বুধবার শিমুলিয়া ঘাট ঘিরে তিন শতাধিক যান পারাপারের অপেক্ষায় থাকলেও চাপ তুলনামূলকভাবে কম।
তিনি বলেন, ‘পদ্মায় তীব্র স্রোত ও বাতাসের কারণে স্বাভাবিক এক ঘণ্টা ২০ মিনিটের পরিবর্তে ফেরিগুলোর পদ্মা পাড়ি দিয়ে কাঁঠালবাড়ী পৌঁছাতে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে। সকাল থেকে তিনশর বেশি গাড়ি শিমুলিয়া ঘাট দিয়ে পদ্মা পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে, এর মধ্যে ট্যাক্সির সংখ্যাই বেশি।’
ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘœ করতে শিমুলিয়া ফেরিঘাট এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম জানান।
তিনি বলেন, ‘ঘাট এলাকায় সিসি ক্যামেরাসহ ওয়াচ টাওয়ার এবং অস্থায়ী অভিযোগ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি পুলিশ, র্যাব, কোস্টগার্ড, আনসার ও কমিউনিটি পুলিশ মোতায়েন করা রয়েছে।’
জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা বলেন, সার্বক্ষণিক মনিটরিং চলছে। ঘরমুখো মানুষকে নিবিঘেœ পারাপারে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বহরে ফেরিসংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সার্বক্ষণিক ঘাটে রয়েছেন। কোনো অনিয়ম হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানান।