শিল্প জোন আনোয়ারায় ফল বাগানের সমাহার

এনামুল হক নাবিদ, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম): দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রবেশপথ হিসেবে পরিচিত আনোয়ারা। এর পূর্বের উপজেলা চন্দনাইশের কাঞ্চননগরের লেবু-পেয়ারার রয়েছে আলাদা নামডাক। তবে এই অঞ্চলের রসালো লিচুর জন্য পরিচিত নাম দক্ষিণের উপজেলা বাঁশখালীর। মৌসুমি  ফলের জন্য এই দুই উপজেলার বেশ সুনাম থাকলেও এর মধ্যবর্তী উপজেলা আনোয়ারা শিল্প বাণিজ্যিক উপজেলা হিসেবে বেশ পরিচিত। তবে শিল্প জোন এই উপজেলা মৌসুমি অন্যান্য ফলের জন্য বিখ্যাত না হলেও উপজেলার হাইলধর ইউনিয়নের সাঙ্গু তীরবর্তী বাঙ্গি আর তরমুজের সুনাম চট্টগ্রামজুড়ে রয়েছে।

জানা যায়, ১৯৮৪ সালে চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার (সিইউএফএল) প্রতিষ্ঠার পর বাণিজ্যিক উপজেলায় রূপ নেয় আনোয়ারা। এর পর বিশেষ করে ১৯৯৯ সালে কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান ইয়াংওয়ান করপোরেশনের অর্থায়নে কেইপিজেড প্রকল্পের মাধ্যমে পুরোদমে বাণিজ্যিক রূপ ধারণ করে এই উপজেলা। তবে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর বাণিজ্যিক এই উপজেলায় করেছে পরিকল্পিত ফলের প্রকল্প বাস্তবায়ন, যার ফলে মিল-কারখানার জন্য শিল্প জোন হিসেবে পরিচিত আনোয়ারা হয়ে উঠছে এখন ফল বাগানের সমাহার।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে আম বাগান আছে ১১টি, মিশ্রফল বাগান ২৫টি, লেবু বাগান রয়েছে আটটি, পেয়ারা বাগান ১৪টি ও ছাদবাগান রয়েছে প্রায় ৩৩টি। এই বছর আমের চাষাবাদ হয়েছে এই উপজেলায় ১৫৫ হেক্টর জমিতে, যা উৎপাদিত হয়েছে এক হাজার ৯৩ মেট্রিক টন। আবাদ হওয়া আমের মধ্যে রয়েছে বারি-৪, আম রুপালি ও দেশীয় আম। এছাড়া উপজেলার হাইলধর ও বটতলী এলাকায় হয় পর্যাপ্ত আখের চাষ। সূত্র আরও জানায়, গত গ্রীষ্মকালীন মৌসুমে আনোয়ারায় তরমুজের চাষাবাদ হয়েছে ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে, যার মধ্যে রায়পুর ইউনিয়নের উপকূলীয় এলাকায় রয়েছে ১৮ হেক্টর। বাকি বটতলী, চাতরী ও হাইলধর এলাকায় ২৪ হেক্টর, যার ফলন হয় ১২ হাজার ৮১৭ মেট্রিক টন। এছাড়া এ মৌসুমে বাঙ্গির চাষাবাদ হয়েছে ১০ হেক্টর জমিতে, যার উৎপাদন হয় ২৩৫ মেট্রিক টন।

উপজেলার কালাবিবির দিঘি এলাকায় স্থানীয় আজাদ নামের এক কৃষক এক একর জমিতে বারি-৪ জাতের আমের চাষাবাদ করেছেন। কৃষক আজাদ জানান, উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের সহযোগিতায় আমের প্রদর্শনী করেছেন তিনি। বারি-৪ জাতের এই আম ৫০০ গ্রাম থেকে ৭৫০ গ্রাম ওজনের হয়ে থাকে। এই আমের বৈশিষ্ট্য কাঁচা এবং পাকা অবস্থায় খুব মিষ্টি হয়। ফলে বাজারে এর চাহিদা থাকে ব্যাপক। এবার তার উৎপাদন হয়েছে দেড় টন আম। টনপ্রতি তিনি বিক্রি করেছেন ৭০ হাজার টাকা করে।

কৃষিবিদরা মনে করছেন, চট্টগ্রামের একেকটা উপজেলা ফল উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত হলেও লিচু ছাড়া সব ফল উৎপাদন সব জায়গায় হয়ে থাকে। লিচুর জন্য পাহাড়ের লাল মাটি হলে ভালো হয়। অন্যান্য ফল উৎপাদনে আনোয়ারও ব্যতিক্রম নয়। তবে ফল উৎপাদনটা ভৌগোলিক এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর নির্ভর করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উৎপাদন করতে হবে। তাহলে এর সুফল পাওয়া যায়। তবে মূল কথা এ বিষয়ে কৃষকদের আগ্রহী হয়ে আসতে হবে। ফল উৎপাদনে কৃষকরা আগ্রহী হলে আনোয়ারাও একটা সময় ফল উৎপাদনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

উপজেলা কৃষি অফিসার রমজান আলী বলেন, কৃষির পাশাপাশি ফলের চাহিদা পূরণ করতে আমরা একটা লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। এই উপজেলার নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় নির্দিষ্ট কিছু ফলের জন্য খুব উর্বর ভূমি রয়েছে। যেমন উপকূলীয় এলাকায় তরমুজ, সাঙ্গু তীরের (ফকিরার চরের) বাঙ্গি ছাড়াও কয়েক বছর ধরে আমরা বাণিজ্যিকভাবে আম, পেয়ারা আর লেবু উৎপাদনে পরিকল্পিতভাবে কাজ করে যাচ্ছি।  এর মধ্যে কৃষকদের বেশ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। আমরাও ফল উৎপাদনে এরই মধ্যে সাফল্য পাচ্ছি।