গর্ভস্থ শিশুর নিউরাল টিউব ডিফেক্ট বা ত্রুটি সাধারণত গর্ভকাল শুরুর দিকে হয়। সম্প্রতি নিউরাল টিউব ত্রুটি নিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। এর পেছনে অনেক পরিবেশগত কারণও পাওয়া গেছে। যেমন বাবার ক্ষেত্রে উচ্চ মাত্রার আর্সেনিকের উপস্থিতি এবং মায়ের ফলিক অ্যাসিড ও জিংকের ঘাটতি। পাশাপাশি সেলেনিয়ামের উচ্চ মাত্রা দায়ী বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
নিউরাল টিউব ডিফেক্ট: নিউরাল টিউব ডিফেক্টের সঙ্গে প্রায়ই নবজাতকের মাথায় পানি জমার সমস্যা থাকে। পানি জমা রোগীদের এক-তৃতীয়াংশের আবার অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়। এ রোগের কারণে ব্রেইন সিøপ করে নিচে নেমে যেতে পারে (কিয়ারি ম্যালফর্মেশন), তাতে শ্বাসকষ্ট শুরু হবে। কারও আবার স্নায়ুরজ্জুর ভেতরে পানি জমতে পারে (সিরিংস)। এসব কারণে রোগীর দুই পায়ে দুর্বলতা ও প্রস্রাব-পায়খানার নিয়ন্ত্রণ নাও থাকতে পারে।
করণীয়: নবজাতকের নিউরাল টিউব ত্রুটি প্রতিরোধের জন্য ফলিক অ্যাসিড বা ভিটামিন বি-৯ সন্তান ধারণের তিন মাস আগে থেকে খাওয়া প্রয়োজন। আমাদের দেশে সরকারি হাসপাতালে ওষুধটির বিনা মূল্যে পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে।
# ফলিক অ্যাসিডের উৎস পালংশাক, ব্রকলি, শিমের বিচি, সামুদ্রিক মাছ, কলিজা, ঢ্যাঁড়শ ও অন্যান্য সবুজ তাজা শাকসবজি। তবে উচ্চ তাপে ফোটালে বা বেশি কুচিকুচি করে কেটে ধুয়ে পানি ফেলে দিলে এই ভিটামিন নষ্ট হয়। আমাদের শাকসবজি রান্না করার প্রচলিত পদ্ধতি ফলিক অ্যাসিড প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাধা। এ ব্যবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় খাবারে ফলিক অ্যাসিড মিশিয়ে দেয়া হলে সবাই পর্যাপ্ত ফলিক অ্যাসিড পেতে পারে।
# কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিউরাল টিউবের ত্রুটি জšে§র পর ৭২ ঘণ্টার ভেতরে অস্ত্রোপচার করতে পারলে ভালো হয়। আবার কোনো ক্ষেত্রে তিন মাস বয়স এ অস্ত্রোপচারের উপযুক্ত সময়।
# রোগীর পায়ের দুর্বলতা ও সমস্যার জন্য পেডিয়াট্রিক অর্থোপেডিকস, ফিজিক্যাল মেডিসিন ও অর্থোসিস বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন হয়। প্রস্রাবের নিয়ন্ত্রণে ইউরোলজিস্ট ক্লিন ইন্টারমিটেন্ট ক্যাথেটারাইজেশনের ব্যবস্থা করেন। মা-বাবাকে শিখতে হয়Ñকীভাবে জীবাণুমুক্ত উপায়ে নির্দিষ্ট সময় পরপর ক্যাথেটার দিয়ে প্রস্রাব বের করে দিতে হবে। মল নিয়ন্ত্রণের জন্য শিশু বিশেষজ্ঞ সার্জন কখনও কখনও অস্ত্রোপচার করে থাকেন।
শেষ কথা: খুব সাধারণ কিছু সচেতনতার মাধ্যমে আমরা নবজাতকের এ জš§গত ত্রুটি প্রতিরোধ করতে পারি। ফলিক অ্যাসিড ঘাটতি ছাড়াও গবেষণায় এ রোগের আরও কয়েকটি কারণের কথা বলা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ মাত্রায় ফলিক অ্যাসিড গ্রহণের পরও খুব সামান্য হলেও এ রোগের প্রাদুর্ভাব রয়ে যাবে। নিউরাল টিউব ডিফেক্টে ব্রেইন সিøপ করে নিচে নেমে যেতে পারে।
ডা. সুদীপ্ত কুমার মুখার্জি
সহযোগী অধ্যাপক, শিশু নিউরোসার্জারি বিভাগ
জাতীয় নিউরোসায়েন্সেস ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতাল